ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড-এমআইটির মামলা

আসন্ন সেমিস্টারের ক্লাস পুরোপুরি অনলাইনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমন ঘোষণা যদি অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও আসে, তাহলে বিপদে পড়বে আমেরিকায় থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
আসন্ন সেমিস্টারের ক্লাস পুরোপুরি অনলাইনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমন ঘোষণা যদি অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও আসে, তাহলে বিপদে পড়বে আমেরিকায় থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

অনলাইনে পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমেরিকা ছাড়তে হবে-এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। ৮ জুলাই ফেডারেল কোর্টে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করে। 


৬ জুলাই ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) জানিয়েছে, আসন্ন ফল সেমিস্টার থেকে আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি পুরোপুরি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে, তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমেরিকা ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া সেখানে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও ভিসা দেওয়া হবে না।

গত মার্চ মাসে আইস এক নির্দেশনায় বলেছিল, মহামারির সময়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সশরীরে উপস্থিত না হয়েও ক্লাস করতে পারবে এবং এ কারণে তাদের আমেরিকার ভিসার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না।

হার্ভার্ড-এমআইটির দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, নতুন নির্দেশনায় লাখো শিক্ষার্থীর আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফেডারেল আদালতে দায়ের করা এ মামলায় বলা হয়েছে, আসন্ন ফল সেমিস্টার শুরু হওয়ার আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি বদল করার সুযোগ নেই। এতে অনেকেই দেশটিতে শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের বৈধ ভিসা হারাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়া ব্যয়বহুল, অবাস্তব এবং অনিরাপদ বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইস-এর আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের দিকে নজর রেখে ক্লাসের সময়সূচিও দেওয়া হয়ে গেছে। এখন হঠাৎ করে ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে শুধু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই নয়, বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হার্ভার্ডসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্নাতক পর্যায়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে আসতে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আগামী সেমিস্টারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। দায়ের করা মামলায় প্রশাসনিক এ সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হিসাবমতে, দেশটিতে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন ক্লাসকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আমেরিকায় অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে বলছে আইস। এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক বিপদে পড়তে যাচ্ছে দেশটিতে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।

আইস বলেছে, আসন্ন ফল সেমিস্টারে সম্পূর্ণ অনলাইনে চলা স্কুল এবং প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে না মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগও এই শিক্ষার্থীদের আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতি দেবে না।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনেক বাধা পার হতে হয়। নানা যাচাই-বাছাইয়ের পর শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পেয়ে থাকে। আর মার্কিন আইনে অনলাইন-কোর্সের জন্য আমেরিকায় আসা ও অবস্থান করাটা নিষিদ্ধ। এই বিষয়টিকেই এখন কাজে লাগাচ্ছে আইস।

এ বিষয়ে আমেরিকার অভিবাসন ও সীমান্ত সংক্রান্ত দ্বিদলীয় নীতি কেন্দ্রের পরিচালক তেরেসা ব্রাউন বলেন, 'এসব কোনো প্রতারণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খ্যাতি রয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এগুলোর বাস্তব পাঠ্যক্রম থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন দাঁড়িয়েছে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। কোভিড-১৯ এর কারণে অনেক দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেসব দেশের শিক্ষার্থীরা চাইলেই এখন দেশে চলে যেতে পারবেন না। তাই বিষয়টি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ধাঁধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।'