অর্থফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় যাত্রীরা

সামার বা গ্রীষ্মকালীন সেলের অগ্রিম টিকিট কিনে বিপাকে পড়েছেন নিউইয়র্কে বসবাসরত কয়েক হাজার বিমানযাত্রী। এরা সামারে দেশে যেতে আগেভাগে এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।

এখন বন্ধ হওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আবার কবে চালু হবে সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না এজেন্সিগুলো। তবে জুনের শেষ নাগাদ ফ্লাইট চালু হতে পারে বলে কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে দেশে যাওয়া ঠিক হবে কিনা, সে বিষয়েও গ্রাহকেরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। দেশে না গেলে আবার অগ্রিম টিকিটের ডলার ফেরত পাবেন কিনা, তাও তাদের জানা নেই।

একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি মালিক নানা কৌশলে গ্রাহকদের ডলার আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছে।

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জুন–জুলাইয়ে দেশে যাওয়ার জন্য নিউইয়র্কের  বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে বিমানের টিকিট করেন কয়েক হাজার যাত্রী। প্রতি বছর এভাবে গ্রাহকেরা বিমানের অগ্রিম টিকিট কিনে থাকেন। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাস ধরে লকডাউনে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ থাকায় এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। যাত্রীরা টিকিটের সম্পর্কে জানতে এজেন্সির মালিকদের ফোন করেও পাচ্ছে না।

এ অবস্থায় যাত্রীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। যাত্রীদের মধ্যে এমন পরিবারও রয়েছে যারা একসঙ্গে দেশে যাওয়ার জন্য ১০/১৫টি টিকিট করেছেন। প্রতি টিকিট ১৪/১৫ শ ডলার করে কিনেছেন।

দেশে যাওয়া এবং টিকিটের ডলার ফেরত প্রসঙ্গে চিপ মাই ট্রিপের পরিচালক সাকিল আল হাসান বলেন, ‘আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আমিরাতের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। কুয়েত এয়ারলাইনস ২০ জুন পর্যন্ত বন্ধ আছে। যে সব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আমরা গ্রাহকদের সেসব ফ্লাইটের পুরো ডলার ফেরত দিয়েছি।’

ইউএস বিডি ট্রাভেলের সিইও মশিউর রহমান ও ম্যানেজিং পার্টনার লিটু আনাম বলেন, উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষ যদি ফ্লাইট বাতিল করে, সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা বিনা খরচে পুনরায় দেশে যাওয়ার জন্য বুকিং করতে পারবেন। যাত্রীরা যদি ডলার ফেরত চায়, কোম্পানি তাদের ডলার ফেরত দিয়ে দেবে।

ডিজিটাল ট্রাভেল এষ্টোরিয়ার মালিক নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে যারা দেশে যেতে পারেনি, আমরা সে সব গ্রাহকের ডলার সম্পূর্ণ ফেরত দিয়ে দিয়েছি।

জ্যাকসন হাইটসের নুরুল ইকবাল জানান, ‘আমি একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আমার পরিবারের বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ১০টি টিকিট কিনেছি। মে ২৫ তারিখে আমাদের দেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আমরা দেশে যেতে পারিনি। যে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কিনেছি, তারা ফোনও ধরছে না। তাদের অফিসও বন্ধ।

জ্যামাইকার আবদুর রউফ বলেন, ‘আমরা জুনের ২৭ তারিখের জন্য টিকিট কিনেছিলাম। সে সময় সামারের কারণে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ থাকে। তাই ৮টি অগ্রিম টিকিট কিনেছি,যার মূল্য ১১ হাজার ডলার। এখন চরম অনিশ্চয়তায় আছি, জুনে ফ্লাইট চালু হবে কিনা। চালু হলে দেশে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। দেশে না গেলে ডলার ফেরত পাব কিনা। কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’

অন্যদিকে ব্রঙ্কসের আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘সামারে আমি ও আমার বাবার জন্য দুটি টিকিট করা ছিল। করোনায় আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা এখনো টিকিটের ডলার ফেরত পাইনি।’

গ্লোবাল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলের সিইও শামছুদ্দিন বশির বলেন, যাদের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, তারা অবশ্যই ডলার ফেরত পাবেন। তারা যদি পুনরায় টিকিট বুকিং করতে চান, সেটাও করতে পারবে। কোম্পানি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে যাওয়া–আসার সুযোগ করে দেবেন। এ জন্য তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান। পরিস্থিতি ঠিক হলে সবই ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।