প্রেমের পদাবলি
মুহম্মদ নূরুল হুদা
মনোবাড়ি
তোমাকে দেখেই আমি
চলে যাই অদেখা জগতে,
আমাকে না দেখে তুমি
চলে আসো দেখার জগতে;
পলে পলে চলে এই খেলা
পলে পলে চলে হেলাফেলা
তোমার আমার; আমাদের;
না চেয়ে পেয়েছি যাকে
সে কিছুই পায় নাই টের।
এ খেলা মনের খেলা, জানে মনোময়,
মনে মন জয়ী হলে দেহ জয়ী হয়
আমরা গড়েছি সেই মনোবাড়ি
আর কিছু নয়, আর কিছু নয়।
মারজুক রাসেল
নদীপত্নীক
বাঁশি পরে শাড়ি বাজালে ভেসে যাওয়া কলস খাটে ফিরে আসে।
‘কীভাবে?’—এর উত্তর সুলতান নানানভাবে দিয়ে গেছেন চিত্রাকে, চিত্রা যমুনাকে, যমুনা মধুমতীকে, মধুমতী আমাকে—না হলে আমি শাড়ি সাইজের গামছা পইরা গোসলের ডাকের অপেক্ষায় শুকাইয়া যাচ্ছি কেন, তা আবগারি জানে।...
আবিদ আনোয়ার
দূরের তুমি সুরের তুমি
যখন তোমাকে নিয়ে কাব্য করি
তাকে আমি কবিতা বলি না,
তবে কিনা নির্দ্বিধায় বলতে পারি গীতি—
প্রতিটি চরণ থেকে সুর ধার করে
দ্বৈত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে পাখি ও প্রকৃতি।
পঙ্ক্তি বলতে বুকে বাজে,
দয়িতাকে নিয়ে শুধু লেখা চলে কলি বা চরণ,
যান্ত্রিকতাদষ্ট শব্দে তুমি দাও সুরের মূর্ছনা,
বুকের সরোদে নিত্য টোকা দেয় তোমার যৌবন।
মাসুদ খান
করণকৌশল
কে যে কার আগে চলে যাব
তুমিও জানো না, আমিও তো তা-ই।
যদি আমি আগে যাই, থাকবে না কোথাও
কোনোই পরিতাপ
আমার তো আজন্ম স্বভাব, শখ—ছড়িয়ে পড়ার!
কণা-অণুকণা হয়ে ছড়িয়ে পড়ব ধীরে ধীরে
মনোরম জলবায়ু হয়ে ঘিরে থাকব তোমাকে।
আর যদি তুমি আগে যাও,
প্রকৃতিশাস্ত্রের সব বিধি ব্যর্থ করে দিয়ে
তোমার বেরিয়ে যাওয়া অভিমানী প্রাণবায়ু
স্নিগ্ধ পরমায়ু
মুহূর্তের মধ্যে আমি ফিরিয়ে আনব
ঠিকঠিক তনুতে তোমার।
নির্ঘুম নক্ষত্র সাক্ষী, আমি জন্ম-জন্মান্তর সাধনায়
আয়ত্ত করেছি এই প্রাণ ফেরানোর জাদু, করণকৌশল।
কামাল চৌধুরী
তোমার অবহেলা
পুরোনো দিন, পুরোনো মেঘ
স্মৃতিকালের ঝড়ে
হারানো এক বৃষ্টিগ্রামে
আকাশ নেমে পড়ে
পায়ের নিচে ঝরাপাতার
কাদামাটির খেলা
বৃষ্টিপথে তীব্র হাওয়া
তোমার অবহেলা।
শুভাশিস সিনহা
তরি ও তরঙ্গ
যখন তোমাপানে ছুটল তরঙ্গ
পাড়ে কে বসে ছিল একা,
তোমারই হাওয়া লেগে ইশারা নর্তকী
তবু সে পায় নাই দেখা।
দৃশ্য ডাকাতিয়া দুপাশে ঘনঘোর
উড়ছে কেশপাল দূরে,
অতলে ভাসমান যে থাকে আনন্দে
কে পায় তারে কোন সুরে!
যখন তোমাপানে ছুটছে তরঙ্গ
যখন বইঠায় ক্লান্তি,
তখনই ব্রহ্মের কৃষ্ণগহ্বরে
মিলেছে কোনো হেমকান্তি।
গোধূলি নেমে এল, জীবন এল-গেল
করে আলিঙ্গন মায়া,
জোয়ার উছলায় কাশে কি হোগলায়
তুমি হে আজন্ম জায়া।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
পাখিরা
ঝোলে, আপ্ত ভাষা দোল খেলে
আঁখি তুমি ভোর ত্যাগ করো—
বাহানা তো মেনে নেয় বায়ু
ওষ্ঠ্য তার উষ্ণ হবে—কখনো অধরা
পাখি তুমি পাহারা ভোলো না!
মজে, সাহসের বৃত্ত পূর্ণ হলে
অভিমানে ঠান্ডা ছল
প্রসন্ন প্রণয়ে মাপে নল,
সে-ও বুঝি প্রকৃতিপাগল এক
মোমে ধরা আগুনের ফল;
পাখি তুমি সম্ভব ছেড়ো না!
গলে, ঢল নামে উন্মুখ চরণে
ভুবন যে গিঁট বাঁধা ঘোরে—
বহুবার শেষ হয়ে তবু এক রাত
আরও কোনো অন্ধকার
সাকিরা, পাখিরা!
ঋষিণ দস্তিদার
শ্রী জানে
জাগিয়ে দিয়েছিলে কত শব্দ
হাতে ধরে, চেনা কোনো ভুলের
মধুতে ডুবে গেল নক্ষত্রের ছাই;
তারপর একটু একটু করে আড়াল
আর ছায়াগুলো দেশান্তরি, মেঘবোঝাই—
স্রেফ ওড়াওড়ি খেলা।
শ্রী জানে, শ্রী জানে।।