করোনায় যেভাবে ঈদ উদ্যাপন অভিবাসীদের

নিউইয়র্কে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রঙ্কসের পেলাম পার্কের বাস্কেট বল মাঠে। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এতে অংশ নেন। ছবি: প্রথম আলো
নিউইয়র্কে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রঙ্কসের পেলাম পার্কের বাস্কেট বল মাঠে। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এতে অংশ নেন। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই বিপর্যস্ত সময়েও ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছিল উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীরা। করোনার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত নিউইয়র্কের প্রবাসীরা বেদনার চাপা নিশ্বাস নিয়েই মেতে ওঠে ঈদ আয়োজনে। দুই মাসের বেশই সময় ধরে লকডাউনে থাকা মানুষের জীবনে এক চিলতে দমকা হাওয়ার মতো খুশির বার্তা নিয়ে যেন ঈদের আগমন ঘটেছে। তবু আনন্দ আয়োজন ছিল বিধিনিষেধের শেকলে বাঁধা।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো শুধু ১০ জনের গ্রুপকে একত্রে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই বড় কোনো আয়োজনে ঈদের নামাজ পড়ার সুযোগ ছিল না। প্রতি বছর কুইন্সে নিউইয়র্ক সিটির ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে স্থানীয় স্কুল মাঠে। ১০ হাজারের বেশি মুসল্লির সমাগম ঘটে এ জামাতে। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। মসজিদের ভেতরে মাত্র ১১ জন মুসল্লি নিয়ে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন ইমাম শামসে আলী। নামাজের আগে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার ডেরমট এফ শিয়া ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা ভিডিওর মাধ্যমে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। জ্যামাইকা দারুল উলুম মসজিদে চারটি ছোট ছোট ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এ ছাড়া অনেকেই নিজেরা পারিবারিক ভাবে ঘরেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। দুই একটা মসজিদে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সবখানেই দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করা হয়। নিউইয়র্কে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রঙ্কসের পেলাম পার্কের বাস্কেট বল মাঠে। এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। সকাল সাড়ে সাতটায় জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাতটার আগেই পুরো মাঠ ভর্তি হয়ে যায়। প্রত্যকেই নিজ নিজ জায়নামাজ নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে কাতারে বসেন। প্রায় পাঁচ শতাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেছেন।
ঈদের আরও একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় পার্কচেস্টারের খলিল পার্টি সেন্টারে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে ইমামতি করেন পার্কচেস্টার ইসলামিক সেন্টারের ইমাম ও খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক। নামাজ শেষে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যারা প্রাণ ত্যাগ করেছে তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং যারা অসুস্থ তাদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করা হয়।নামাজ শেষে মুসল্লিদের খলিল বিরিয়ানি হাউসের পক্ষ থেকে আপ্যায়ন করা হয়।
সকাল আটটায় এস্টোরিয়ার গাউছিয়া জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ইমামতি করেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা জালাল সিদ্দিকী। যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, এস্টোরিয়া এলাকায় বসবাসরত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি এখানে নামাজ আদায় করেছেন। জামাতে উপস্থিত সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছেন।
লং আইল্যান্ডের লেক রনকনকোমা পার্কে বেলা ১১টায় ঈদের একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত শেষে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হওয়া সবার জন্য দোয়া করা হয়। প্যাটারসন থেকে বিএনপির নেতা সৈয়দ জুবায়ের আলী জানিয়েছেন, তাঁরা স্থানীয়দের নিয়ে পাশের ছোট একটি পার্কে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আশপাশের বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকজনও ছোট ছোট গ্রুপ করে বাড়ির আঙিনা বা পার্কে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নিউজার্সির বাউলা সিটিতে প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীর উদ্যোগে সিটির আইন মেনে ডেলাওয়ার নদীর পাশে একটি পার্কে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাড়ির আঙিনা বা গাড়ির গ্যারেজ ছাড়াও হলরুমে অথবা পার্কিং লটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বহু এলাকায়। বড় বড় মসজিদের পক্ষ থেকে ভার্চ্যুয়াল খুতবা প্রদান করা হয় বাসায় ঈদ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য। ফেসবুকের মাধ্যমেও নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টার থেকে। ইমাম কাজী কাইয়্যুম রমজানে ফেসবুক লাইভে তারাবি পড়িয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ফেসবুক লাইভে ঈদের জামাত আদায় করেছেন বিপুলসংখ্যক প্রবাসী।
২৪ মে চমৎকার আবহাওয়া থাকলেও ঈদের প্রথাগত কোনো আমেজ ছিল না। কাউকে নতুন পোশাকেও দেখা যায়নি ভার্চ্যুয়াল ঈদ জামাতে। ঈদ উপলক্ষে কোলাকুলির সুযোগও ছিল না। করমর্দনের চেষ্টাও করেননি কেউ। প্রবাসের থাকা বড় বড় পরিবার নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেখা সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছেন। নতুন এ বাস্তবতার জীবন নিয়ে আলাপ ছিল সর্বত্র। আগের স্বাভাবিক সময় আবার কবে ফিরবে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে। যদিও উত্তর ছিল না কারও কাছে।
প্রবাসীরা বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। ঈদের পরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সাবধানতার কথা জানিয়ে লোকজন দেশে স্বজনদের ফোন করেছেন।
উত্তর আমেরিকার প্রতিটি ঈদের আলোচনায় ফিরে ফিরে আসে গত আড়াই মাসে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া স্বজন-পরিজন, পরিচিতজনের কথা। বেদনার হাহাকার নিয়ে ঈদের আয়োজনে এভাবেই দিনটা কাটিয়েছেন উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীরা।