'এখন আরও বেশি কল্পকাহিনি পড়ুন'

জিলিয়ান তামাকি
জিলিয়ান তামাকি
বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ মহামারির এই কঠিন দিনগুলোয় নিজের পাঠাভ্যাস, প্রিয় লেখক, প্রিয় বইসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। আমেরিকান এ অর্থনীতিবিদ ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তার বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে আছে: গ্লোবালাইজেশন আ্যন্ড ইটস ডিসকনটেন্টস; পিপল, পাওয়ারস অ্যান্ড প্রফিট, মেকিং গ্লোবালাইজেশন ওয়ার্ক, গ্রেট ডিভাইড।

আপনার নাইটস্ট্যান্ডে কী কী বই আছে?

অন্য সবার মতোই নাইটস্ট্যান্ডে রয়েছে একটি বিশাল বইয়ের স্তূপ, যেটা পড়ে শেষ করার আকাঙ্ক্ষা রাখি আমি। আমার বউ অল্প কিছুদিন আগেই আমার জন্য এই বিশাল নাইটস্ট্যান্ডটি কিনে এনেছে, যাতে আমি বই রাখার জন্য বেশি জায়গা পাই। এই মুহূর্তে আমার কাছে আছে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘আ মুভেবল ফিস্ট’, যা আমাকে প্যারিসের কথা মনে করিয়ে দেয়; শিক্ষকতা করতে গিয়ে প্যারিসের প্রেমে পড়েছিলাম আমি। আরও আছে ‘দ্য র‍্যাটলাইন’। লেখক ফিলিপ স্যান্ডস আমার স্ত্রীর বোন জামাই; সে নিজেই আমাকে এর একটি কপি পাঠিয়েছে। আরও আছে জিল লেপোরের ‘দিজ ট্রুথস’ এবং ইভান ক্রাস্তেভ ও স্টিফেন হোমসের ‘দ্য লাইট দ্যাট ফেইল্ড’; এই বই দুটো রেখেছি, কারণ, যেখানেই যাই, সেখানেই এদেরকে নিয়ে মানুষ কথা বলছে। ইয়ান ম্যাকওয়ানের ‘দ্য ককরোচ’-ও আছে। কাফকার স্টাইলে লেখা এই বইটি আমার ভালো লাগবে আশা করছি। এ বইয়ে একটি তেলাপোকা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছে। আরেকটি বই, যেটি আমার নাইটস্ট্যান্ডে ছিল, কিন্তু আমি পড়ে ফেলেছি, সেটি হলো হানা লিলিথ আসাদির লেখা ‘বিউটিফুল সনোরা’। এই উপন্যাসটি আরিজোনা মরুভূমি, নিউইয়র্ক শহর এবং একটি তরুণীর বয়ঃসন্ধিকালের কাহিনি নিয়ে লেখা। মেয়েটির বাবা প্যালেস্টাইনের এবং মা ইসরায়েলের; দুজনই ইহুদি ধর্মাবলম্বী।

আপনার সর্বশেষ পড়া সেরা বইটির নাম কী?

এম জি ভাসাঞ্জির লেখা ‘দ্য ইন-বিটুইন ওয়ার্ল্ড অব ভিক্রাম লাল’, যেখানে একজন কানাডায় পলাতক দুর্নীতিবাজ সাবেক চাকুরে তার আগের জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন, এবং একই সঙ্গে লিখেছেন কেনিয়ার স্বাধীনতাসংগ্রামের কথা। এই বইয়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনার একটি হলো তার যৌবনের প্রেম-ভালোবাসা। আরও আছে দার এস সালামের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিকথা। বইটি আমার জন্য বিশেষভাবে আরামদায়ক পাঠ হয়েছে, কারণ আমি একসময় কেনিয়াতে থেকে কাজ করেছিলাম, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।

এমন কোনো ক্লাসিক উপন্যাস আছে, যা আপনি ইদানীং পড়েছেন, এবং প্রথমবারের মতো?

কার্ল মিলারের ‘রক অপেরা অ্যাবাউট দ্য লাইভস অব দ্য ব্রন্টেস’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ‘উদারিং হাইটস’ পড়েছি। অসমতা, যৌনতা, শ্রেণিবিভেদ নিয়ে এমন লেখা আর হয় না, যা কিনা একই সঙ্গে সেই সময়ের পারিপার্শ্বিকতাকেও সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছে।

আপনার আদর্শ পাঠ-অভিজ্ঞতার কথা বলুন (কখন, কোথায়, কী এবং কীভাবে)।

আমি যে জায়গা ভ্রমণ করছি, সেই জায়গার পটভূমিকায় লেখা বই পড়তে ভালোবাসি। আমি কার্তাহেনা, কলম্বিয়াতে গিয়েছিলাম কিছুদিন আগে, হে ফেস্টিভালে। তখন আমার এক বন্ধু আমাদের বলল গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মারকেসের লেখা ‘অব লাভ অ্যান্ড আদার ডিমন্স’ পড়ার জন্য। এটি ঔপনিবেশিক কলম্বিয়ার পটভূমিকায় লেখা একটি খুবই বর্ণিল, সুপাঠ্য এবং তথ্যসমৃদ্ধ উপন্যাস। নায়িকার মৃত্যু হয়েছিল একটি মঠে, পরবর্তীকালে মাঠটিকে রূপান্তর করা হয় একটি হোটেলে। রূপান্তরিত ওই হোটেলেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ উপন্যাসের ধর্মান্ধতা, লাম্পট্য, নিষ্পেষণ, ভালোবাসা—এই চরম আবেগগুলো ছিল অবিস্মরণীয়। আমি পড়া থামাতে পারছিলাম না।

আমরা প্রায় প্রতিবছর জোহানেসবার্গে যাই, আর শেষবার যখন গিয়েছিলাম, তখন আমি পড়েছি নিগ এমলংগোর লেখা ‘ডগ ইট ডগ’, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদী শাসন-পরবর্তী সময়ে একজন যুবকের উইটওয়াটারসর‍্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার কাহিনি। সে একজন খলনায়ক। বইটিতে পরিহাস ও হাস্যরসের সুচারু ব্যবহার রয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে বইটি দুঃখেরও বটে। আমি বেশ কয়েকজনকে বইটি ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে দিয়েছি।

আমরা নভেম্বরে মস্কো গিয়েছিলাম, এবং ঠিক আমার কল্পনার মতোই জায়গাটি চাকচিক্যময় এবং একই সঙ্গে গোলমেলে। আমি সঙ্গে কোন ফোনো কিংবা ল্যাপটপ আনিনি, বরং কিথ গেস্যেনের লেখা ‘আ টেরিবল কান্ট্রি’ নামের বইটির পেপারব্যাক এডিশন এনেছিলাম, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে একজন সংগ্রামরত শিক্ষাবিদ কীভাবে দেশে ফিরে আসে তার দাদির দেখভাল করার উদ্দেশ্যে। এই বইটি মস্কো জীবনের বিচিত্র এবং ভয়াবহ অন্তঃপ্রবাহের বিস্তারিত ব্যাখা দেয়।   

আপনার কোন প্রিয় বইটির কথা কেউ জানে না?

আমি নিশ্চিত আমার শোনা যেকোনো বইয়ের কথা অন্য কেউ না কেউ কোনো না কোনো জায়গায় শুনেছে—নতুবা আমি কীভাবে বইটির ব্যাপারে জানতে পারলাম? তবে আমার প্রিয় কিছু বই আছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা জনপ্রিয় নয়, অন্যান্য জায়গায় খুবই সমাদৃত। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ২০১৫ সালে প্রকাশিত ভিভেক শানভাগের লেখা ‘ঘাচার, ঘোচের’‘; এই বইয়ে রয়েছে একটি শক্তিশালী নারীবাদী বক্তব্য। এটি একটি উপন্যাসিকা, যেখানে বলা হয়েছে একটি দক্ষিণ ভারতীয় পরিবার কীভাবে শারীরিক হিংস্রতার শিকার হয়। আর বইয়ের শেষাংশে রয়েছে একটি অত্যাশ্চর্য টুইস্ট।

ওয়ালেস স্টেগনার হচ্ছেন আরেকজন লেখক, যিনি কিনা আমার প্রজন্মের কাছে সুপরিচিত হলেও তরুণ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে অতটা পরিচিত নন। আমি ডিসেম্বরে স্টেগনারের ‘ক্রসিং টু সেফটি’ নামের ক্ল্যাসিক বইটি পড়েছি, যেখানে তিনি তার শিক্ষকজীবন, বন্ধুত্ব এবং নৈতিকতা নিয়ে লিখেছেন। এই বইয়ে চার বন্ধু উইসকনসিনে পড়ানো শুরু করার স্মৃতিচারণা করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে তাদের চাকুরি পাকা করার প্রবল প্রচেষ্টা এবং বন্ধুত্বের শুরুর দিকের কথাগুলো। বই শেষ হয় কয়েক দশক পরের ঘটনার বর্ণনায়।

এখন লেখেন—এ রকম কোন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সমালোচক, সাংবাদিক ও কবিদের লেখা পড়ে আপনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন? 

অমিতাভ ঘোষ, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি দায়বদ্ধতা সহকারে লেখেন এবং একই সঙ্গে তাঁর ইতিহাস নিয়ে অসাধারণ লেখাগুলোও আমাকে টানে। সুকেতু মেহতা তার সর্বশেষ বইটি লিখেছিলেন অভিবাসন নিয়ে, ‘দিস ল্যান্ড ইজ আওয়ার ল্যান্ড’, যা এক কথায় অসাধারণ। সাংবাদিক রানা ফুরুহার এবং আমার চিন্তাধারা অনেক বিষয়েই মিলে যায়, যেমন আমরা দুজনই কিছু নতুন ডিজিটাল ফিল্ম (‘ডোন্ট বি ইভেল: হাউ বিগ টেক বিট্রেইড ইটস ফাউন্ডিং প্রিন্সিপালস—অ্যান্ড অল অব আস’) থেকে বিচ্ছুরিত বিপদগুলো নিয়ে বিচলিত। আমার শুষ্ক, ব্যবচ্ছেদমূলক কাজের চেয়ে পিটার এস গুডম্যানের ‘পাস্ট ডিউ: দ্য এন্ড অব ইজি মানি অ্যান্ড দ্য রিনিউয়াল অব দ্য আমেরিকান ইকোনোমি’র মতো বইগুলো আমাদের অর্থনীতির এবং সমাজের অকেজো অবস্থাকে অনেক ভালো করে ব্যাখা করতে পারে। একইভাবে যারা গ্রেট ডিপ্রেশান কিংবা মধ্য ১৯ শতকের ব্রিটেন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের আমি স্টেইনব্যাক কিংবা ডিকেন্সের দ্বারস্থ হতে উৎসাহিত করব।  

থিয়েটারের ক্ষেত্রে গ্রেগ কোটিসের ‘ইউরিনটাউন’ ছিল আমার দেখা অন্যতম সেরা মঞ্চনাটক, যা আমি দুই বা তিনবার দেখেছি। এ ছাড়া রয়েছে গ্রেগ পিয়ার্সের ‘কার্ডিনাল’, যেখানে শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে একটি শহরের গল্প বলা হয়েছে, যে শহর নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার চেষ্টা করে নিজেকেই লাল রঙে রাঙিয়ে। আমি ইন্ডিয়ানা স্টেইটের গ্যারি শহরে বড় হয়েছি, তাই আমি এ বইয়ে নিজের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছি। আমরা সাংবাদিক রক্ষা কমিটির সমর্থক এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ হই মারিয়া তেরেসা রন্দেরোস (কলম্বিয়া), গিয়ানিন্না সেগনিনি (কোস্তারিকা থেকে আগত, এবং বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মী), দক্ষিণ আফ্রিকার ফেরিয়াল হাফফাজি, মুসিকিলু মজিদ (নাইজেরিয়া) এবং ফিলিপাইনের র‍্যাপ্লারের সাংবাদিকতার ও মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ়সংকল্পে।

কলাম্বিয়ার প্রাক্তন ছাত্র এবং নাগরিক সাংবাদিক অমোইয়েলে সওরে নাইজেরিয়াতে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন, কিন্তু একটি বিতর্কিত টুইট দেওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এখন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, এবং আমরা সেটা পাচ্ছি বিভিন্ন মানবহিতকর তহবিল প্রতিষ্ঠান, যেমন ইন্টারন্যাশনাল কনসরটিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস, প্রোপাব্লিকা, দ্য মারশাল প্রজেক্ট, ডেইলি ম্যাভরিক ইত্যাদির কারণে। 

অর্থনীতি বিষয়ে ভালো লেখেন কারা এখন? আর অর্থনীতিবিদদের মধ্যেই বা কারা  ভালো লিখছেন?

সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু ভালো অর্থনীতিবিদকে দেখা গেছে একটা কোনো জনপ্রিয় বই রচনার চেষ্টা করতে, যার মাধ্যমে তিনি তার চিন্তাগুলোকে একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে ছড়িয়ে দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন; এবং আশ্চর্যজনকভাবে তাঁদের অনেকেই একচিলতের চেয়ে সামান্য বেশি সাফল্য দেখাতে পেরেছেন।  গত বারোটা মাস বেশ সমৃদ্ধ ছিল টমাস ফিলিপ্পোনের ‘দ্য গ্রেট রিভার্সাল: হাউ আমেরিকা গেইভ আপ অন ফ্রি মার্কেটস’, ইমানুয়েল সেজ এবং গাব্রিয়েল জাকম্যানের ‘দ্য ট্রায়াম্প অব ইনজাস্টিস: হাউ দ্য রিচ ডজ ট্যাক্সেস অ্যান্ড হাউ টু মেইক দেম পে’, অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলোর (গত বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী) ‘গুড ইকোনমিকস ফর হার্ড টাইমস’এবং টমাস পিকেটির ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার ‘ক্যাপিটাল অ্যান্ড আইডিওলজি’ (আমি এটা বলছি ঈর্ষার সঙ্গে: আমার সম্পাদক আমাকে কখনোই এত বড় লেখা ছাপাতে দিত না, আর এখন আমার মনে পড়ছে আমার জনপ্রিয় হওয়া প্রথম বই ‘গ্লোবালাইজেশান অ্যান্ড ইটস ডিসকন্টেন্টস’লেখার সময়টার কথা, পরিতাপের সঙ্গে স্মরণ করছি কাটিং রুমে পড়ে থাকা মুক্তোর মত লেখাংশগুলোর কথা, যা বাদ গিয়ে মাত্র ২৮২ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল।

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক বিধ্বংসী কাজ হয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে বেশ ভালো এবং জনপ্রিয় কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্টিন উলফের ‘দ্য শিফটস অ্যান্ড দ্য শকস: হোয়াট উই হ্যাভ লার্নডঅ্যান্ড হ্যাভ স্টিল টু লার্নফ্রম দ্য ফাইনানশিয়াল ক্রাইসিস’, আদায়ার টার্নারের ‘বিটুইন ডেট অ্যান্ড দ্যা ডেভিল: মানি, ক্রেডিট অ্যান্ড ফিক্সিং গ্লোবাল ফাইনান্স’, এবং আমার সহকর্মী অ্যাডাম টুজের ‘ক্র্যাশড: হাউ আ ডিকেড অব ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসেস চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’।

আপনি নিজে একটা বই লেখার সময় অন্য কী বই পড়েন এবং কী ধরনের পাঠ এড়িয়ে চলেন?

আমি এমন একটি বই খুঁজি, যা সুলিখিত (বিন্যাসগত দিক দিয়ে) এবং কল্পকাহিনি নয়; এবং আমার মনে আশা থাকে যেকোনোভাবে ভাষার সুন্দর ব্যবহার এবং ভালো করে বেছে নেওয়া বাক্যাংশগুলো আমার লেখনীতে প্রবেশ করবে। কিছু ননফিকশন লেখক শুধু সহজবোধ্যতার দিকে নজর দেয়; কিন্তু আমি এর চেয়ে বেশি কিছু খুঁজে থাকি—ভাবি যে অন্তত এমন কিছু মুহূর্ত থাকবে লেখায়, যখন পাঠক ভাববে যে এটা আসলেই একটি সুপাঠ্য লেখা ছিল, এবং আরও ভালো হয় যদি তাদের আমি উদ্বুদ্ধ করতে পারি আমি যেসব সমস্যা নিয়ে লিখেছি, সেগুলোর কোনো সমাধান বের করার ব্যাপারে। 

আপনি সব ধরনের বই পড়েন?

পড়ার ক্ষেত্রে আমার কোনো গিল্টি প্লেজার নেই। আমি শীতল রাত্রি, একটি গোয়েন্দা উপন্যাস এবং একটি চকলেট বারের চিন্তা খুবই ভালোবাসি, কিন্তু এ ধরনের কাজে সময় দেওয়ার বেলায় আমি একটু বেশিই গোঁড়া। 

কখনো কি কোনো বইয়ের কারণে আপনি অন্য কোনো মানুষের কাছে গিয়েছেন, বা কেউ আপনার কাছাকাছি এসেছেন?

কৌশিক বসুর অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ-সংক্রান্ত স্মৃতিচারণা, ‘অ্যান ইকোনমিস্ট ইন দ্য রিয়েল ওয়ার্ল্ড’। আমি কলকাতাকে খুবই ভালোবাসি, আর এই বইটি আমাকে উৎসাহিত করেছিল বসু সাহেবের জীবন সম্পর্কে আরও জানতে এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার মিল ও অমিলগুলো সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পেতে। আমি ছিলাম প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের উপদেষ্টা, আর তিনি ছিলেন ভারতীয় সরকারের। আমি আবিষ্কার করলাম যে তিনি খুবই ভালো লেখেন; আমি সাধারণত আমার গোত্রের (অর্থনীতিবিদ) সদস্যদের চিত্তাকর্ষক লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দিই না।

সাম্প্রতিককালে আপনি বই পড়ে সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক কোন জিনিসটি শিখেছেন?

স্টিভ করনাকির লেখা ‘দ্য রেড অ্যান্ড দ্য ব্লু: দ্য নাইন্টিন নাইন্টিজ অ্যান্ড দ্য বার্থ অব পলিটিকাল ট্রাইবালিজম’ বইটি আমাকে ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসে ব্যয়কৃত সময়টাকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে, আর তাঁর নির্বাচনের পটভূমিকা আরও ভালো করে বুঝতে শিখিয়েছে। এটি আমাকে আরও মনে করিয়ে দিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক স্মৃতিগুলোর ক্ষণস্থায়িত্ব, বিশেষ করে রাজনীতির উত্থান-পতনের ব্যাপারে। 

আপনার মতে কোন বিষয়গুলো নিয়ে লেখকদের আরও বেশি করে লেখা উচিত?

ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার ঠিক পরের সময়টায় কিছু সংগ্রামরত গোত্রকে নিয়ে বিভিন্ন বই লেখা হয়েছিল, যেমন এমি গোল্ডস্টেইনের ‘জেইন্সভিল: অ্যান আমেরিকান স্টোরি’,  অথবা আর্লি হচচাইল্ডের ‘স্ট্রেঞ্জারস ইন দেয়ার ওউন ল্যান্ড’। কিন্তু সামাজিক রূপান্তর একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব গাঠনিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা গোটা বিশ্বেই বিরাজমান। আমার ভালো লাগত যদি আরও বই বের হতো, যেগুলো সাম্প্রতিক ঘটনাবলির গভীর, বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ নিয়ে আসত, এবং এ থেকে থেকে পাওয়া জ্ঞান আমরা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কিংবা অন্যান্য দেশে ঘটা অনুরূপ ঘটনাগুলোকেও ব্যাখা করার কাজে ব্যবহার করতে পারতাম। 

সাহিত্যের কোন অংশগুলো আপনাকে বেশি নাড়া দেয়?

সংগ্রামের গল্প, অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা—কিংবা শুধুই প্রাণবন্ত এবং হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা। ব্রায়ান স্টিভেনসনের ‘জাস্ট মার্সি’ একটি ভালো উদাহরণ।

কোন ধারার বইগুলো বেশি উপভোগ করেন? কোনগুলো এড়িয়ে চলেন?

আমি কখনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির ধারেকাছেও ভিড়ি না। কেন, জানি না। শুধু এড়িয়ে যাই। সম্ভবত আমি মনে করি যে আমাদের নিজেদের পৃথিবীটাকে বোঝা এবং এর সমস্যাগুলো মেরামত করাই যথেষ্ঠ কঠিন কাজ; নতুন আরেকটি পৃথিবী তৈরি করাকে আমার কাছে পলায়নপর মানসিকতার পরিচায়ক বলে মনে হয়।

আপনার বইগুলো কীভাবে গুছিয়ে রাখেন?

বিষয়ভিত্তিকভাবে। আমার স্ত্রী এ কাজটি সুচারুভাবে করে, তার নিজের বইগুলোকে অঞ্চলভেদে আলাদা করে রাখে, এবং লেখকের শেষ নাম অনুযায়ী বর্ণানুক্রমে সাজিয়ে রাখে। কিন্তু আমি বড় অলস, এত ঝামেলায় যাই না। আমি শুধু বইয়ের স্তূপ বানিয়ে রাখি, এবং কখনোই দরকারের সময় প্রয়োজনীয় বইগুলো খুঁজে পাই না। কিন্তু এভাবে এলোমেলোভাবে রাখার কারণে আমি একটি বই খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া অন্য কোনো পুরোনো বন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ পাই।  

আপনার শেলফে কোন বই খুঁজে পেয়ে মানুষ আশ্চর্য হতে পারে?

মিগেল কোভাররাবিয়াসের বালিসংক্রান্ত চিত্রাংকনের বই এবং রোমান ভিশনিয়াকের তোলা ওয়ারশ বস্তির ফটোসমূহ। 

উপহার হিসেবে পাওয়া কোন বইটি আপনার দৃষ্টিতে সেরা?

ট্রাম্পের সময়কালে আঁকা কার্টুন নিয়ে সম্প্রতি প্যাট্রিক চাপ্পাত্তে একটি বই প্রকাশ করেছেন, এবং আমাকে একটি অটোগ্রাফসমৃদ্ধ কপি উপহার দিয়েছেন। আরেকবার যখন আটলান্টার কার্টার সেন্টারে গিয়েছিলাম, তখন জিমি কার্টার আমাকে অটোগ্রাফসহ তাঁর একটি বই দিয়েছিলেন, যার নাম ছিল ‘কিপিং ফেইথ: মেমোয়ারস অব আ প্রেসিডেন্ট’। আর আমি অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের কাউন্সিলের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় প্রেসিডেন্টের অটোগ্রাফসহ বার্ষিক অর্থনৈতিক রিপোর্টের কপি পেয়েছি অনেকবারই (যেগুলো আসলে প্রেসিডেন্ট নিজে লেখেননি); কিন্তু তা স্বাভাবিক পাঠের জন্য ছিল না।

ছোটবেলায় আপনি কোন ধরনের পাঠক ছিলেন? কোন শিশুতোষ বই এবং লেখক আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন?

আমি ডিকেন্সের একজন একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম। সে সময় আমি জানতাম না কেন—আর আমি কখনো এটা নিয়ে বেশি চিন্তাও করিনি, শুধু মনে আছে যে আমি তাঁর লেখার ভাষা এবং গল্পগুলো পছন্দ করতাম, আর সেগুলোর লম্বা দৈর্ঘ্য আমাকে কখনোই বিচলিত করেনি (সম্ভবত তখন আমার হাতে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি সময় ছিল, যা আমাকে একধরনের সাফল্যের অনুভূতি এনে দিয়েছিল বইগুলো পড়তে পারায়। কিন্তু এখন চিন্তা করলে মনে হয় যে এটা খুব একটা বিচিত্র নয় যে যার আজীবনের সাধনা হচ্ছে অসমতা দূরীকরণ নিয়ে, তার কাছে ডিকেন্সের বর্ণিত ১৯ শতকের ইংল্যান্ডের কাহিনি খুবই উত্তেজনাকর হবে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাঠাভ্যাস কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

যখন আমি তরুণ ছিলাম, তখন কিছু ক্ল্যাসিক বই পড়তাম। আমি বিশেষ করে রাশিয়ান লেখকদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলাম, এবং অর্থনীতির ওপর অনেক বই পড়েছিলাম। আমার স্ত্রী, যে ছিল বই প্রকাশকের কন্যা এবং নাতনি, আমাকে সারা বিশ্বের কল্পকাহিনির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সাধারণত আমার যখন কোনো বইয়ের দরকার হয়, আমি তাকে বলি কিছু একটা নিয়ে আসতে। ফলাফল হিসেবে, আমি অনেক ব্যাপ্তিসম্পন্ন পাঠকে পরিণত হয়েছি। সে আমাকে প্রায়ই চীন দেশের জনগণদের জীবন নিয়ে সাংবাদিকদের লেখা বই এনে দেয়। সর্বশেষ বইটি ছিল একজন সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা, যে কিনা সাংহাই শহর ঘুরে বেড়াত ট্যাক্সিচালক হিসেবে—সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে জানতে। বইটির নাম ‘দ্য সাংহাই ফ্রি ট্যাক্সি: জার্নিস উইথ দ্য হাসলারস অ্যান্ড রেবেলস অব দ্য নিউ চায়না’; লিখেছেন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাংফিট। একই ধারায় লেখা লেসলি টি চ্যাংয়ের ‘ফ্যাক্টরি গার্লস’ এবং রব স্কিমিটজের লেখা ‘স্ট্রিট অব ইটার্নাল হ্যাপিনেস’ বইগুলোও খুব প্রিয়।

আপনার ওপর কোন বইটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে?

অলিভার ওয়েন্ডেল হোমসের লেখা ‘ওয়ান হর্স শেই’ কবিতাটি আমার সঙ্গে থেকেছে আমার সমগ্র জীবন। কবিতাটি বার্ধক্য নিয়ে লেখা, এবং ছোটবেলায়, সারা জীবন কাজ করার পর একটি ঘোড়ার ধীরে ধীরে ক্ষয় হবার ছবিটা আমার মনে বেশ ভালো রকমের দাগ কেটেছিল। আমি সব সময়ই ভাবতাম, এভাবেই কি আমার জীবনাবসান হবে?

সর্বশেষ কোন বইটি আপনার পরিবারের কোনো সদস্যকে পড়তে বলেছেন?

আলফ্রেড স্টেইগলিজের লেখা ‘দ্য ফিলিজ রোজ বায়োগ্রাফি’। আমাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তা নেই, আর আমাদের নামের বানানও ভিন্ন, কিন্তু আমি তার ফটোগ্রাফি ভালোবাসি এবং গোপনে ভাবি যে আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা থাকলে খুব একটা খারাপ হতো না।

আপনি সাহিত্যসংক্রান্ত একটি নৈশভোজের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। কোন তিনজন লেখক, জীবিত কিংবা মৃত, দাওয়াত পেতেন?

দীক্ষা বসু, চিমামান্দা এনগোজি আদিচি, কিরন এবং আনিতা দেশাই

আপনার পরবর্তী পাঠ পরিকল্পনা কী?

সাংবাদিক রবিন মেরেডিথ হংকং থেকে ফিরে এসে আমাদের সবাইকে একটি মাসিক পাঠচক্রে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমরা এই মাসে চিনুয়া আচেবের ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ আবার পড়ছি, আর আগামী মাসে এবং এর পরের মাসে আমরা ক্লড ম্যাককের বই ‘রোমান্স ইন মারসেই’ পড়ব, যা আমরা সম্প্রতি নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। 

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস