ফাহিম হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই

ফাহিম সালেহ
ফাহিম সালেহ

বাংলাদেশি তরুণ ফাহিম সালেহ ছিলেন প্রখর মেধাসম্পন্ন। শ্রম আর মেধা দিয়ে খুব অল্প সময়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সফলতার দরজায়। ফাহিম নিউইয়র্কের একটি হাইস্কুলে পড়ার সময় ‘উইজ টিন’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বেশ অর্থ আয় করেন। তখন চারপাশে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। এরপর ম্যাসাচুসেটস স্টেটের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক করেন। ফাহিম চাকরির চেষ্টা না করে ভাবতে থাকেন ভিন্ন কিছু করার।

ফাহিমের জন্ম সৌদি আরবে, বেড়ে ওঠা আমেরিকায়। বাবা-মা বাংলাদেশি। তাই বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ছিল অদম্য ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাই বাবা-মার জন্মস্থান বাংলাদেশে তাঁকে টেনে নিয়ে যায়। ২০১৫ সালের দিকে আরও দুজনের সঙ্গে মিলে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠাও’ চালু করেন। এতে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় অনেকেই। ধীরে ধীরে তরুণ-তরুণীদের আইডল হয়ে ওঠেন ফাহিম। তাঁর স্বপ্ন আরও প্রসারিত হতে থাকে। ভাবেন, শুধু বাংলাদেশ নয় ছড়িয়ে দিতে হবে অন্যান্য  দেশেও। ২০১৮ সালে নাইজেরিয়ায় লাগোসে যৌথ উদ্যোগে অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক রাইড সার্ভিস ‘গোকাডা’ চালু করেন ফাহিম। প্রথম দিকে সেই ব্যবসা জমে উঠলেও পরে তা নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর স্বপ্নের যাত্রা। ফাহিম কিকব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটলেরও সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি আয় করেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। এত অল্প বয়সে উঠে আসেন ধনীদের কাতারে। অভিজাত এলাকায় কিনে ফেলেন নিজস্ব কন্ডো অ্যাপার্টমেন্ট।

অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটলে ফাহিমের এমপ্লয়ি ছিলেন টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল। চার বছর ধরে ফাহিমের সঙ্গে কাজ করছিলেন ২১ বছর বয়সী হ্যাসপিল। কিন্তু লোভে পড়েন হ্যাসপিল। ফাহিমের ৯০ হাজার ডলারের মতো সরিয়ে ফেলেন তিনি। ফাহিম পরে তা জানতে পারেন এবং তাকে চাকরিচ্যুত করেন। তবে, কিস্তিতে তাঁকে সেই অর্থ শোধ করার সুযোগ দেন। এই চুরির জন্য ফাহিম পুলিশ রিপোর্ট করেননি। ভুলটা তিনি এখানেই করেছিলেন। ফাহিম হয়তো ভাবতে পারেননি হ্যাসপিল তাঁকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে পারে।

টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল শুধু একজন প্রতিভাবান ফাহিমকে খুন করেননি, তিনি খুন করেছেন লাখো মানুষের জীবিকা গড়ে ওঠার সম্ভাবনাকে। শুধু খুন করে থেমে থাকেননি, লাশ টুকরো করে ব্যাগে ভরা হয়েছে আলামত নিশ্চিহ্ন করতে। যে তাঁকে স্বপ্ন দেখাল, কাজ দিল, বিশ্বাস করে বন্ধুর মতো আচরণ করল, তাঁকেই কিনা হত্যা করল কয়েক হাজার ডলারের জন্য।  পুলিশের ধারণা, এটা পেশাদার খুনির কাজ। অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করা। কারণ, যে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ফাহিমের দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেছে তা হোম ডিপো থেকে টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল কিনেছিলেন-ক্রেডিট কার্ড রেকর্ড তাই বলে। সঙ্গে ঘর পরিষ্কার করার স্যানিটাইজ জিনিসপত্রও কিনেছেন।

ফাহিমকে হত্যার জন্য টেজার গান ব্যবহার করেছে। যেটা পুলিশ আর্মিরা ব্যবহার করে এক্সটিম লেভেলের অপরাধীদের ধরাশায়ী করার জন্য। টেজারের মধ্যে থাকে এক ধরনের সূক্ষ্ম মারাত্মক লেজার রশ্মি। যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে শরীরকে কিছু সময়ের জন্য সম্পূর্ণ নিথর করে দেয়। ফাহিমের বেলায়ও তাই করেছে। হ্যাসপিল কি জানতেন না প্রমাণ থাকবে? বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে প্রমাণ থাকে এটা তার মতো মানুষের জানার কথা। পুলিশ হ্যাসপিলকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ফাহিম হত্যাকাণ্ডকে মার্কিন সরকার হাই প্রোফাইল কেস হিসেবে নিয়েছে। স্মরণকালের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড হিসেবে বলা হচ্ছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, হ্যাসপিল কি নিজেই খুন করেছেন, নাকি পেশাদার কোনো খুনি ভাড়া করেছেন। নাকি তাঁর সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক অপরাধী জড়িত?

কেন ফাহিম ৯০ হাজার ডলার চুরির পরও তাঁকে পুলিশে দিলেন না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ফাহিম আমেরিকার আইন সম্পর্কে জানতেন। জানার পরও কেন টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলকে সুযোগ দিলেন। কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা সেখানে ছিল কিনা তা তদন্ত হচ্ছে। ফাহিমকে শুধু হত্যাই করা হয়নি, ইলেকট্রিক করাত দিয়ে তাঁকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। প্রচণ্ড ক্ষোভ থাকলে এমন হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

সত্য বের হয়ে আসবে আজ না হোক কাল। আমরা শুধু পুলিশের বক্তব্য ও ধারণা শুনেছি। টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলের বক্তব্য এখনো আসেনি। বক্তব্য যাই হোক ফাহিমকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে এটাই সত্য। আমরা এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই খুনির। সে খুনি টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল হোক বা পেশাদার অন্য কেউ হোক।