ট্রাম্প-বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারে নানা কৌশল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকার সাধারণ নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনের প্রচার কৌশলও ভিন্ন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ছয় মাসে এক লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর শোকে দাঁড়িয়ে এবারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। তাঁকে হোয়াইট হাউস থেকে তাড়িয়ে মহামারিকালের নির্বাচনকে স্মরণীয় করতে চান ডেমোক্রেটরা।

ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন মহামারির এ সময়ে জাতীয় সম্মেলন কেন্দ্রে না গিয়ে ঘর থেকে মনোনয়ন গ্রহণের বক্তব্য রাখবেন। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সশরীরে রিপাবলিকান দলের সম্মেলন কেন্দ্রে আর যাচ্ছেন না। মনোনয়ন গ্রহণ করে হোয়াইট হাউসের আঙিনা থেকেই আমেরিকাকে মহান রাখার বক্তব্য রাখবেন আবারও।

এর মধ্যেই উভয় শিবির থেকে প্রচার শুরু হয়েছে। এবারের প্রচারণা পদ্ধতি ভিন্ন। ট্রাম্প সমর্থকেরা মাস্ক নিয়ে এখন দরজায় কড়া নাড়ছেন। কোভিড-১৯ এর সময়ে ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে মাস্ক দেওয়ার নাম করে প্রচার কর্মীরা লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নিচ্ছেন। ঘরে ঘরে টেলিফোন বেজে উঠছে। এমন ফোন কলের শুরুতেই বলা হচ্ছে, ‘৬০ সেকেন্ডের একটা প্রশ্ন করা হচ্ছে আপনাকে। আপনি কি মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মিডিয়া সব সময় ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে?’ এ উত্তরের জের ধরেই প্রচার কর্মীরা বিনয়ের সঙ্গে বলছেন, আমেরিকাকে সঠিক জায়গায় রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমাদের আরও চার বছরের জন্য রাখা জরুরি।

মাঠ কর্মীদের এভাবে দরজায় দরজায় কড়া নাড়া খুবই ব্যয়বহুল। তবু ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে ২৩টি অঙ্গরাজ্যের ১০ লাখের বেশি ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ কারণে প্রচার শিবির লোকও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। এ পর্যন্ত দুই হাজার ৫০০ মাঠ কর্মীকে কাজে নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে জো বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে দরজায় নক করার কৌশল এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞাপন প্রচারে অঢেল অর্থ ঢালা হচ্ছে ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে। বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ সচেতনতার জন্যই এমন জনে জনে দেখা সাক্ষাৎ করা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে টিভিসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ এমন প্রযুক্তিগত প্রচারে ব্যয় করা হচ্ছে, যার পরিমাণ ২৮০ মিলিয়ন ডলার। বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে লোকজনকে আগাম ডাকযোগে ভোট দেওয়ার কথাও ডিজিটাল প্রচারে বলা হচ্ছে।

আমেরিকার দুই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে কোভিড-১৯ নিয়ে তাঁদের দলীয় অবস্থান ফুটে উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে সবকিছু স্বাভাবিক দেখানোর একটা প্রয়াস আছে, অপরদিকে বাইডেন শিবির থেকে করোনা মহামারি এখনো বিপজ্জনক এবং লোকজনকে সরাসরি সামাজিক সংযোগ এড়িয়ে থাকার কথাই বলা হচ্ছে।

ডেমোক্রেটিক দলের ন্যাশনাল কমিটির অন্যতম পরিচালক ডেভিড বার্গস্টেইন বলেছেন, মাস্ক নিয়ে দরজায় দরজায় কড়া নাড়িয়ে প্রচার করার এখন খুব উপযুক্ত সময় নয়। বিষয়টি এ সময়ে নিরাপদ ও কার্যকর নয় বলে তিনি মনে করেন।

অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে মাঠ অফিসগুলো ক্রমশ খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা স্থানীয়ভাবে সভা-সমাবেশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের কেউ মাস্ক পরে, কেউ মাস্ক হাতে নিয়ে এসব সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। ট্রাম্প শিবিরের প্রচার কর্মীদের সিডিসি নির্দেশিকাসহ প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘরে ঘরে পাঠানো হচ্ছে। প্রচার শিবিরের ম্যান্ডি ম্যারিট বলেছেন, এটা প্রমাণিত সত্য, দরজায় দরজায় কড়া নাড়িয়েই বেশি লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায়, তাঁদের উদ্বুদ্ধ করা যায়।

বাইডেনের প্রচারণা শিবির থেকে লাখো ভোটারের তালিকা করে ফোন দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফা সংক্ষিপ্ত ফোন কলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া হচ্ছে, ভোটার ডাকযোগে ভোট দিচ্ছেন কিনা। ফোন কলে বাইডেন সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য আসলে, তা মোকাবিলার জন্য দ্বিতীয় আরেকজনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ এ আমেরিকার ৫০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও সবচেয়ে বেশি সংক্রমিতের দেশ আমেরিকা। এমন নাজুক বাস্তবতা মোকাবিলায় দেশের রাজনীতিকেরা চরম বিভক্ত। নাগরিকদের অর্থনৈতিক দুর্দশা চরমে ওঠার আগেই আসছে ৩ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জয় পাবেন এমন প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা বেশি। যদিও এর ব্যতিক্রম আগেও হয়েছে। এবারে বাস্তবতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রম। এমন বাস্তবতা আমেরিকার জনগণ, রাজনীতিক কারও অভিজ্ঞতায় নেই। ফলে নির্বাচন নিয়ে নতুন অনেক কিছুই ঘটতে থাকবে। রাজনৈতিক উত্তেজনায় আগামী মাসগুলো কাটবে আমেরিকার লোকজনের। এমনকি বিশ্বের রাজনীতি বিশ্লেষকদেরও থাকতে হবে বিশ্বের শক্তিধর এ দেশটির নির্বাচনী নাটকীয়তার উত্তেজনা নিয়ে।