বম

বাংলাদেশে বম নৃগোষ্ঠীর বসবাস মূলত চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায়। এ ছাড়া রাঙামাটির বিলাইছড়িতেও কিছু কিছু বম বাস করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এদের লোকসংখ্যা ছয় হাজার ৯৭৮। বমরা একাধিক নামে পরিচিত, যেমন: বম, বন, বাউন, বোনজোগি, বঙ। গবেষকদের ধারণা, এককালে চীনের মূল ভূখণ্ডের চিনলুং এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। পরে বার্মার চেনদুইন ও ইরাবতী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে এরা সরে আসে। বমরা নিজেদের বলে থাকে ‘লাই’ বা ‘লাইম’। এর অর্থ হচ্ছে ‘মানুষ’। এদের প্রধান দুটি গোত্র: ‘শুনথলা’ ও ‘পাংহয়’। কৃষিজীবী বমদের অধিকাংশই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে।বমরা যে ভাষায় কথা বলে, তার নাম বম ভাষা। এই ভাষা চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের কুকি-চিন-নাগা শাখার অন্তর্ভুক্ত। ১৮৯৪ সালে রেভারেন্ড জে এইচ লরেইন ও রেভারেন্ড এফ ডব্লিউ স্যাভেজ আইজলে রোমান বর্ণমালা অনুসরণে একটি লিপির প্রবর্তন করেন। মিজোরাম থেকে আসা লুসাই ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে এ লিপি বম-পাংখোয়াদের মধ্যে প্রচলিত হয়। এ বর্ণমালায় ২৫টি রোমান বর্ণ ব্যবহার করা হয়। পাংখোয়ারা লুসাই ভাষার বাইবেল ব্যবহার করে। বমদের নিজস্ব ভাষায় বাইবেল অনূদিত হয়েছে। বম, লুসাই ও পাংখোয়া ভাষার সম্পর্ক বোঝাতে একটি অভিন্ন বাক্যকে তিন ভাষায় অনুবাদ করা যাক।‘তোমার নাম কী?’ এ বাক্যটির অনুবাদ দাঁড়াবে:বম: না মিন আও? লুসাই: তুঙে-ই-ই-মিহংপাংখোয়া: নি রিমি তোমো?বম ভাষায় সাহিত্য রচিত হচ্ছে। বম ভাষার কবি ফুয়াহতু লেহ থ্লুক তাঁর ‘বাংলাদেশ কান রাম’ শীর্ষক কবিতাটি লিখেছেন বাংলাদেশ নিয়ে। জন্মভূমির প্রতি অকৃত্রিম দরদ থেকে রচিত এ কবিতার একেবারে শেষের স্তবকে তিনি লিখেছেন, ‘Hi ngak ram nuam hi kan tawng lai ma?/Tawng kho ding hen kei ka ruat lo;/Khualtawng zivel nak a rem tlang leh tiva./Tipo leh Tivate, Lawng leh ke hen.’লালচেওসাং বম ও লাল থানাজুয়াল এ দুজনে মিলে এর তর্জমা করেছেন, ‘এই দেশের চেয়ে সুন্দর দেশ কোথায় পাব বলো?/ ভাবতে পারি না এই দেশের মতো আর দ্বিতীয় একটি পাব/ ভ্রমণের জন্য নদী ও সবুজ পাহাড়।/ পায়ে ও নৌকায় যাওয়া যায় ছোট ও বড় নদী।’