পিপিপি ঋণ শত শত ব্যবসায়ীকে দেউলিয়া করবে

যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংস্থা (আইআরএস) গত ৩০ এপ্রিল ২০২০-৩২ নম্বর নোটিশের মাধ্যমে পিপিপি ঋণগ্রহীতাদের রাজস্ব সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। করোনাভাইরাস সহায়তা, নিবৃত্তি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেয়ার অ্যাক্টের অধীনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের (অনধিক ৫০০ কর্মচারী) ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান, বেতন-ভাতা এবং অতি প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পিপিপি ঋণ প্রদান করা হয়।
এই ঋণের শর্তগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ঋণ মওকুফযোগ্য। প্রথম শর্ত হলো কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত প্রদান করা। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়ে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ভাড়া, দৈনন্দিন ইউটিলিটি বিলসহ ফিক্সড খরচ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় পড়ে, যার ফলে কেয়ার অ্যাক্টের অধীনে ব্যবসায়ীদের পিপিপি ঋণ প্রদান করা হয় এবং বলা হয়, এই ঋণ সামগ্রিক আয়ের সঙ্গে যোগ হবে না।
কিন্তু আইআরএস নির্দেশনা জারি করে, পিপিপি ঋণের যে অংশ মওকুফ হবে, যেমন বেতন-ভাতা, ভাড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অংশ তার ট্যাক্স মওকুপযোগ্য হবে না। আইআরএসের এই নির্দেশনা ব্যবসায়ীদের চরমভাবে বিস্মিত এবং হতাশ করেছে । এই নির্দেশনার কারণে ব্যবসায়ীদের পিপিপি ঋণের মওকুফযোগ্য অংশের ব্যবহারের ধরন, পরিমাণ এবং কৌশল পাল্টাতে হবে। শুল্কমুক্ত না হওয়ায় ঋণের ব্যবহার নিয়ে তাদের নতুনভাবে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
কেয়ার অ্যাক্টের অধীনে পিপিপি ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ীরা বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক খরচ মওকু যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কেয়ার অ্যাক্টের সেকশন ১১০৬ (আই) অনুযায়ী, মওকুফকৃত ঋণ সামষ্টিক আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে না। আবার প্রধান প্রধান শর্ত পূরণ না করলে যেমন—ফুলটাইম কিংবা বেতনভুক্ত কর্মচারী না রাখলে মওকুফের পরিমাণ কমে যাবে। কেয়ার অ্যাক্ট অনুযায়ী, মওকুফকৃত ঋণ সামষ্টিক আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে না। কিন্তু ইন্টারনাল রেভিনিউ কোডে বলা নেই, অত্যাবশ্যকীয় খরচগুলো করযুক্ত হবে কিনা।
বিষয়টি পরিষ্কার করতে আইআরএস পরিপত্র জারি করেছে, মওকুফযোগ্য ঋণ শুল্কমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে না। আইআরএসের ভাষ্যমতে, পিপিপি ঋণের অত্যাবশ্যকীয় খরচগুলো আয়কর মুক্ত হবে না। প্রসঙ্গত, আইআরএসের ট্যাক্স কোড অনুযায়ী, বেতন-ভাতাদি বাদযোগ্য খরচ এবং মওকুফ ঋণ করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেয়ার অ্যাক্টে বলা হয়েছে, পিপিপি মওকুফ ঋণের পরিমাণ সামষ্টিক আয়ের সঙ্গে যোগ হবে না।
আইআরএস নীতিমালা প্রণয়ন করেছে,সব অত্যাবশ্যকীয় খরচের কারণে ঋণ মওকুফ হবে, সে খরচগুলো বাদযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ডাবল ট্যাক্স সুবিধা। সহজ ভাষায় পিপিপি ঋণের মওকুফ যোগ্য খরচগুলো বাদযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।
পিপিপি ঋণের মওকুফকৃত অংশ সামগ্রিক আয়ের সঙ্গে যোগ করতে হবে এবং ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। আইআরএসের নির্দেশনা অপ্রত্যাশিত এবং কেয়ার অ্যাক্টে ঋণের পরিমাণকে সামগ্রিক আয়ে যোগ না করতে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই নির্দেশনা অনুযায়ী মওকুফকৃত ঋণের ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।
আইআরএসের নির্দেশনা অনুযায়ী, পিপিপি ঋণ ব্যবসায়ীদের করযুক্ত আয় বাড়িয়ে দেবে। যে সব ব্যবসায়ীর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল, তারা হয়তো এই নির্দেশনা পেলে ঋণের আবেদন করতেন না। অনেক করপোরেশনের করযোগ্য আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে। সুদের হার কম হওয়ায় অনেকে অত্যাবশ্যকীয় খরচ না করে, বাদযোগ্য খরচ হিসেবে ট্যাক্স সুবিধা নেবে। এতে কর্মচারীর চাকরি হারানোর আশঙ্কা থাকে।
কেয়ার অ্যাক্টের অধীনে পিপিপি ঋণ নীতিমালা, আইআরএসের জারিকৃত নির্দেশনা বিপরীতমুখী। সবাই এখন কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের দ্বৈতনীতি ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলেছে। সীমিত আকারে সামাজিক দূরত্ব মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুললেও পূর্ণমাত্রা কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে, তা অনিশ্চিত। অন্যদিকে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ, ঋণ এবং হ্রাসকৃত মুনাফা ব্যবসায়ীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আইআরএসের নির্দেশ বলবৎ না থাকলে শত শত ব্যবসায়ী নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এতে অর্থনীতি চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।
অতীতে ধর্মীয় নেতা এবং মিলিটারি সার্ভিসে কর্মরতদের জন্য প্রোপার্টি ট্যাক্স এবং ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুপযোগ্য করা হয়েছিল, যদিও তারা শুল্কমুক্ত বাড়িতে থাকে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং করোনাভাইরাসের বিশ্ব জুড়ে প্রভাব বিবেচনা করে আইআরএসের নির্দেশনার ওপর কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ আইন প্রণয়ন করে বিষয়টি সুরাহা করতে পারে। যে সব ব্যবসায়ী পিপিপি ঋণ নিয়েছেন, তারা আপনাদের হিসাব রক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর-যোগ্যতা এবং সঠিক কৌশল ঠিক করুন। প্রবন্ধে প্রকাশিত বিষয়গুলো সামগ্রিক আলোচনা, কোনো আইনি পরামর্শ নয়।