জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে জ্বলছে মিনোপোলিস

২৭ মে দিবাগত মধ্যরাত থেকে জ্বলছে মিনোপোলিস। ছবি: ইন্টারনেট
২৭ মে দিবাগত মধ্যরাত থেকে জ্বলছে মিনোপোলিস। ছবি: ইন্টারনেট

পুলিশের হাতে অন্যায়ভাবে নিহত জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনোপোলিস শহরে চলছে সহিংস বিক্ষোভ। সংবাদ সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, ২৮ মে সকালে এই প্রতিবাদের সময় অন্তত একজন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।

বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানা গেছে, জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মিনোপোলিস শহরের মানুষ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন এবং ২৭ মে রাতে শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে দেন। সারা রাত মিনোপোলিস পুলিশ স্টেশনের আশপাশে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিভিন্ন দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন ও বিভিন্ন ভবনে। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। এর বাইরে বড় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে মিনোপোলিস শহরের প্রধান পুলিশ স্টেশন পুড়ে গেছে। সহিংস বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। সংবাদ সংস্থা সিএনএনের খবরে জানা গেছে , শহরের মেয়র জ্যাকব ফ্রে অধিবাসীদের শহর ছেড়ে যেতে বলেছেন এবং গভর্নরকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মিনোপোলিস শহরের বিক্ষোভের বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ওই বিক্ষোভে শুধু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকেরাই অংশ নেননি, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া এই বিক্ষোভে করোনা উপেক্ষা করে শেতাঙ্গরাও অংশ নেন। সাদা–কালো মিলিয়ে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা হাজার হাজার। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও যোগ দেন। যোগ নিয়েছেন বিনোদন ও ক্রীড়া জগতের বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অবসরপ্রাপ্ত মিনেসোটা ভাইকিং ফুটবল খেলোয়াড়, দুবারের সুপার বোল চ্যাম্পিয়ন টাইরন কার্টার জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলেন। অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কার্টারের ছবির নিচের ক্যাপশনগুলো সে রকমই বলছে।

সংবাদ সংস্থা এনবিসি নিউজের খবরে দেখা যায়, সকালবেলা পুলিশ স্টেশনের ছাদ থেকে সশস্ত্র পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে। এনবিসি নিউজের সম্প্রচার করা ভিডিও ফুটেজে আগুনে ভস্মীভূত ভবন ও ব্যক্তিগত যানবাহন দেখা গেছে।

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে শ্বেতাঙ্গ–কৃষ্ণাঙ্গেরা। ছবি: ইন্টারনেট
জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে শ্বেতাঙ্গ–কৃষ্ণাঙ্গেরা। ছবি: ইন্টারনেট

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসভবন ঘিরে রাখলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের রক্ষা করতে স্থানীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ গির্জার দরজা খুলে দেয়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পেজে এমন তথ্যও দেওয়া হয়েছে, পুলিশের হাত থেকে বিক্ষোভকারীদের বাঁচাতে স্থানীয় দুর্বৃত্ত দলগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ১ হাজার ১৪ জন। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামের বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিনগুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতি শ্বেতাঙ্গ পুলিশের এই বর্বরোচিত আচরণের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে উঠেছে #BlackLivesMatter (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান) নামের একটি আন্দোলন। এ আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন গায়ক বিয়োন্সে, বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা।

৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েডকে ২৫ মে সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ পর একজন পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে তাঁর গলা চেপে ধরলে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। ফ্লয়েড মিনোপোলিস শহরের একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে কাজ করতেন। এ ঘটনায় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে করোনা উপেক্ষা করে প্রতিবাদে সরব হন শত শত মানুষ।