কবিতাকুঞ্জের খাতায় লেখা

নির্মলেন্দু গুণ
নির্মলেন্দু গুণ
আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলায় প্রকাশিতব্য নির্বাচিত তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে...


কবিতাকুঞ্জ শিরোনামে একটি কবিতার বই বেরোচ্ছে কবি নির্মলেন্দু গুণের। সেই বই থেকে কয়েকটি কবিতা।

অস্তমান সূর্যের বন্দনা

জানালার ভারী পর্দাগুলো

টেনে দিয়ে আমার ঘরটাকে

অন্ধকারময় করার সময়

আমার চোখে পড়লেন সূর্য।

বহুদিন হলো আমি সূর্য দেখি না।

শেষ কবে সূর্য দেখেছি, মনে নেই।

অনেকদিন পর আড়চোখে

আমি পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া

সূর্যটাকে একটু দেখলাম।

যদিও সূর্য দেখার বিন্দুমাত্র বাসনা

আমার ছিল না, তবু সূর্যটাকে

চকিতে দেখলাম—

দেখলাম অস্তাচলে দাঁড়িয়েও

হাঁসের ডিমের কুসুমের মতো

কী উজ্জ্বল, টকটকে

গাঢ় লাল গাত্রবর্ণ তাঁর, আহা!

স্বর্ণগহনায় মোড়া নববধূ যেন

ঝলমল করছে আকাশে।

শূন্য শহর

পাবার আকুতি আর না–পাবার কষ্ট—

এ দুয়ারের মাঝের ব্যবধান কতটুকু

হয়তো এক সমুদ্র আকাশের মতো,

অথবা সমান্তরাল কোনো রেলপথ—

যার শুরুটা সবাই ছুঁতে পারলেও শেষটা আজও এক রহস্য।

সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এমন লক্ষ আকাশ

কালের গর্ভে বিলীন হবে এমন হাজার অপূর্ণতা।

জন্ম নেবে নতুন শহর, জীবন, সভ্যতা,

শুধু আমার শহরের একটা গলিতে

কখনো কেউ আসবে না

আমার বাড়ির একটা ঘর আজন্ম শূন্য পড়ে থাকবে।

কদমবন্দনা

এই ফুলটা আমি একজনের কাছে থেকে অননেক চেয়ে নিয়েছি। দিতে চায়নি। সহজে দিতে চায়নি। কাঁদো কাঁদো গলায় একটা দুঃখের ভাব মিশিয়ে বলেছি—আমার প্রিয় ঋতু বর্ষার এই ফুলটিকে কেমন দস্যুর মতো কেড়ে নিয়েছে গ্রীষ্ম। অনেক ভালো ভালো, ভালো ভালো; সুন্দর সুন্দর কথা বানিয়ে বানিয়ে, বানিয়ে বানিয়ে বলার পরই একপর্যায়ে উনার মন গলেছে। উনি গ্রীষ্মের অকালবরষনে ফোটা বর্ষার এই প্রতীক ফুলটি আমাকে চিরতরে দিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন।

আমার জন্মদিনের সঙ্গে এই ফুলটির গোপন সম্পর্কের কথাও বলেছি। তাতে খুব কাজ হয়েছে। আসলে জন্মদিন ব্যাপারটাকে সবাই কমবেশি মানে। মূল্য দেয়। আর দেবেই–বা না কেন? জন্মই তো আসল। মানুষের জন্ম না হলে তো কিছুই হতো না। কোথায় থাকত এই কদম, আর কোথায় ফুটত কৃষ্ণচূড়া—তা কে জানত? এখন সংসদের সামনে প্রশ্ন—কোনটা বেশি সুন্দর? এই বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলটা? নাকি লাল নখ আর দুই রকমের তিন চুড়িপরা হাতখানি? আপাতত এটি অমীমাংসিতই থাক।


কবিতাকুঞ্জ
নির্মলেন্দু গুণ
প্রচ্ছদ: পিয়াস খান
প্রকাশক: বিভাস, ঢাকা।