সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কায় রিপাবলিকানরা

রিপাবলিকান দলের প্রতীক। ছবি: টুইটার
রিপাবলিকান দলের প্রতীক। ছবি: টুইটার

চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন ভোটারেরা শুধু দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্টই নির্বাচন করবেন না, তাঁরা একটি নতুন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যও নির্বাচন করবেন। প্রতিনিধি পরিষদ যে ডেমোক্র্যাটদের হাতে থাকবে, এই প্রশ্নে তেমন দ্বিমত নেই। তবে হোয়াইট হাউস ও সিনেট কার হাতে যাবে, তা নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে।

এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনমতে পিছিয়ে। করোনাভাইরাস প্রশ্নে তাঁর প্রশাসনের অপরিকল্পিত ও দুর্বল ব্যবস্থাপনায় অধিকাংশ ভোটার অসন্তুষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছে। কিন্তু ট্রাম্প সে জন্য কোনো দায় গ্রহণের বদলে বিগত ওবামা প্রশাসনের ওপর দোষ চাপিয়ে গা বাঁচাতে চাইছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রধান সাফল্যের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গোটা অর্থনীতি অভাবিত সংকটে পড়ায় এখন আর তিনি সেই সাফল্যের ঢাকঢোল পেটাতে পারছেন না।

সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ডেমোক্রেটিক পার্টির পদপ্রার্থী জো বাইডেন ১১ পয়েন্টে পরাজিত করবেন ট্রাম্পকে।

এমনকি ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ৬৫ বছর বয়সের বেশি শ্বেতকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও ইভানজেলিক্যাল ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী।

ট্রাম্প যদি রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র ভোটারদের অনুপ্রাণিত করতে ব্যর্থ হন, তার প্রভাব কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নির্বাচনে পড়বে, এ কথা সবাই বিশ্বাস করেন।

রিপাবলিকান নির্বাচনী কৌশলবিদেরা প্রকাশ্যেই বলাবলি শুরু করেছেন, ট্রাম্পের কারণে তাঁদের দল হয়তো সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
এই মুহূর্তে মাত্র চারটি অতিরিক্ত আসন দখলে সক্ষম হলেই সিনেট ডেমোক্র্যাটদের হাতে চলে যাবে। হোয়াইট হাউস ফিরে পেলে অতিরিক্ত তিনটি আসন পেলেই চলবে। তবে ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের কোনো আসন হারানো চলবে না।

এ বছর নভেম্বরে মোট ৩৫টি সিনেট আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে ২৩টি চলতি রিপাবলিকান আসন। জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনে রিপাবলিকান দল কমপক্ষে পাঁচটি সিনেট আসন হারাতে পারে।

নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট দ্য হিল মনে করে, এই সংখ্যা সাত বা আট হতে পারে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা একটি বা বড় জোর দুটি আসন হারাতে পারে।

কলোরাডোর করি গার্ডনার ও মেইনের সুসান কলিন্সের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, দলের নেতারা ইতিমধ্যে তাঁদের নাম খরচের খাতায় লিখে রেখেছেন।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই নির্বাচনী সুবাতাসের একটি প্রধান কারণ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যারিজোনা, কলোরাডো ও নর্থ ক্যারোলাইনা। জর্জিয়াতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। 

এই সব নির্ভরযোগ্য 'লাল' অঙ্গরাজ্যগুলো 'বেগুনি' বা 'নীল' হতে শুরু করেছে।

জো বাইডেন দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার ফলে হাওয়া ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে বইছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স যদি দলীয় মনোনয়ন পেতেন, তাহলে ভোটারদের মধ্যে বিভক্তির আশঙ্কা ছিল। স্যান্ডার্স প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোয় সেই বিপদ এড়ানো গেছে। দলও বাইডেনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে।

এ কথার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, অবস্থা বদলে যেতে পারে না। নির্বাচনের আগেই অর্থনীতি বেগবান হতে পারে। করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে এই মহামারির বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে। উভয় অবস্থাই ট্রাম্পের পক্ষে যেতে পারে।

নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের সম্পাদক জেসিকা টেইলার মন্তব্য করেছেন, তাঁর চোখে অবস্থা ৫০:৫০। অর্থাৎ, কোনো নাটকীয় পরিবর্তন না হলে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যে কারও হাতে যেতে পারে।

বিপদে রয়েছেন এমন কোনো কোনো রিপাবলিকান সিনেট প্রার্থী যতটা সম্ভব ট্রাম্পকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজটা খুব সহজ হবে না। সিনেটে তাঁদের নেতা মিচ ম্যাককনলের নেতৃত্বে রিপাবলিকান সিনেট সদস্যরা প্রথম থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে নিজেদের ভাগ্য জড়িয়ে ফেলেছেন। রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় নিরঙ্কুশ। এই অবস্থায় ট্রাম্পকে খেপিয়ে তোলা তাঁদের জন্য বিপজ্জনক।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন রিপাবলিকান নির্বাচনী কৌশলবিদ স্বীকার করেছেন, 'রিপবালিকানদের জন্য ছবিটি খুবই তমসাময়। এই নির্বাচন ট্রাম্পের ওপর একটি রেফারেন্ডাম। আর সেটি রিপাবলিকানদের জন্য খুব স্বস্তিকর অবস্থা নয়।'