নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে আসিফ

আসিফ নিউইয়র্কে গিয়েও ছাড়তে পারেনি তার মডেলিংয়ের নেশা
আসিফ নিউইয়র্কে গিয়েও ছাড়তে পারেনি তার মডেলিংয়ের নেশা

বাংলাদেশ তথা নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের একজন জনপ্রিয় মডেল অলীক। পুরো নাম আসিফ ইকবাল জোয়ারদার। একাধারে তিনি একজন চক্ষু চিকিৎসক, অভিনেতা ও র‌্যাম্প মডেল। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি মডেল হিসেবে অর্জন করেছেন সম্মানজনক অনেক খেতাব আর ভূয়সী প্রশংসা। বর্তমানে তিনি ম্যানহাটনের ইউনি আই সেন্টারে আবাসিক চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।

ডাক্তার দম্পতির ছেলে আসিফ রাজশাহী ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে এসএসসি, এইচএসসি শেষ করেছেন। পরে কিশোরগঞ্জের জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিকেল ডিগ্রি লাভ করেন। মূলত নিজের ইচ্ছা ও বন্ধুদের উৎসাহে মডেলিংয়ে ঝুঁকে পড়েন আসিফ। সে সময় মেডিকেলে পড়ালেখা করা অবস্থায়ই মডেলিংয়ে টুকটাক কাজ করলেও মেডিকেল পাস করার পর পুরোদস্তুর মডেলিংয়ের নেমে পড়েন। ঢাকার ইসলামিয়া আই হাসপাতালে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি তিনি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনও শেষ করেন সেখান থেকেই। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে র‌্যাম্পে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৪ সালে ‘ইউ গট দ্য লুক’ ফ্যাশন শোর মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন মডেল আসিফ। তারপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 

একপর্যায়ে বিবি রাসেলের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন সে সময়ের মডেল জগতের তুঙ্গে থাকা মডেল আসিফ। একসময় বারডেম হাসপাতালে জয়েন করেন চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে। পর্যায়ক্রমে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবেও কাজ শুরু করেন সেখানেই। বারডেমে থাকা অবস্থায়ই তিনি নিউরো-অফথালমোলজি (আই ডিজিজ) বিষয়ে স্কলারশিপ পান আমেরিকার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন থেকে। সেই ফেলোশিপ করতেই ২০১৫ সালে আমেরিকায় আসেন এবং সব শেষ করে নিউইয়র্কে আপাতত থিতু হয়েছেন। চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন এখানে।

নিউইয়র্কের মডেলিং জগৎ নিয়ে প্রশ্ন করতেই অলীক বলে ওঠেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে” এমনটাই ঘটেছে তাঁর বেলায়ও। ডাক্তারি তাঁর পেশা হলেও মডেলিংটা নেশা বলেই জানালেন তিনি।

২০১৭ সাল থেকে ‘নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক’–এর জন্য র‌্যাম্পে কাজ করার মাধ্যমে আবারও নিজেকে ব্যস্ত করে তুলেছেন এই মডেল। অবসর সময়ে ভালো লাগে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, সকার খেলতেও ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। কোন ধরনের খাবারেই নেই কোন অরুচি। সাদা রং তাঁর খুব পছন্দ।

বাংলাদেশে থাকতে আসিফ বেশ কিছু নাটকেও অভিনয় করেছিলেন। তার নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ডেঞ্জারম্যান’, ২০১১ সালে ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘ছাইয়া ছাইয়া’ ইত্যাদি। ছোট্ট এই জীবনে এত কিছু প্রাপ্তি কেমন লাগে? প্রশ্ন করতেই আসিফ বন, জীবনের এই জিকজ্যাক চলার পথে কিছু অর্জন করার লক্ষ্যে ছুটে চলেছেন কেবল, গন্তব্যে পৌঁছা হয়নি এখনো।

আসিফ মনে করেন, এখনো তাঁর অনেক কাজ করার, শেখার বাকি আছে। মানুষের জন্য কাজ করতে চান, সে লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করছেন, এগিয়ে চলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ইচ্ছা বা একনিষ্ঠতা থাকলে যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব। একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন একনিষ্ঠতায়। মনের গভীরে একটি স্বপ্ন লালন করে চলেছেন, একদিন বাংলাদেশে ফিরে যাবেন, প্রতিষ্ঠা করবেন একটি চক্ষু হাসপাতাল। সেবা দিয়ে দেশের মানুষের পাশে থাকবেন। এমন প্রত্যাশায় এখনো প্রহর গুনছেন আসিফ ইকবাল জোয়ারদার।

ছবি: আসিফ ইকবাল জোয়ারদার