ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে তাড়ানোর আলোচনা

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকার একটি প্রভাবশালী পক্ষ হোয়াইট হাউস থেকে জোর করে তাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ–আলোচনা করছে। আমেরিকার ইতিহাসে এমন আলোচনা আর কখনো হয়নি। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত না হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। নির্বাচনের ফলাফল কাছাকাছি হলে আদালতের হস্তক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে এবারের আলোচনা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতায়।

এদিকে ২৬ জুলাই এক টুইটবার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলেছেন, ‘আসছে জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হবে। মেইল ইন ব্যালটের কারণে ২০২০ সালের নির্বাচন আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কারচুপির নির্বাচন হবে, যদি না আমরা তা বন্ধ করতে পারি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কোনো সমস্যা ছাড়াই ভোট দেওয়া গেছে। কিন্তু এখন তাঁরা মেইল ইন ভোটের নামে কারচুপি করার জন্য কোভিড-১৯–কে ব্যবহার করছে।’

কোভিড-১৯–এর কারণে এবারে রাজ্যগুলোয় আগাম ভোট গ্রহণ হবে বেশি করে। আমেরিকার একেক রাজ্যে নির্বাচনের একেক নিয়ম। জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস বাকি থাকলেও কোনো কোনো রাজ্যে ডাকযোগে ভোট শুরু হয়ে যাবে আগামী দুই মাসের মধ্যেই। নির্বাচনের ফলাফলে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা খুব কাছাকাছি হলেই সমস্যা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেই দিয়েছেন, তিনি এখনো জানেন না নির্বাচনের উল্টো ফলাফল হলে কী করবেন। রিপাবলিকান প্রচারণা থেকে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনে কী ঝামেলা করে, তা নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। তবে তাঁরা নিশ্চিত, অবাধ নির্বাচন হলে ট্রাম্প এবারও নির্বাচিত হবেন।

বেশ কিছু রাজনীতিক, সাবেক সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও অধ্যাপকেরা এ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তাঁরা বিষয়টাকে হালকাভাবে আর নিচ্ছেন না। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রসা ব্রুকস। তিনি মার্কিন সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, সব কটি সম্ভাবনার শেষ হবে সহিংসতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। ভোট কারচুপি হয়েছে দাবি করা কোনো প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে অস্বীকার করলে বিরাজমান আইনে খুব স্পষ্ট কিছু নেই বলে রসা ব্রুকস উল্লেখ করেছেন।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রসা ব্রুকস বলেছেন, অনুমান বা যদি এমন হয়—এমন সব আগাম চিন্তা দিয়ে সমাধানের সব কটি সম্ভাবনা খোঁজা কঠিন। পরিস্থিতির উদ্ভবের সম্ভাবনা বিরাজমান আছে বলেই এমন আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফক্স নিউজে দেওয়া এ–সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে বলা হয়েছে, আমেরিকার জনগণই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেবে। আমেরিকার সরকারই হোয়াইট হাউস থেকে যেকোনো অনাহূতকে বহিষ্কারের ক্ষমতা রাখে বলে তাঁরা মনে করেন।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্ড্রু ম্যাককার্টি এমন ধারণাকে ‘রাবিশ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যদি কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অবজ্ঞা করেন, আশা করা যায়, তাঁকে পরিস্থিতি যতটা সুযোগ দেয়, সে পরিমাণ সম্মান দেখিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়া হবে।

বেশ আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন, আসছে নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি ডাকযোগে ভোট নিয়ে ব্যাপক কারচুপি করতে পারে। নিউজার্সির নির্বাচন নিয়ে কারচুপির উদাহরণ টেনেও তিনি গত মাসে আরেকটি এমন টুইট করেন। আমেরিকাজুড়ে জনমত জরিপে এখন পিছিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক পার্টির তেমন প্রচার এখনো শুরু না হলেও ট্রাম্প তাঁর নানামুখী নির্বাচনী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম রাখছেন। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনের পরই ব্যাপক প্রচার শুরু হবে।

করোনা মহামারির কারণে এবারের নির্বাচন বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। আমেরিকার অধিকাংশ রাজ্যে এখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর্যায়ে। প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। লোকজনকে সামাজিক ব্যবধান মানার জন্য এখন ট্রাম্প নিজেও আহ্বান জানাচ্ছেন। আমেরিকানদের মধ্যে ভোট প্রদানে এমনিতেই খুব উৎসাহ দেখা যায় না। ভোটের দিন কোনো ছুটিও থাকে না। লোকজন কাজ রেখে বা কাজে যাওয়া–আসার পথে ভোট দিতে তেমন মরিয়া হয়ে ওঠেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে লোকজন ঘরে থাকাকেই এখনো প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাচ্ছেন না। ট্রেন, বাস বা সাধারণ পরিবহনে যাতায়াত করছেন না। ফলে, ডাকবাক্সে আসা ব্যালট পেপার খুলে দেখে ভোট দেবেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোকজন। অনেক লোকজন করোনাভাইরাসের কারণে ডাকবাক্স খুলে দেখায়ও সতর্কতা অবলম্বন করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, ডাকযোগে ভোট সংগ্রহের জন্য ডেমোক্র্যাটদের ব্যাপক কারসাজি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমেরিকার ইতিহাসে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা করে—এমন কোনো বক্তব্য দেননি।