কোভিড-১৯: নতুন উপসর্গের কথা বলছেন চিকিৎসকেরা

কোভিড–১৯–এর সব উপসর্গকে বিবেচনায় নিয়ে এর বিস্তার ঠেকাতে পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। ছবি: রয়টার্স
কোভিড–১৯–এর সব উপসর্গকে বিবেচনায় নিয়ে এর বিস্তার ঠেকাতে পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। ছবি: রয়টার্স

তীব্র জ্বর, শুকনা কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির কথাই এত দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা দেওয়া উপসর্গ হিসেবে বলা হচ্ছিল। এ–ও বলা হচ্ছিল যে সবার মধ্যেই যে উপসর্গ দেখা দেবে এমনও নয়। শুরু থেকেই উপসর্গের প্রকাশ হওয়া না হওয়া নিয়ে নতুন এ করোনাভাইরাস মানুষকে বেশ তটস্থ রেখেছে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন উপসর্গ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের হার্টফোর্ডের বাসিন্দা ডেবোরাহ কাফলিন। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যদিও শুরুর দিনগুলোতে বা শনাক্ত হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি একবারের জন্যও শ্বাসকষ্ট বোধ করেননি। তাঁর শরীরে তাপমাত্রা কখনোই ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়নি। কিন্তু তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। ঘন ঘন বমি হচ্ছিল তাঁর। শারীরিক এই সমস্যা নিয়েই তিনি ১ মে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে পরীক্ষার পর তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।

ডেবোরাহ কাফলিনের মেয়ে ক্যাথেরিনা কোলম্যান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আপনার মনে হতে পারে যে এটি অন্য কোনো অণুজীবের কাজ। তিনি দিব্যি হাসছিলেন, কথা বলছিলেন, হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন।’

কিন্তু এই সবই ছিল এক দিক। সেন্ট ফ্রান্সিস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দেখলেন, ডেবোরাহকে যখন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল, তখন তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল অনেক কম। এতটাই কম যে অধিকাংশ রোগীই হয়তো ওই অবস্থায় মুমূর্ষু দশায় চলে যেত। কিন্তু ডেবোরাহ যাননি। তাঁকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয় এবং তিনি ক্রমে সেরে ওঠেন।

এই রোগী ও তাঁর মধ্যে থাকা উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা কোভিড–১৯–এর উপসর্গ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ভ্যালেন্টিন ফাস্টার বলেন, ‘শুরুতে আমরা বুঝতেই পারিনি যে আমরা আসলে কিসের বিরুদ্ধে লড়ছি। আমরা শুধু আমাদের সামনে রোগীদের মরে যেতে দেখছিলাম। হঠাৎ করেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে এসে পড়তে হয়েছে আমাদের। এখন আমরা বেশ ভালোভাবেই জানি যে নতুন এ করোনাভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণে সক্ষম অন্য ভাইরাসগুলোর থেকে একেবারেই আলাদা এবং অননুমেয়। অধিকাংশ সময় এটি ফুসফুসে আক্রমণ করলেও মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে গোড়ালি পর্যন্ত যেকোনো অঙ্গে আক্রমণের ক্ষমতা এটি রাখে।’

চিকিৎসকেরা মানুষের শরীরে ভাইরাসটির আক্রমণের ধরনটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ, ভাইরাসটি কীভাবে এবং কতভাবে মানুষের বিভিন্ন অঙ্গকে আক্রমণ করে, তা শনাক্ত করা গেলে এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটিই সহজ হয়। এই চেষ্টা থেকেই প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড–১৯–সংক্রান্ত ১৪ হাজার ৬০০–র বেশি গবেষণাপত্রের একটি তালিকা করেছে। এসব গবেষণা মারফত প্রতিনিয়ত আসছে নতুন নতুন তথ্য। এমনকি এই নতুন তথ্যের কোনো কোনোটি আগের বিশেষজ্ঞ পরামর্শকেও খারিজ করে দিচ্ছে।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে রূপ ধরা দিয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়, তা রীতিমতো ভয়াবহ। শ্বাসযন্ত্রের এ ভাইরাস শুধু শ্বাসযন্ত্রেই সংক্রমণ ঘটায় না। এটি হৃদ্‌যন্ত্রে আক্রমণ করে এর পেশিগুলোকে দুর্বল করে ছন্দপতন ঘটায়। এটি কিডনিকে এমনভাবে আক্রমণ করে যে কিছু হাসপাতালে কোভিড–১৯ রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা করাটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এটি স্নায়ুতন্ত্রেও ছড়াতে পারে। এর মাধ্যমে এটি স্বাদ ও ঘ্রাণক্ষমতা কমিয়ে দেয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে বিনষ্ট করে। এমনকি এই ভাইরাস মস্তিষ্কেও ছড়াতে পারে। এটি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে বড় বিপদও ডেকে আনতে পারে।

আশার কথা এই যে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, তাঁরা অধিকাংশ উপসর্গই শনাক্ত করতে পেরেছেন। এই উপসর্গগুলো রোগটিকে চিনতে, বুঝতে এবং এর চিকিৎসা করতে সহায়ক হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।