প্রতিবাদ হলে কঠোরভাবে সামাল দেওয়া হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকায় তিন মাসে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ১ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ২০ জুন দেশটির দক্ষিণের রাজ্য ওকলাহোমা সফর করছেন ট্রাম্প। টালসা নগরীতে সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস নেবেন ট্রাম্প। নানা কারণে কাবু হয়ে পড়া ট্রাম্প তাঁর পুনর্নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কেমন চেষ্টা করেন, তা দেখার অপেক্ষায় পুরো আমেরিকা।

ওকলাহোমায় নির্বাচনী প্রচারের ঘোষণা দেওয়ার পরই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এখনো করোনার সংক্রমণ শেষ হয়নি। এর মধ্যেই লাখো মানুষের সমাবেশ নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। উদারনৈতিক মহল সমাবেশের কাছাকাছি ব্যাপক প্রতিবাদ সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেভাগেই হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিউইয়র্কের মতো আচরণ করা হবে না। শক্ত হাতে যেকোনো বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার আগাম ঘোষণায় বিক্ষোভকারীদের কতটা দমাতে পারবে, তা দেখার জন্য ২০ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। টালসার মেয়র জি টি ব্যায়নাম ১৬ জুন থেকে থেকে নগরীজুড়ে সিভিল ইমার্জেন্সি জারি করে রেখেছেন। সমাবেশ বন্ধ করার জন্য আদালতে গিয়েছিলেন স্থানীয় দুই আইনজীবী। সমাবেশকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি উল্লেখ করে আদালতের আদেশ দিয়ে তা বন্ধ করার প্রয়াস সফল হয়নি।

গত নির্বাচনে দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় ব্যাপক ভোট পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার মধ্যে আরেক আমেরিকার চিত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে স্পষ্টতর হতে থাকে। নানা ভাবধারায় বিভক্ত আমেরিকার উদারনৈতিক রাজনৈতিক মহল। রাজনীতির মাঠে একাই খেলছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থতাকে নিজেদের সফলতা মনে করে অপেক্ষা করা ছাড়া ডেমোক্র্যাটদের তেমন কোনো প্রয়াস এখনো দৃশ্যমান নয়।

জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিছিয়ে থাকার কারণের কোনো অভাব নেই। কোভিড-১৯ বিপর্যয়, বিপর্যস্ত অর্থনীতি, উত্তাল নাগরিক আন্দোলন ও প্রশাসনে লাগাতার অস্থিরতা—সবই বিরাজ করছে। এরপরও ট্রাম্প নিজেই খেলছেন। এ খেলায় তিনি জয়ী হবেন, ঘুরে দাঁড়াবেন—এমন প্রত্যাশা তাঁর নিজের। প্রত্যাশা তাঁর সমর্থকদের মধ্যেও।

রিপাবলিকান ও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার থেকে ওকলাহোমায় ব্যাপক লোকসমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ সমাবেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পুনর্নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ওকলাহোমায় বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। রক্ষণশীল এ রাজ্যে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এবারেও তিনি অনেকটাই এগিয়ে আছেন। ওকলাহোমার এ জনসভায় দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলবেন, আমেরিকা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। লাখো কর্মহীনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সামাল দিতে নিজের সাফল্যের কথাও বলবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

প্রথাগত রাজনীতির ছকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কখনো পরিমাপ করা যায়নি। আগামী নির্বাচনের জন্য ব্যাটল গ্রাউন্ডের রাজ্যগুলোয় তিনি পিছিয়ে থাকলেও তাঁর প্রচার শিবিরের আশা, ২০ জুনের পর থেকেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ভিন্ন মোড় নেবে। এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ঠিকমতো মাঠে নামেননি। ১৯ জুন থেকেই ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে টিভি বিজ্ঞাপনের প্রচারণা শুরু হয়েছে জো বাইডেনের।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দেশকে বিভক্ত করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভক্তিই চাইছেন। তাঁর প্রচার শিবিরের লক্ষ্য, প্রান্তিক আমেরিকার ট্রাম্প–সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করা। গত মধ্যবর্তী নির্বাচনে এসব সমর্থকেরা রিপাবলিকান প্রার্থীদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাননি। তাঁদের উদ্দীপ্ত করে ভোটকেন্দ্রে নেওয়াই ট্রাম্পের লক্ষ্য। নগরকেন্দ্রের বাইরে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী এবং মধ্যপন্থী দোদুল্যমান ভোটারদের ট্রাম্প ঐক্যবদ্ধ করতে চান। তাঁর পক্ষের জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিত করতে চান—আমেরিকার নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার তাঁর পক্ষেই করা সম্ভব।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময় হোয়াইট হাউসের রাজনৈতিক পরিচালক ছিলেন স্কট জেনিংস। স্কট বলেছেন, ট্রাম্পের এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। যদি নভেম্বরের আগে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়, তাহলে তাঁর সমর্থকেরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই আবার বিশ্বাস করবে। সে ক্ষেত্রে হাঁপিয়ে ওঠা লোকজনকে ইতিহাসের চেনা রাজনীতির বাইরে একজন ট্রাম্পকে আবারও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিনন্দন জানাতে হবে।