বাফেলোয় বাড়ির দাম বাড়ছেই

নিউইয়র্কের বাফেলো নায়েগারার বাড়ির দাম সহনীয় ছিল। লকডাউনের প্রথম দিকে বসন্তজুড়ে নিউইয়র্কের বাড়ির লেনদেন সীমিত হয়ে পড়লেও বাফেলোয় বাড়ির বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। মহামারি প্রসূত অর্থনৈতিক মন্দা শুরু ও তা দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মে মাসের দিকে বাফেলোর বাড়ির দাম বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা জুন ও জুলাই মাসেও অব্যাহত রয়েছে।

অর্থনীতি আবার যখন পুরো উদ্যমে খুলছে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও এজেন্টরা বলছেন, বাফেলোয় এখন বাড়ির বাজার গরম হয়ে উঠেছে। সেঞ্চুরি২১ রিয়েল এস্টেটের মালিক জেরি থম্পসন। বৃহত্তর বাফেলোর ইষ্ট অ্যারোরা এলাকায় তার রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহান্তে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ জুড়ে বাড়ি বেচাকেনা ঊর্ধ্বমুখী ছিল।’

বাফেলো নায়াগ্রা অ্যাসোসিয়েশন অব রিয়েল্টরসের (বিএনএআর) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যমতে, গত দুই মাসে বাফেলোর আবাসন বাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। ক্রেতারা বাড়ি কেনা অব্যাহত রেখেছেন।

তবে স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। লে-অফের কারণে মানুষের আয় ব্যাপকভাবে কমেছে। আমেরিকার বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ক্রেতাদের ভিড় কমে যাবে। অন্যদিকে স্বাভাবিক কারণে বিক্রির জন্য নতুন বাড়ি তালিকাভুক্তির প্রবাহ বাড়বে। ক্রেতাদের সামনে তখন পছন্দ করার মতো প্রচুর বাড়ি থাকবে। তখন বিক্রেতাদের হাত থেকে বাফেলোর বাড়ির লেনদেনে, ক্ষমতা ক্রেতাদের হাতে চলে যাবে বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই। 

বর্তমানে বিষয়টি ভিন্ন। হালে বাফেলোয় ক্রেতাদের মধ্যে বাড়ির চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

৭১৬ রিয়েলটি গ্রুপের অন্যতম মালিক গ্রেগ ষ্ট্রাউস বলেন, ‘আমাদের অফিসে এখন ক্রেতাদের ভিড় হচ্ছে প্রতিদিন। বাফেলো কেলার উইলিয়ামস রিয়েল্টির এজেন্ট জনাথন কারবালো বলেন, ‘ক্রেতাদের মধ্যে এত উচ্চ চাহিদা এর আগে দেখিনি।’
বাফেলোয় এখন বিক্রির জন্য বাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। থম্পসন বলেন, ‘আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি, ক্রেতা অনেক। কিন্তু বিক্রির জন্য বাড়ির অভাব। বাড়ি থাকলে এখন বিক্রি করা যেত।’

সম্প্রতি বাফেলোর বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায়ও বাড়ির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, কেনার জন্য বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে সেসব এলাকায় যারা বাড়ি কেনাবেচা করেন, তাদের একজন মুহাম্মদ আখতার। তিনি বলেন, এই দাম বেড়ে যাওয়া কৃত্রিম। দুই/চার মাস পরে আবার কমবে বলে মনে করেন তিনি।

মাহবুবুল কবীর নর্থ বাফেলোর এমহার্ষ্ট এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকেন। ইষ্টসাইড এলাকায় তার বেশ কিছু প্রোপার্টি আছে। তিনি নিজে একজন ক্রেতা। ৩ জুলাই প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পক্ষ থেকে ফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি ক্রেতারা এ এলাকায় বাড়ির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

মারুফ বলেন, কয়েক দিন আগে একজন বাড়ি বিক্রেতার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি এক ফ্যামিলি একটি বাড়ির মালিক। তার বাড়িটি বিক্রি করবেন। দাম জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘এই বাড়িটি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার ডলারে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন ৭৫ হাজার ডলার। ক্রেতা প্রস্তুত। তাঁর মন্তব্য, ‘এখন যারা কিনবে তারা দাম বাড়িয়ে কিনে নিতে চায়, তো আমি কি করব?’

নিউইয়র্ক নগরের বাড়ির মূল্য অত্যধিক। এ কারণে কনভেনশন্যাল লোন নিতে হয়। অধিকাংশ বাংলাদেশি অভিবাসীর ঋণ হয় না। ডব্লিউ ২ চাকরি, ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি, এসবের অভাবের কারণে এত বড় ঋণ দিতে রাজি হয় না ব্যাংক বা মর্টগেজ কোম্পানিগুলো। বাফেলোয় বাড়ি কেনার প্রতি বাংলাদেশি অভিবাসীদের আগ্রহী হওয়ার অন্যতম কারণ এটি, বড় ঋণ নিতে হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ঋণই নিতে হয় না। ওখানে কোন কোন এলাকায় একটি সিঙ্গেল ফ্যামিলি বাড়ির মূল্য ৪০ থেকে ৬০ হাজার ডলার। দুই ফ্যামেলির বাড়ি ৭০ থেকে ৮০ হাজারে পাওয়া যায়।
গত মাস দু–এক থেকে একসঙ্গে অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা বাফেলোয় বাড়ি কেনার উদ্যোগ নেন।

সহসা এমন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির দামও স্বাভাবিক কারণে বেড়ে যায়। ক্রেতাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাই বর্তমানে বাফেলো বাজারের বাড়ির দাম বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা।