কত লোক মরলে পরে আমেরিকা মহান হবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

একদিকে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে ছয় মাসে ১ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর তালিকা, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সপ্তাহ কাটাচ্ছেন ভার্জিনিয়ার গলফ ক্লাবে। গলফ ক্লাবের অবকাশ থেকে ট্রাম্প টুইট করেছেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’। একই সময়ে তাঁর প্রশাসনের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, করোনাভাইরাস এক যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন মূর্তি ধারণ করেছে। প্রতিদিন এক হাজার লোকের মৃত্যু হবে—এমন আশঙ্কার কথা বলে স্বাস্থ্যসেবীরা বলছেন, এখনো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে অনুমানের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হবে।

আমেরিকায় এখন প্রায় ৫০ লাখ লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে আসছেন, বেশি করে পরীক্ষা করার কারণেই এমন বেশি সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান না বললেও ট্রাম্প বিদ্রূপ করে ‘চায়না ভাইরাস’ উল্লেখ করে বলেছেন, শিগগির ভাইরাসটি নির্মূল করা হবে। তাঁর কথার সঙ্গে ভাইরাস নির্মূলের কোনো পদক্ষেপ আমেরিকার লোকজন দেখতে পাচ্ছে না। লকডাউন থেকে তড়িঘড়ি করে সব খুলে ফেলার চাপের কারণেই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের করোনা মহামারিবিষয়ক টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফাউসিই বলেছেন, অন্যান্য দেশ এ ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় যা করতে পেরেছে, আমেরিকা তা করতে পারেনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। বাস্তবে বহু এলাকায় এসব পরীক্ষা হলেও ফল পেতে দেরি হচ্ছে। অপেক্ষমাণ সময়ে আক্রান্ত লোকজন আরও নতুন লোকজনকে সংক্রমিত করছে। জাতীয়ভাবে সঠিক কোনো নির্দেশনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো উপস্থাপন করতে পারেননি। যদিও তিনি দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের বাইরে গিয়ে একেকবার একেক কথা বলছেন। কখনো বলছেন, তিনি মাস্ক পরায় নেই। এখন বলছেন, মাস্ক পরা উচিত। তাঁর এসব বক্তব্য মার্কিন জনগণকে বিভ্রান্তই করছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার চেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন বেশি উদ্বিগ্ন তাঁর পুনর্নির্বাচন নির্বাচন নিয়ে। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেশের দেড় লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যানও তাঁকে বিচলিত করছে না।

স্বাস্থ্যসেবীরা আশঙ্কা করছেন ডিসেম্বরের মধ্যে তিন লাখ লোকের মৃত্যু হবে। এতেও প্রেসিডেন্ট বিচলিত নন। আশঙ্কার কথা বলে জনগণের কাছে এখনো এ নিয়ে তাঁর স্পষ্ট কোনো বার্তা নেই। সপ্তাহান্তে গলফ কোর্স থেকে টুইট বার্তায় অবশ্য ট্রাম্প আবারও বলেছেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।

করোনাভাইরাসে কত মানুষের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্র আবার মহান হয়ে উঠবে, এ নিয়ে এখন শঙ্কা বাড়ছে। কর্মহীন মানুষের জন্য নাগরিক সহযোগিতা নিয়েও কুটচাল শুরু হয়েছে। নাগরিক সহযোগিতার জন্য আইনপ্রণেতাদের সর্বশেষ জট ভাঙাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছু করছেন বলে লোকজন দেখতে পাচ্ছে না। হতাশ ও উদ্বিগ্ন মার্কিন জনগণের দুঃসময়ের প্রেসিডেন্ট যদিও জনগণকে আহ্বান জানিয়ে চলেছেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’!