স্বাধীনতা দিবসের জমায়েত থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা

স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আতশবাজি দেখতে ব্রুকলিন বরোতে ভিড় জমিয়েছেন নাগরিকেরা। ছবি: রয়টার্স
স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আতশবাজি দেখতে ব্রুকলিন বরোতে ভিড় জমিয়েছেন নাগরিকেরা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে লাল হয়ে উঠেছে আমেরিকার মানচিত্র। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩৬টি রাজ্যে এই সংক্রমণ বাড়ছে। নিউইয়র্কে গত তিন সপ্তাহের মধ্যে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাই। বছরের সবচেয়ে কোলাহলের সপ্তাহান্ত নিয়ে উৎকণ্ঠায় স্বাস্থ্যসেবীরা। নিউইয়র্কসহ সবখানে হাসপাতালে আবার পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চার মাসের কম সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আমেরিকানরা এবারের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে নেমে পড়েছে। বছরের কোলাহলময় সপ্তাহান্তের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-আনন্দ আবারও দেশের করোনা পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত মার্চ মাস থেকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। হাজারো মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অস্থির সময় গেছে নিউইয়র্কসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বিপন্ন সময় সামাল দিয়ে আমেরিকার এ অঞ্চল করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মুখেই পড়ে অন্য বিপর্যয়ে। গত ২৫ মে মেনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড নামের কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি পুলিশের হাতে নিহত হলে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। সামাজিক ব্যবধান আর লকডাউনের সব নিয়ম ভেঙে নিউইয়র্কের বিপুলসংখ্যক লোক বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। এ বিক্ষোভ এখন স্তিমিত হলেও চলমান আছে। মনে করা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আসা করোনাভাইরাস নিউইয়র্কে আবার নতুন করে সংক্রমণ শুরু করেছে। সংক্রমিত রাজ্যগুলো থেকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেটিকাটে প্রবেশের পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৩ জুলাই নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, ১২ জুনের পর ২ জুলাই রাজ্যজুড়ে ৯১৮ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হওয়ায় রাজ্য গভর্নর বলেন, ভাইরাসটি এখনো আছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্কে যাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ আসছে, তাদের অধিকাংশেরই জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্কে গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ১৯১ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। করোনায় সংক্রমিত হয়ে অন্য কোনো রাজ্য এত মানুষের প্রাণহানি হয়নি। নিউইয়র্কের হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কাজ করেন ইশতেহাক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে জানিয়েছেন, নগরীর সব হাসপাতালেই আবারও নাজুক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হাসপাতালে করোনা রোগী বেশি আসা শুরু হলে কীভাবে সামাল দিতে হবে—এ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হবে। আর এখান থেকেই করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে—এই আশঙ্কায় ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে টরে পাইনস স্টেট পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হবে। আর এখান থেকেই করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে—এই আশঙ্কায় ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে টরে পাইনস স্টেট পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, টেক্সাস ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে প্রতিদিন সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে। ৪ জুলাইয়ের সপ্তাহান্তে আমেরিকার মানুষের সমুদ্রসৈকতে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। এসব রাজ্যের বহু সমুদ্রসৈকত বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বোস্টন মেডিকেল সেন্টারের সংক্রমণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জাসুয়া বারোকাস বলেছেন, ঘরে থাকা, মাস্ক ব্যবহার করে বাইরে যাওয়া ও কেবল প্রচুর লোকজনকে টেস্টিং করেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে না। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সম্মিলিত সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত না করলে এবারের স্বাধীনতা দিবস আমেরিকার জন্য আরেকটি বিপর্যয়ের দিবস হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে বলে স্বাস্থ্যসেবীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন। জাসুয়া ৪ জুলাই উপলক্ষে উৎসব আনন্দ এড়িয়ে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এর মধ্যেই আমেরিকায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার স্বাস্থ্যসেবীদের ধারণা, জুলাই মাসের মধ্যে আমেরিকার মোট মৃত্যুর সংখ্যা দেড় লাখ অতিক্রম করবে। আমেরিকার ৩৬টি রাজ্যে এখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আমেরিকান সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেছেন লেখক মঈনুস সুলতান। জর্জিয়ায় বসবাসরত মঈনুস সুলতান করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই কাজ করছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে দেওয়া বক্তব্যে তিনিও আমেরিকার চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইবোলা মহামারি নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতার জের ধরে মঈনুস সুলতান বলেন, সংক্রমণ কমে আসার পর লোকজনের সচেতনতাও কমে আসে। এমন ফাঁকে সংক্রমণ আবারও বেড়ে যায়। সচেতনতার অভাবে বহু লোকজন মনে করে, সে নিজে আক্রান্ত হবে না। পরে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছুই করার থাকে না। বিপদ বাড়ে। অসচেতন লোক অন্য বহু লোককে সংক্রমিত করে। মঈনুস সুলতান নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ সংক্রমণ কমে আসা এলাকায়ও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।