মানবপাচার-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা

মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো ‘যথেষ্ট’ না হলেও আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত মানবপাচার বন্ধে আইন ও প্রশাসন-ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করা।বিশ্বের প্রায় দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ পাচার হয়ে গিয়ে বিদেশে দাস হিসেবে জীবনযাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব মানুষের মাত্র ৪৭ হাজারকে চিহ্নিত করা গেছে। বাকিরা এখনো অমানবিক ও অন্ধকার জীবনযাপন করছে।গত ১৯ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে মানবপাচার কিছুটা কমেছে। পাচার হয়ে যাওয়া অনেক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, অনেক দেশে মানবপাচারবিরোধী আইন প্রণীত হয়েছে এবং অনেক দেশের সরকার এ কাজকে বেআইনি ঘোষণা করেছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘২০১৩ ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে ১৮৮টি দেশের মানবপাচার-সংক্রান্ত অবস্থান ও অগ্রগতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছরের প্রতিবেদনে মানবপাচারের ক্ষেত্রে অবস্থার অবনতি লক্ষ করা গেছে। মাত্র দু-একটি দেশের অবস্থা ভালোর দিকে। প্রতিবেদনে রাষ্ট্রগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে আছে ৩০টি রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রের সরকার কিছু কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সেসব পদক্ষেপকে ‘যথেষ্ট’ মনে করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।দ্বিতীয় ভাগে আছে ৯২টি রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রের অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতিবেদন বলছে, এ রাষ্ট্রগুলোর সরকার কিছু কিছু ‘সত্যিকার’ পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে তা ইতিবাচক ফল দিতে পারেনি।দ্বিতীয় ভাগের পর্যবেক্ষণ তালিকায় আছে ৪৪টি রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রের সরকারগুলো মানবপাচারের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।তৃতীয় ভাগে আছে ২১টি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রগুলো মানবপাচার বন্ধে বা শ্রমিকদের জীবনের উন্নয়নে কোনো লক্ষণীয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।বাংলাদেশের অবস্থা সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দেশের অনেক পুরুষ, নারী ও শিশুকে পাচার করে জোর করে শ্রমে নিয়োগ ও যৌন ব্যবসায় লাগানো হয়।বাংলাদেশের যেসব পুরুষ ও নারী স্বেচ্ছায় উপসাগরীয় দেশসমূহ, মালদ্বীপ, ইরাক, ইরান, লেবানন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে অবৈধভাবে যায়, তারা সেসব দেশে বিভিন্ন ধরনের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হয়। এসবের মধ্যে আছে কোনো একটি স্থানে থাকার বাধ্যকতা, পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি। এ ছাড়া অনেকে কারাবন্দী থাকেন বা অনেককে দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়। অথচ এসব শ্রমিক বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠনের (বায়রা) মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার আগে বায়রাকে অনেক অর্থ দিয়ে থাকে। কিন্তু অবৈধভাবে গিয়ে তারা কার্যত বিপদে পড়ে যায়।ভারত ও পাকিস্তান হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার সময় অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার হন।দেশের ভেতরেও অনেক শিশু পাচার হয়ে গিয়ে যৌন ব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে বা কোনো স্থানে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশ এখনো কোনো লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও সরকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের অন্যতম পদক্ষেপ হলো মানবপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২ প্রণয়ন। তবে এ আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের জন্য লোকবলের অভাব ও কর্তৃপক্ষের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।