কবিতা এক গুচ্ছ

১. 

স্মৃতি বিস্মৃতি

ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াই
সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে চেয়ে দেখি
বারান্দার নিঝুম আলোতে
রেখে এসেছি উঠতি যৌবনের প্রেম।


২.
মজনুর প্রেম

ঢেউ তীর ছুঁয়ে ফিরে যায়
তোমাকে ছুঁয়ে আমিও ফিরি

রাধা রাধা বলতে বলতে
তোমার বৈষ্ণব উঠোনে।


৩.
মায়া জড়ানো বাতাস

তুমি চোখজুড়ানো ক্যানভাস
কখনো তুমি তেলরং কখনো জলরং
কখনো তুমি অ্যাক্রেলিক কখনো স্কেচ।

তুমি হেমন্তের মায়া জড়ানো বাতাস
বেদনার সুর মিলিয়ে দাও
দুচোখে আভা জ্বালিয়ে দাও
আমি পুড়েপুড়ে মোম হয়ে যাই।


৪.
সুরমূর্ছনা

তোমার দেহসৌষ্ঠবে
আঁকা কাব্যগাথা
ভেতরে ভেতরে সংগীত।

তুমি পাষাণ হলেও
পাথর থাকোনি
প্রেমের স্পর্শে
হয়ে উঠেছো সুরমূর্ছনা।


৫.
শিশিরের শব্দ

মনের ভেতর এখন শিশির পড়ার শব্দ
পাতা ঝরার পর বসন্ত ফিরে এলে
ভালোবাসার কোমায় চলে যাব
তারপর ছেঁড়াখোঁড়া পাতায় লিখে যাব প্রেম।


৬.
ঘুঙ্ঘুর নাচে

রাগলে টেবিল থেকে নামিয়ে
পায়ের নিচে ভাঙো গ্লাস
কাচের টুকরোগুলো নূপুর হয়।

ঘুঙ্ঘুরের তালে তালে নতুন গ্লাসে
ছলকে ওঠে জল।


৭.
প্রেমেরজ্বর

বহুকাল তুমি আমাকে ছুঁয়েছ আমিও
পাথরের নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে উঠেছে মমি
মেঘের ইঙ্গিতে খুলে দিয়েছ শব্দকোষ।

বৃষ্টির প্রণয়সম্ভাসনে প্রেমের জ্বর
প্রলোভনের দ্রাঘিমায় পাপস্খলন।


৮.
বিদ্যুৎ চমকাও

যুগে যুগে তোমার জ্যামিতিক ত্রিকোণ মেপেছে পুরুষ
এঁকে রেখেছে ইলোরা অজন্তার বিদর্ভ
নগরীতে।

আজও তুমি ভিজে শাড়ির আড়ালে বিদ্যুৎ
আমি মাপি সভ্যতার ত্রিকোনোমিতি।


৯.
বৃষ্টিভেজা দুপুর

বৃষ্টিভেজা দুপুরে
তুমি খুব ছুঁয়ে দিচ্ছ
আমি দরজা খুলে
ঠোঁটে নিচ্ছি কুয়াশাভেজা।

তুমি দারজিলিং খুলছো
নাভিপ্রকল্পে ফোঁটা ফোঁটা নাচছে ঢেউ
অলিন্দ রং পাল্টায় বাহিরে অন্দরে
আমাদের পাথুরে কাঞ্চনজঙ্ঘায় আগুন লেগেছে।

ইমতিয়াজ আহমেদ
তুমি ফিরে যাও বাবুই

১.
শিকারির কার্তুজ খাওয়া যে পাখি মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ডানা মেলে দেয়,
আকাশে সে পাখি যোদ্ধা!

২.
খিলক্ষেত ফুটওভারব্রিজটার ওপর গ্রাম থেকে আসা একটা ছেলে বাবুই পাখি,
এই শহরের ছিপছিপে একটা মেয়ে বাবুই পাখির সাথে কথা বলছিল...

গ্রামের পাখি: এই যে শুনছেন?
শহরের পাখি: জি বলুন, কী বলতে চান বলেন?

গ্রামের পাখি: না, তেমন কিছু না—তবে কিছু একটা বলবার জন্যই এত দূর এসেছিলাম...

শহরের পাখি: বলুন তবে আমি শুনছি!

গ্রামের পাখি: সময় কম, আমাকে আবার ফিরতে হবে। আচ্ছা আপনার শহরের ঘরগুলোতে কোনো ভেন্টিলেটর নেই কেন? আপনি আকাশ দেখেন কী করে? এই সব বড় বড় প্রাচীরের পাখিরা আপনার ভাষা বোঝে?

শহরের পাখি: মুখে তো একগাদা খড়কুটো নিয়ে সারাক্ষণ ঘুরে টইটই করে উড়ে বেড়ান, বলি আপনার ঘর আছে?

গ্রামের পাখি: বারে, আমার তো কুঁড়েঘর, আমি তালপাতায় ঘর বাঁধি, যাযাবরের মতো আজ এগাছ তো কাল ওগাছ, ঘরে বসে খোলা হাওয়ায় দুলতে দুলতে আকাশ দেখি, বৃষ্টি এলে ভিজেও যাই একাকী।

শহরের পাখি: আপনি একটা পাগল। আমি গেলাম, আপনার ভাড়ামি এই শহরে চলে না মশাই।

গ্রামের পাখি: আরে আরে শুনুন।
শহরের পাখি: কী?
শহরের পাখি: এই শীতে আমাদের গ্রামে যাবেন না?

শহরের পাখি: নিশ্চই, তবে অন্য কোনো গ্রামে, অন্য কোনো এলাকায়, আপনার পাগলের দেশে না মশাই...আর এত কিছু মনে রেখেছেন আপনি? ও বাবা!

গ্রামের পাখি: আমি তো তালপাতার বাঁশি বাজাই, কখন আপনি মেঘ হন আবার কখন আপনি নীল আকাশ...মনে থাকে সব আমার।

শহরের পাখি: এই রে, বৃষ্টি নামবে মনে হয়, আপনি মনে করতে থাকুন আমি চলি—
আ হে, তুমি ফিরে যাও বাবুই, এই শহরে পাখি থাকে না; থাকে পাখিদের মৃত আত্মারা!
আমিও...

শহরের পাখিটা ফুড়ুত করে উড়ে গেল এটা বলেই, আকাশটা গলতে শুরু করল টিপটিপ করে।
নাগরিক বৃষ্টিতে গ্রামের পাখিটা একা ভিজে ভিজে ফিরে গেল সারাটা ভেজা আকাশপথ...
ততক্ষণ আবার রোদ উঠে গেছে আকাশে।