'সন্ধ্যানদীর জলে' নিয়ে শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে

কবি শঙ্খ ঘোষের লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে বাংলাদেশ। তাঁর বাংলাদেশবিষয়ক লেখাপত্র নিয়ে প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হয়েছে সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ নামের অনবদ্য একটি সংকলন। বইটির সংকলক ছিলেন পিয়াস মজিদ। এ লেখায় তিনি জানাচ্ছেন এ বইয়ের নির্মাণ এবং বইটি হাতে পাওয়ার পর শঙ্খ ঘোষের অনুভূতি।
কিছুক্ষণ আগেই তিনি হাতে পেয়েছেন সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ বইটি। এরপর শঙ্খ ঘোষ হাতে নিলেন বাল্যবন্ধু ও একাত্তরের শহীদ আনোয়ার পাশার উপন্যাস নীড় সন্ধানী, ৯ নভেম্বর ২০১৯, কবির কলকাতার বাড়িতে। ছবি: লেখক
কিছুক্ষণ আগেই তিনি হাতে পেয়েছেন সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ বইটি। এরপর শঙ্খ ঘোষ হাতে নিলেন বাল্যবন্ধু ও একাত্তরের শহীদ আনোয়ার পাশার উপন্যাস নীড় সন্ধানী, ৯ নভেম্বর ২০১৯, কবির কলকাতার বাড়িতে। ছবি: লেখক

ফেব্রুয়ারি ২০১৯। তখন বইমেলা চলছে। এর কিছুদিন আগে প্রথমা প্রকাশন থেকে আমার সংকলন ও সম্পাদনায় বেরিয়েছে শামসুর রাহমানের আমার ঢাকা আর বেলাল চৌধুরীর আমার কলকাতা। তো সেই ফেব্রুয়ারিতে ওই বই দুটো সংকলন ও সম্পাদনার সূত্রে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান আমাকে দিলেন নতুন এক প্রস্তাব—কবি শঙ্খ ঘোষের বাংলাদেশ প্রসঙ্গের লেখাপত্র একত্র করে একটি সংকলন প্রস্তুত করতে হবে এবং সেটি প্রথমা প্রকাশন থেকে বের করবেন তিনি। ‘শঙ্খ ঘোষ’ নামটি বলাতেই আমার চোখে ভেসে এল বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে আজিজ সুপার মার্কেটে এক ঘরোয়া সান্ধ্য আড্ডায় প্রথম দেখার মাহেন্দ্রমুহূর্তটি, সন্ধ্যার শান্ত উপহারের মতো যুগপৎ মিত ও উজ্জীবক কথার ডালি মেলে ধরা তাঁর অবয়বটি। শঙ্খ ঘোষ মানেই তো সেই দিনগুলি, রাতগুলি:

‘রাত্রির কলস ভেঙে প্রভাত গড়ায় দিকে দিকে’।

আমি আবেগের বশে শঙ্খ ঘোষের বাংলাদেশবিষয়ক লেখার সংকলন সম্পাদনার বিষয়ে সম্মতিসূচক উত্তর তো দিলাম, তবে নাইতে নেমে বুঝলাম স্নান কতটা জলজটিল! বাংলাদেশ শঙ্খ ঘোষের লেখাপত্রে এমনভাবে ছড়িয়ে ও জড়িয়ে আছে যে তাঁকে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন কর্ম বটে। 

কবির গদ্যসংকলন তৈরিতে কবিতাই হয়ে উঠল পটভূমি ও প্রারম্ভিকা। কারণ, আমার স্মৃতিতে সজীব ছিল শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘কবি’ এবং সৈয়দ শামসুল হকের প্রয়াণে আমাদেরই আহ্বানে লেখা ‘কথা হবে’ কবিতাটির কথা। শামসুর রাহমানের ‘দুঃসময়ে মুখোমুখি’ কবিতাটিকে অনেকেই ভুল করে ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’ লিখে থাকেন, এই গুরুতর প্রমাদ প্রসঙ্গে শঙ্খ ঘোষের লেখাও পড়েছি আর ভেবেছি পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের কবি-লেখকদের নামের বানান ভুলভাবে মুদ্রিত হওয়ার দুঃখজনক অভিজ্ঞতার বিপরীতে শঙ্খ ঘোষ এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, যিনি যেকোনো কবির কবিতার সম্পূর্ণ শুদ্ধ মুদ্রণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। ব্যতিক্রম তিনি আরও অনেক ক্ষেত্রেই, এই সংকলনের জন্য তাঁর খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত গদ্য সংগ্রহ আর সংগ্রহের বাইরের নতুন বইগুলো পড়তে বসে টের পাওয়া গেল। তাঁর গদ্য এতটাই স্থাপত্য-সংহত এবং ললিতমধুর যে একটির পাঠোত্তর অনুভবী মায়ামুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতেই সময় লাগে ঢের; নতুন করে আবার অন্বেষণে পেতে হয় বেগ। বন্ধু আনোয়ার পাশাকে নিয়ে লেখা বিধুর গদ্য ছেড়ে মুহর্তেই তাঁর ভ্রমণানন্দের গদ্যসমুদ্রের দিকে অনুসন্ধানী জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব নয়। 

তবু ধীরে ধীরে প্রবেশ করা গেল শঙ্খ ঘোষের বাংলাদেশ-বিভান্বিত সৃষ্টিসমস্তে। যতই গভীরে যাই, মধু। এই বাংলায় তাঁর নাড়ি পোঁতা; চাঁদপুর, বরিশালের বানারীপাড়া, পাবনার পাকশী—জন্মের দাগ লাগা মাটি, বেড়ে ওঠার ভিটে, শিক্ষার আলো পাওয়া জায়গা আর পরবর্তীকালের ভ্রমণের ভূমি। ফেলে আসা জায়গাজমির বস্তুগত টানের চেয়ে স্মৃতিদক্ষিণের বারান্দায় বসে থাকা প্রিয় সব মুখের রেখার মোহে এই বাংলায় ফিরে ফিরে আসেন তিনি। যখন সব পাখি ঘরে ফিরে যায়, তখন স্মৃতিপাখি মুহুর্মুহু ডানা ঝাঁপটায়। শঙ্খ ঘোষ নিখিল নিদ্রার নিনাদে, বিস্মরণের কুশলী কালে জীবনের স্মৃতিদীপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন ঠাঁয়। অক্ষরের অনন্ত আলোয় নিজের জন্য এবং আমাদের জন্য গদ্য লেখায় উপহার দেন তাঁর ব্যাপ্ত বাংলাদেশ পর্ব। 

প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা

১৫২ পৃষ্ঠা

দাম: ২৮০ টাকা 

এভাবেই তো হৃৎকমলে ধুম লাগে, এভাবেই তো নিহিত পাতালছায়ায় দেখা হয় শীর্ষের শরীর। শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে এগোতে থাকি। খসড়া একটি পাণ্ডুলিপি দাঁড় করানো যায়, তবে বিষয় যেহেতু শঙ্খ ঘোষ, তাই তৃপ্ত হওয়া দায়। যেনবা মধুর ভুলক্রমে প্রাথমিক খসড়াটি পৌঁছে গেল শঙ্খ ঘোষের হৃদয়খোলা দরবার-দরজায়। দিনকতক বাদে কাছের মানুষ কবি সন্দীপন চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপ মারফত বার্তা আসে:

‘উনি বললেন যে তোমার গোছানো দেখে উনি মুগ্ধ। এত ডিটেইলে তুমি ওনার লেখা পড়েছ...এমনকি অগ্রন্থিত লেখাও রেখেছে সংকলনে।’ 

এমন বার্তা আমার দ্বিধাগ্নিতে জল ঢালল মুহূর্তেই যে জল পাষাণ হয়ে নেই মোটেও। প্রাথমিকভাবে বইয়ের নাম নির্বাচিত হলো ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!!’ সে অনুযায়ী প্রচ্ছদও হলো। কলকাতায় গিয়ে কয়েক দফা শঙ্খ-দর্শনও হলো। অসুস্থ শরীরে গোটা পাণ্ডুলিপি পড়ে চোখে পড়া প্রমাদ শনাক্ত করে দিলেন, লিখলেন অসামান্য এক ‘আত্মপ্রসঙ্গ’ আর আমার অনুধাবনে এল পীড়াগ্রস্ত হলেও মানুষ জরাগ্রস্ত নাও হতে পারে। 

মুহিত হাসান আমাকে কিছু লেখার সন্ধান দিলেন, আরও বেশ অনেকটা দিলেন সন্দীপন চক্রবর্তী। সব মিলে বইয়ের আকার প্রাথমিক খসড়ারূপের প্রায় দ্বিগুণ দাঁড়াল। শঙ্খ ঘোষের বাংলাদেশবিষয়ক লেখার সংকলন হচ্ছে শুনেই তাঁর একটি-দুটি পরিচিত ভ্রমণগদ্যের কথা বলছিলেন কেউ কেউ, কিন্তু অনেকেরই অজ্ঞাতে ছিল বাংলাদেশকে প্রসঙ্গ করে, আত্ম-অনুষঙ্গে লেখা এত এত অনন্য গদ্য; যেখানে আছে আমাদের সামগ্রিক এগিয়ে যাওয়ার আশা আর একটিই কথা—ভালোবাসা, ভালোবাসা। 

বাংলাদেশের প্রকৃতি, স্মৃতি আর এই বঙ্গের মানুষ-বিশেষকে নিয়ে লেখা বেশ কিছু কবিতার খোঁজও পাওয়া গেল, তবে অনুভবের অতি সূক্ষ্ম স্তরে যে কবিতার খেলা চলে, সেখান পর্যন্ত তল্লাশি চালালে এই বইয়ে মুদ্রিত ‘আত্মপ্রসঙ্গ’-এর মতোই বিষয়টি দাঁড়াবে:

‘এমন কবিতা কমই লিখেছি যার মধ্যে—শব্দে বা প্রতিমায়—বাংলাদেশই প্রচ্ছন্ন হয়ে নেই।’ 

তাই কবিতাকে রাখা গেল তাঁর সৃষ্টিসামগ্র্যের অখণ্ডরূপেই। পাঠক সামগ্রিকতার মধ্য থেকেই বেছে নেবেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত অংশকে। আমরা সংকলনটিকে সাজালাম পাঁচটি পর্বে: ‘একুশে, একাত্তর ও নববর্ষ’; ‘ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান’; ‘গানের ভিতর দিয়ে’; ‘শিক্ষা-আন্দোলন’; ‘স্মৃতি, ভ্রমণ’। 

যখন বইয়ের কাজ অনেকটা অগ্রসরমাণ, সে সময় মতিউর রহমানই বললেন ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!!’ নামটা ঠিক শঙ্খ ঘোষ-সুলভ হচ্ছে না, পরিবর্তন করা যায় কি না শিরোনামটা?’ ভয়ে ভয়ে তাঁর কাছে বার্তা পৌঁছানো গেল। আর কদিন পরেই উত্তর এল, উত্তর তো নয়, যেন এই বইয়ের অবিকল্প শিরোনাম—সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ। ‘সন্ধ্যানদীজল’ নামের কবিতাও এসে সায় দেয় যেন এই শিরোনামে:

‘দুহাত তোমার স্রোতে, সাক্ষী থাকো, 

সন্ধ্যানদীজল।

এমন তর্পণদিনে বহু মঠ পেরিয়ে পেরিয়ে 

তোমার দুঃখের পাশে বসে আছি 

এই ভোরবেলা।

আরো যারা এ-মুহূর্তে নেই হয়ে 

দাঁড়িয়ে রয়েছে

আমার শরীর ঘিরে এমন সম্পূর্ণ যবনিকা

তাদের সবার শ্বাস দুহাতে অঞ্জলি দিয়ে আজ 

এইখানে বসে ভাবি আমার সম্বল 

স্থির থাকা। 

আমার সম্বল শুধু ঝুমকোঘেরা মঠ অবিকল 

আমার নদীর নাম সন্ধ্যানদী, 

তুমি তার জল।’ 

শিল্পী মাসুক হেলাল আঁকলেন যথানুগ প্রচ্ছদ; যেন সন্ধ্যা নদীটাই তার স্মৃতিসজলতা নিয়ে দোল খাচ্ছে আমাদের আঁখির পাপড়িতে। বই প্রকাশিত হলো। পাঠকের সাড়াও মিলল। দূরান্ত থেকে দু–একজন জানালেন তাঁদের নিকটের নদী সন্ধ্যা যেন অবিকল উঠে এসেছে শঙ্খ ঘোষের গদ্যতরুর লতাগুল্মে। ভরসা পাই আর অপেক্ষায় থাকি কবে তাঁর হাতে হাতে দিতে পারব বইটি। 

সবকিছুর মতো একসময় অপেক্ষারও ফুরোয় প্রহর। ৯ নভেম্বর তারিখ ঠিক হয় তাঁর সঙ্গে দেখা করার, বই হাতে তুলে দেওয়ার। এর আগে ৭ নভেম্বর কালরাত্রির খবর হয়ে যান নবনীতা দেবসেন। আরও অনেকের মতো শঙ্খ ঘোষেরও তিনি হৃদয়-প্রতিবেশী। কলকাতার হিন্দুস্তান পার্কের নবনীতার ভালো-বাসা বাড়ির আঙিনায় দেখা হয় শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে; উপচে পড়া ভিড় আর শত শোকের মধ্যে আমার মনের মঞ্চে কে যেন আবৃত্তি করে চলে অনিবার্য শঙ্খ ঘোষ:

‘এইসব লেখা তার মানে খুঁজে পাবে বলে আসে

শহরের শেষ ধাপে কবরসারির পাশাপাশি 

এপিটাফগুলি তার অভিধা বাড়ায় সন্ধ্যাবেলা 

নগ্ন অক্ষরের গায়ে মৃত বন্ধুদের হিম শ্বাসে।’

আছে মৃত্যু আছে দুঃখ তবু অনন্ত জাগে। আমরাও শোকের সায়র উজিয়ে জীবনজমিতে খুঁজে চলি প্রার্থিত পলি।

৯ নভেম্বর, গন্তব্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিবাস, যেখানে শঙ্খ ঘোষের আবাস। সঙ্গে প্রথমা প্রকাশনের হুমায়ুন কবীর, বন্ধু মাশফিক উল্লাহ, তন্ময় নামে যিনি বেশি পরিচিত, আর সন্দীপন চক্রবর্তী। তন্ময় নিয়ে এসেছিল তাদের স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশার উপন্যাস নীড় সন্ধানী আর হুমায়ুন কবীর মতিউর রহমানের লেখা আকাশভরা সূর্যতারা। হুমায়ুন কবীরের হাত থেকে আকাশভরা সূর্যতারা বইটি হাতে নিয়ে লেখার সূচিপত্রে দৃষ্টিপাত দিয়ে বললেন, অরুণ মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, পরিতোষ সেন; আমার সব প্রিয় মানুষের নিয়ে লেখা আর বাংলাদেশের বইয়ের কী সুন্দর নির্মাণ! মুহূর্তে মনে এল তাঁর বইয়ের নামটি—নির্মাণ আর সৃষ্টি। আনোয়ার পাশা শঙ্খ ঘোষের বাল্যবেলার বন্ধু, তাঁকে নিয়ে এই সংকলনে আছে ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ নামের এক অন্তরার্দ্র স্মৃতিলেখা, যেখানে তিনি বলছেন:

‘এখনও সজল আশা আছে তবে কোমল মাটি ও তৃণমূলে। এই মাটি ও তৃণের মধ্যে বেঁচে থাকবে আনোয়ার, আর তারই মতো আরও হাজার হাজার শহীদ।’ 

নীড় সন্ধানী হাতে নিয়ে শঙ্খ ঘোষ বারবার উল্টেপাল্টে কী সন্ধান করছিলেন? হয়তো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরই স্মৃতির ধূলিবালি। অস্ফুটে আমাদের বললেন, ‘আনোয়ার পাশার কবিতা পড়েছ তো?’ 

বললাম, পড়েছি।

‘এই মাটিতে এখনো আছে বেঁচে থাকার মানে।’ 

এই কবিতার কথা কয়েকবার লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ। লিখবেনই তো, কারণ তিনিও তো, আমরা সবাই তো কবিতা আর লেখার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার মানেই সন্ধান ও সম্প্রসারিত করে চলি। 

সন্ধ্যানদীর জলে হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ মৌন বসে রইলেন শঙ্খ ঘোষ, যেন মৌনতার সুতোয় বোনা চাদরে এক চিলতে হাসির উদ্ভাসে জানান দিলেন তাঁর অনুমোদন ও আনন্দ। আমরা সে মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করতে চাইলে বাধা দিলেন। অবাক হলাম কিন্তু পরক্ষণেই হলাম তারও বেশি বিস্মিত। সন্দীপন জানালেন, তিনি নিজের বই হাতে কখনো ছবি তুলতে দেন না, তবে অন্য যে কারও বইয়ের ক্ষেত্রে সানন্দে ছবি তোলেন। যেমনটি এখানে মুদ্রিত আনোয়ার পাশার নীড় সন্ধানী বই হাতে তাঁকে দেখা যাবে। এমনই তো শঙ্খ ঘোষ, ‘আত্ম’কে আড়াল করার ক্ষান্তিহীন সাধনায় যিনি অপরকে ভণিতাহীন ‘আমি’ ভাবতে পারেন। 

হঠাৎ ইংগিত করলেন বাসার ভেতরের কক্ষে অসুস্থ প্রতিমা ঘোষকে একটি বই দিয়ে আসতে। আমরা গেলাম, প্রতিমা ঘোষ, নিজেও যিনি নয় বোনের বাড়ি, সেইসব কথা, আপনজন ক’জন কবি-এর মতো অসাধারণ কিছু বইয়ের লেখক। জীবনসঙ্গীর বই হাতে প্রতিমাদি এমন এক অপার্থিব হাসি উপহার দিলেন যে মুহূর্তটি প্রতিমাবদ্ধ হয়ে রইল আমাদের মানসবেদিতে। 

একরাশ ভালো লাগার বোধ নিয়ে ফিরে এলাম শঙ্খ ঘোষ আর কলকাতার কাছ থেকে, বাংলাদেশের দিকে। কলকাতার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া হলেও শঙ্খ ঘোষের কাছ থেকে কখনো হয় না বিদায় নেওয়া, কারণ সন্ধ্যানদীর জলের ‘আত্মপ্রসঙ্গ’-তে তিনি তো বলেছেনই:

‘এ তো সত্যি যে মুহুর্মুহু আমি বেঁচে থাকি বাংলাদেশেরই মধ্যে।’