মার্কিন নাগরিকদের সরকারি সহযোগিতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতির কূটচাল

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের লোকজনের চরম সংকটের সময় নাগরিক সহযোগিতা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি ৬০০ ডলারের কর্মহীন ভাতার মেয়াদ বাড়াতে চান। ডেমোক্র্যাটরা রাজি হচ্ছেন না। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বেকার ভাতার মেয়াদ বর্ধিত করে ফুড স্ট্যাম্পসহ অন্যান্য নাগরিক সহযোগিতা সংকুচিত করার কথা বলছেন। ডেমোক্র্যাটরা সব ক্ষেত্রে উদার সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

রিপাবলিকান দলের মধ্যে যাঁরা পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন, তাঁরা প্রকাশ্যে যেকোনো উদারনৈতিক সহযোগিতার পক্ষে। যাঁদের সামনের নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা নেই, সেসব রিপাবলিকান নেতা নাগরিক সহযোগিতা নিয়ে খুবই রক্ষণশীল অবস্থানে। তাঁরা সাহায্যের নামে আমেরিকার লোকজনকে আর বসিয়ে খাওয়ানোর পক্ষে নন।

ছয় মাসে করোনা মাহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় অনেক নাম যুক্ত হচ্ছে। মধ্য মার্চের পর থেকে আমেরিকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। লকডাউন ছিল প্রায় তিন মাসের মতো। লকডাউনের পর কোনো কোনো জায়গায় তড়িঘড়ি করে সবকিছু চালু করে দেওয়া হয়। সেসব এলাকায় এখন আবার করোনা বিপর্যয় চলছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সরকার নাগরিকদের লকডাউনে থাকতে বলেছে।

এখন সরকারের নির্দেশে চালু করার পরও বহু ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ বা সীমিত হয়ে পড়েছে। আমদানি-রপ্তানিতেও পিছিয়ে আছে। বেকারত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। লোকজন ঘরভাড়া দিতে পারছেন না। নগর, পৌরসভার কর দিতে পারছেন না। তাই এক বিরাট সংকটে পড়েছে আমেরিকা। আমেরিকার ইতিহাসে লোকজন এমন বৈরী বাস্তবতা কখনো মোকাবিলা করেনি।

এপ্রিল মাসে মার্কিন নাগরিকদের সরাসরি এক দফা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে সে দেশের সরকার। কর্মযোগ্য প্রতিটি মানুষ নগদ অর্থ পেয়েছেন। কর্মহীনদের নিয়মিত বেকার ভাতা ছাড়াও পেনডামিক ভাতা হিসেবে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কর্মজীবী এ সংকটের সময়ে পাওয়া অর্থ দিয়ে কোনোমতে জীবন সামাল দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হয়েছে। কিছু অনুদান, কিছু ঋণ কর্মসূচি দিয়ে সংকটের শুরুতে সরকার ঠিকই মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছে। এখন সংকট দীর্ঘায়িত হয়েছে। এ সংকটে নাগরিকদের সহযোগিতা নিয়ে শুরু হয়েছে চেনা রাজনীতির কূটচাল।

ডেমোক্র্যাটরা চাচ্ছেন উদার সহযোগিতা। এ কথা বলে নাগরিকদের বাহবা পাবেন তাঁরা। ট্রাম্প নিজেই এ বাহবা নিতে চান। রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা মনে করছেন, নাগরিকদের যেকোনো সাহায্য নিয়ে তাঁদের আদর্শগত অবস্থান থেকে তাঁরা কাজ করছেন। আসন্ন নির্বাচনের জন্য যাঁদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে হচ্ছে, তাঁরা সুযোগ বুঝে কথা বলছেন।

৬০০ ডলারের বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে জুলাই মাসে। এখন রাজ্যের ন্যূনতম বেকার ভাতা দেওয়া হচ্ছে কর্মহীনদের। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হয়নি। পর্যটন একেবারেই বন্ধ। এমন অবস্থায় লোকজন চেষ্টা করেও কাজে যেতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন জানেন, এমন সংকটে সরকার এগিয়ে আসবে। সাধারণ কর্মজীবীরা কর্মহীন হলেও আইন প্রণেতারা কর্মহীন নন। তাঁরা বিতর্ক করে, রাজনৈতিক চালাচালি করেও বছরে ছয় অঙ্কের বেতন পাচ্ছেন। তাঁদের কর্মহীন ভাতার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তারা লবিংয়ের জন্য অর্থ পাচ্ছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েই তাঁরা ওয়াশিংটনে যাওয়া-আসা করছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক বাহবা পাওয়ার জন্য বলেই দিয়েছেন আইনপ্রণেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেন না। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিনি আইন পাস করতে পারছেন না। বেকার ভাতার অতিরিক্ত ৬০০ ডলার আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা নিয়ে একধরনের ঐকমত্য হওয়ার পর আবার জট লেগেছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন, রাজ্যগুলোতে দেওয়া ফেডারেল ফুড স্ট্যাম্পসহ অন্যান্য সুবিধার অর্থ কমিয়ে বা বন্ধ করে দেবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও সাহায্যের অর্থ কমাবেন।

গতকাল শনিবার এ নিয়ে তিন ঘণ্টা টানা মিটিং করে বেরোনোর পর সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চার্লস শুমার বলেছেন, এখনো ঐক্য হয়নি। অগ্রগতি হয়েছে, তবে কাছাকাছি তাঁরা পৌঁছাতে পারেননি। কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও বলেছেন একই কথা। তাঁরা সভা করেছেন হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডোসের সঙ্গে। চেষ্টা করছেন সমঝোতায় আসার। ডেমোক্র্যাটরা চাচ্ছেন বেকার ভাতার ৬০০ ডলার, ফুড স্ট্যাম্পের জন্য বর্ধিত সাহায্য, নগর সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া এবং বাড়ির ভাড়াটেদের সরাসরি সাহায্য করতে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহের পরই আইনপ্রণেতারা ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন। এ মাসটিতে উভয় দলের জাতীয় কনভেনশন। এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন রাজনৈতিক নেতারা। কংগ্রেস ছুটিতে যাওয়ার আগেই নাগরিক সহযোগিতার আইন পাস করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে আরেকটা উদার নাগরিক সহযোগিতা দিয়ে দেখাতে চান, তিনি সংকটে নাগরিকদের পাশে আছেন। জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা ট্রাম্পের জন্য এমন ঘোষণা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে।

রিপাবলিকান দলের কেউ কেউ আদর্শিক অবস্থান থেকে এমন ঢালাও নাগরিক সহযোগিতার পক্ষে নেই। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে আমেরিকার নাগরিক সহযোগিতার এ পর্যায়ের আইনটি পাস হচ্ছে না। সিনেটে দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল ও তাঁর সহযোগীরা নাগরিক সহযোগিতাকে নানা শর্ত দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। আবারও ৬০০ ডলার করে দিলে লোকজনকে কর্মহীন থাকার জন্য উৎসাহিত করা হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। যদিও প্রত্যেক নাগরিককে বা করাদাতাকে এককালীন আরেকটা অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে উভয় দলের মধ্যেই ঐকমত্য হয়ে আছে।

আবারও আগের মতো ব্যক্তিবিশেষের ১২০০ ডলার, দম্পতি ২৪০০ ডলার এবং তিন সন্তান পর্যন্ত ৫০০ ডলার করে পাওয়ার কথা নিয়ে আলোচনা শেষ পর্যায়ে। আইনপ্রণেতারা যা-ই করেন না কেন, এ সপ্তাহের মধ্যে সরাসরি নাগরিক সহযোগিতার আইনটি পাস করতে হবে। জনগণের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা এমন চাপ তৈরি করেছে, তা না করে ওয়াশিংটন থেকে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক নেতাদের ফেরা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।