করোনার দিনে

জুয়েল মাজহার

করোনাগহন দিনের পদ্য 

সঙ্গনিরোধ। করোনার দিনে
ভুসুকু-জুয়েলু ঘরে একা বসে
করছে রচনা এই নব পদ 

তব নাম, সখা, তবু করি জপ
এই নব গীতে; কম্প্র অধরে 

আজকে সকল রজ্জুই সাপ!
পরশন-রতি, স্পর্শই পাপ। 

ত্র্যহস্পর্শেও ভয়ের চমক
দেহগাছ টলোমলো 

সে গাছে এখন ফুটতে চাইছে
করোনার ফুল। ইনভিজিবল 

তিতিক্ষু মন। ধমকাই কাকে?
ছুঁইনে গোলাপও দ্বিধায়, তরাসে 

—চুমু ও অধর যোজনান্তর;—দূরে! 

কারুময় এক সোনার কফিনে,
একটি বিয়োগ চিহ্নের মতো, 

তুমি আর আমি শুইয়ে রাখছি—
নিজেরই শিথিল শরীরপদ্ম 

চিরকুটে আজ টুকে রাখি সব
নিজ নাম লিখি এপিটাফে নিজে; 

যদি কেউ পড়ে মায়ায়, লুকিয়ে
করোনাগহন দিনের পদ্য! 

সকাতরে সখা বলছে সখীরে:
‘ভুলো না আমায়। রাখিও স্মরণে!’

টোকন ঠাকুর

করোনার দিনগুলিতে প্রেম ও স্বাধীনতা

আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ না
আমিও তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না 

আমাকে তুমি ছুঁতে পারছ না
আমিও পারছি না তোমাকে ছুঁতে

 আমার হাত, হাতের আঙুল যেন না ছোঁয়
আমার ঠোঁট, নাক, চোখ
 
আমাকে তুমি বুকের মধ্যে নিতে পারছ না
সে তো আমিও পারছি না 

শুধু ঝিরিঝিরি ইচ্ছেটা বয়ে যাচ্ছে
তুমুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চলে যাচ্ছে
অক্টোপাসের মতো সময় 

দরজা বন্ধ করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছি
হোম কোয়ারেন্টিন মানে কী?
জানলা বন্ধ করে আইসোলেশন তৈরি হচ্ছে
আস্তে আস্তে লকডাউন হচ্ছে আমাদের পৃথিবী
এসব কথার মানে কী, অনুভূতির মা?

 দ্যাখো, আমার মনের মধ্যে প্রবহমান নদী
নদীর নামটি ভালোবাসা
তুমি কিছুতেই ঝাঁপ দিতে পারছ না
সাঁতার কাটতে পারছ না 

ঝিরিঝিরি ইচ্ছেটা বা বিরিশিরি যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
চুপচাপ চলে যাচ্ছে
বসন্তে গাছের পাতা টুপটাপ ঝরে পড়ছে, উড়ে যাচ্ছে
এ সময় আমাকে স্বাধীনতার কবিতা লিখতে বলো, কীভাবে?