হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিম দেখছেন হজযাত্রীরা

‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই হাজরে আসওয়াদের কথা শুনেছি, পবিত্র হজ পালন করতে এসে সেই হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে পেরেছি। আমার আসা সার্থক হয়েছে।’ কথাগুলো বললেন মো. মাহফুজ হোসেন। তিনি এসেছেন ঢাকার সাভারের রাঢ়িবাড়ী থেকে।কাবা শরিফের এক কোণে আছে এই হাজরে আসওয়াদ, এর আভিধানিক অর্থ কালো পাথর। মুসলমানদের কাছে এটি অতি মূল্যবান ও পবিত্র। হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফ (কাবা শরিফ সাতবার চক্কর দেওয়া) শুরুর স্থান। প্রতিবার চক্করের সময় এতে চুম্বন করতে হয়। ভিড়ের কারণে চুম্বন করতে না পারলে চুম্বনের ইশারা করলেও চলে—এটিই নিয়ম। হজের সময় এর কাছে খুব ভিড় থাকে। হাজরে আসওয়াদ নিয়ে একটি ঘটনা সবার কম-বেশি জানা। তা হলো, কাবা পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ (তাওয়াফের জায়গা) থেকে দেড় মিটার উঁচুতে রাখা। জানা যায়, আগে এটি ছিল আস্ত একটা পাথর। হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরো হয়ে যায়। আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরোগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরো ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরো দেখা যায়। এগুলোর আকৃতি বিভিন্ন রকম। বড় টুকরোটি খেজুরের সমান।ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। এর পাশে ২৪ ঘণ্টাই থাকে সৌদি পুলিশ। তাঁরা খেয়াল রাখেন, ফ্রেমে মাথা ঢোকাতে বা চুম্বন করতে কারও যেন কষ্ট না হয়। হাজরে আসওয়াদে চুম্বনের জন্য নারীরাও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। কাবা শরিফে বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে গিয়ে দেখা যায়, ফরজ নামাজ চলাকালে হাজরে আসওয়াদে কেউ চুম্বন করতে পারেন না।মাহফুজ হোসেনের মতো অনেক হজযাত্রী মক্কায় এসে মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) নামাজ আদায়ের পাশাপাশি হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইব্রাহিম দেখছেন। কাবা শরিফের পাশেই চারদিকে লোহার বেষ্টনীর ভেতর একটি ক্রিস্টালের বাক্সে আছে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান, প্রায় এক হাত। এটিই মাকামে ইব্রাহিম। মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে দাঁড়ানোর স্থান। অর্থাৎ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এই পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি ঠিক কী কাজ করতেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হলো, কাবা শরিফের দেয়ালের উঁচু অংশ নির্মাণের সময় তিনি এই পাথরে দাঁড়িয়ে কাজ করতেন। পাথরের মাঝখানে একজোড়া পায়ের ছাপ আছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মুজেজার কারণে শক্ত পাথরটি ভিজে তাতে তাঁর পায়ের দাগ বসে যায়। চার হাজার বছরের বেশি সময় পরও মাকামে ইব্রাহিমে এখনো পায়ের চিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে। হজরত উমর (রা.)-এর সময় পাথরটিকে সরিয়ে বর্তমান জায়গায় বসানো হয়।মাকামে ইব্রাহিমের কাছে বাঁ ঘেঁষে অনেক মুসল্লি নামাজ পড়েন, অনবরত চলে তাওয়াফ।জেদ্দা বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫৫ হাজার ২২৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। প্রতিদিন হজ বুলেটিনে তথ্য হালনাগাদ করা হয় এই ঠিকানায় www.hajj.gov.bd|