পুলিশের সোর্স, যুবদল নেতাসহ নয়জনের নামে অভিযোগপত্র

রাজধানীর মিরপুরে ব্যবসায়ী কাজী জিয়া হায়দার হত্যায় পুলিশের এক তথ্যদাতা (সোর্স) ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতাসহ নয়জনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এই মামলার তদন্ত শেষে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।তবে জিয়া হায়দার হত্যার সঙ্গে মিরপুর থানা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম নেই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, পুলিশের কর্মকর্তা বলেই অভিযোগপত্রে ওই ব্যক্তির নাম নেই।এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা এবং এজাহারভুক্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।গত বছরের ২১ জানুয়ারি দিনদুপুরে মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের বাড়িতে ঢুকে জিয়া হায়দারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী কাজী সেলিনা আজমী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন।তদন্ত শেষে যে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন ইমরান হোসেন ওরফে জিতু, পুলিশের তথ্যদাতা মনির হোসেন, সজীব হোসেন, মামুনুর রশিদ, আলী আকবর হোসেন, মনিরের ছোট ভাই নয়ন, মতিউর রহমান ওরফে পলাশ, আয়নাল হক ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে মিলন। তাঁদের মধ্যে নয়ন, মতিউর, আয়নাল ও শরিফুল পলাতক বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মনির বর্তমানে জামিনে এবং বাকি চারজন কারাগারে রয়েছেন।এই নয়জনের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাসেল ওরফে পিচ্চি রাসেল ও রুবেল ওরফে দাঁতভাঙা রুবেল নামে আরও দুজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে এই মামলায় সন্দিগ্ধ ও গ্রেপ্তার হওয়া আ. মজিদ, তাঁর স্ত্রী রূপা আক্তার, কামাল মিয়া, মো. শাহীন ও মো. আজাদ কাজী এবং এজাহারভুক্ত মনির (তথ্যদাতা মনির নন), আরিফ, সেলিম ও জুয়েলের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান।এ বিষয়ে নিবারণ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, অনেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। হত্যায় সরাসরি তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।জিয়া হায়দার হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াছিন গাজী। অভিযোগ ওঠে, পুলিশ তদন্তের নামে আসামিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে এবং মামলা ভিন্ন খাতে নিতে বাদীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। পুলিশের অবহেলায় নয়ন বিদেশে পালাতে সক্ষম হন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই থানার তৎকালীন এএসআই জামিল আহমেদের সম্পৃক্তারও অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। নিবারণ চন্দ্র বর্মণের আগে মামলাটি তদন্ত করেন ডিবির আরেক পরিদর্শক মিজানুর রহমান।অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে জিয়া হায়দারের বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া মজিদের বাসায় মনির, আরিফ, সেলিম, শাহীন ও জুয়েল তাস খেলছিলেন। জিয়া তাঁদের গালমন্দ করে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ জুয়েল ও শাহীন জিয়ার স্ত্রী ও মেয়েদের নামে এলাকায় কুৎসা রটান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতা হলেও তর্কাতর্কির একপর্যায়ে জুয়েলকে চড় মারেন জিয়া। চড়ের বিষয়টি জুয়েল তাঁর বড় ভাই আয়নালকে জানালে তিনি নয়ন, শরিফুল, মনিরসহ কয়েকজনকে নিয়ে জিয়ার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করেন। আয়নাল ও শরিফুলের পরিকল্পনায় ইমরান, মামুন, সজীব, আকবর, মনির, পলাশ, রাসেল ও রুবেল হত্যাকাণ্ডের দিন জিয়ার বাসায় ঢুকে অস্ত্রের মুখে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। জিয়া একপর্যায়ে ইমরানকে জাপটে ধরেন। ইমরান পিস্তল দিয়ে গুলি করলে জিয়া মারা যান। পরে আসামিরা বাদীর বাড়িতে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল রেখে এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান।ইমরানকে গত বছরের আগস্টে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অস্ত্রটিই হত্যায় ব্যবহূত হয়েছিল বলে ডিবি জানায়। ইমরানের তথ্যের ভিত্তিতে সজীব, আকবর ও মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে প্রথমে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পুলিশের তথ্যদাতা মনির। কয়েক দিন পর জামিনে বের হলে অস্ত্রসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই মামলায়ও তিনি জামিনে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এখন রাজধানীর অন্য একটি থানার পুলিশের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করছেন।