করবিবরণী প্রকাশ থেকে আপাতত বাঁচলেও রেহাই নেই ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করবিবরণী প্রকাশ নিয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। ৯ জুলাই দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অপরাধজনিত বিচার প্রক্রিয়া থেকে প্রেসিডেন্ট মুক্ত নন। রাজ্য সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল প্রেসিডেন্টের করবিবরণী আদালতে তলব করতে পারেন।

অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের পৃথক একটি রায়ে ট্রাম্পের করবিবরণী কংগ্রেস সদস্যদের তলবের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে আসছে নির্বাচনের আগে কংগ্রেস বা আমেরিকার জনগণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করবিবরণী সম্পর্কে জানার সুযোগ নেই। তবে বিচার প্রক্রিয়ায় ম্যানহাটনের অ্যাটর্নি জেনারেলে করবিবরণী তলব করার পক্ষে রায় আসাকে ট্রাম্পের পরাজয় বলে মনে করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট ম্যানহাটনের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে ট্রাম্পের করবিবরণী হস্তান্তরের সরাসরি নির্দেশ দেননি, নিম্ন আদালতে পর্যালোচনার জন্য বলেছেন। ফলে আসছে নির্বাচনের আগে ম্যানহাটনের অ্যাটর্নি জেনারেল এই করবিবরণী হাতে পাচ্ছেন না বলে সুপ্রিম কোর্টের তাৎক্ষণিক রায় বিশ্লেষণে মনে করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৮ বছরের করবিবরণী তলব করেছিলেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক করবিবরণী তলব করা হলে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিচার প্রক্রিয়ার তদন্ত থেকে মুক্ত। তবে এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে এই দাবি আর করা যাবে না। অবশ্য আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে ট্রাম্পের করবিবরণী জনগণের কাছে এখনই আর প্রকাশ হচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করবিবরণী ২০১৬ সাল থেকেই সরকারের নানা বিভাগের নজরদারিতে আছে। এ নিয়ে আমেরিকার জনগণের মধ্যেও কৌতূহল দেখা দেয়। আমেরিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি তাঁর করবিবরণী প্রকাশ করেননি। এ নিয়ে নানা টালবাহানা করে আসছেন। অন্যান্য প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই তাদের বার্ষিক করবিবরণী প্রকাশ করে আসছিলেন। ট্রাম্প বলে আসছেন, তাঁর করবিবরণী রাজস্ব বিভাগের অডিটে আছে। অডিটে থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর করবিবরণী প্রকাশ করবেন না।

ম্যানহাটনের ডেমোক্র্যাট ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যান্স জুনিয়র ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টিং ফার্ম মায়ারস ইউএসএকে করবিবরণী আদালতে উপস্থাপনের জন্য সপিনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুজন নারীকে মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দিয়েছিলেন, এমন অভিযোগের তদন্তের জন্য তাঁর করবিবরণী সপিনা করা হয়। এর মধ্যে পর্নো অভিনেত্রী স্টর্মি ডেনিয়েলের সঙ্গে তাঁর অনৈতিক সম্পর্ক চাপা দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে অর্থ প্রদানের অভিযোগ উঠেছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন এ সংক্রান্ত মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচার তহবিল থেকে নারীদের মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দিয়ে নির্বাচনী তহবিল ব্যয়ে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। মাইকেল কোহেন বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের নির্দেশে এমন কাজ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছিলেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তাঁর পক্ষ থেকে আইনজীবীরা করবিবরণী তলবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এ রায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য আরেকটি বড় পরাজয়। ট্রাম্পের মনোনীত দুজন রক্ষণশীল বিচারকও ট্রাম্পের বিপক্ষে যাওয়া রায়টির পক্ষে কোনো মন্তব্য ছাড়াই স্বাক্ষর করেছেন। নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের করবিবরণী আমেরিকার জনগণের কাছে প্রকাশ হচ্ছে না—এটিকেই ট্রাম্প সমর্থকেরা তাঁর বিজয় বলে মনে করছেন।