জ্যৈষ্ঠ-জাতকের গল্প

অনুগত মৌসুমে
সে এক বিদ্রোহের ঋতু
ঋতু তবে মানে না রীতি
রীতিকে চুরমার করে
গড়ে নতুন নীতি।
বাণী তাঁর আগুনে গড়া
বাঁশি তাঁর বিষে ভরা
মলিন মালঞ্চে
তিনি এক দীপ্ত দোলনচাঁপা।
চুরুলিয়া থেকে কত দূর চিরকাল?
তিনি সেই চিরকালের সুর-সমুদ্দুর
ঘৃণায় সুপ্ত সমকালে যে ভাঙায়
প্রেমসিন্ধুর পাষাণ-ঘুম।
কুমিল্লা থেকে কত দূর দৌলতপুর
ময়মনসিংহ থেকে কত দূর দরিরামপুর
ঢাকা থেকে কত দূর কলকাতা
করাচি থেকে কত দূর চাটগাঁ
তত দূর নজরুল, নজরুল।
রুটির দোকান থেকে
মহাযুদ্ধের ময়দান
লেনিন থেকে পাশা কামাল
শান্ত বাংলা কবিতায়
লেফট রাইট লেফট।
গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে
নার্গিস আসার খানম
আজও পথ চেয়ে আছে,
বনগ্রাম লেন থেকে
গানের খাতা নিয়ে
রানু সোম সুদূরে মিলায়ে গেছে,
কবরে শুয়ে শ্রান্ত নজরুল দেখে
ফজিলতুন্নেসাও আজ
গণিতে ঘুমায়ে,
প্রমীলার প্রতীক্ষা
ফুরোয় না কিছুতে
এখনো মাধবীলতা দোলে পৃথিবীতে
তবু অভিমানী নজরুল
ফিরে না আসে।
ভিক্ষা দাও ভিক্ষা দাও ভিক্ষা
প্রেমভিক্ষা, রসভিক্ষা
আনন্দভিক্ষা, বিদ্রোহভিক্ষা
প্রেমঘন সুন্দর, রসঘন সুন্দর, আনন্দঘন সুন্দর
তবেই না বিদ্রোহসুন্দর।
ভাগের মানুষে ভরে গেছে চরাচর
নজরুল মানে অভেদসুন্দর।
এ জীবন অনন্ত আশ্বিন
সে জলে ভেসে গেছে
আমার সমূহ শিউলিমালা
রিক্ত হয়েও তার
স্রোতস্বিনী সুবাসে
ওই দ্যাখো রাজবেশ আমার ;
ম্লান-গৈরিক।
আমিই কামার, ধীবর, কৃষক
আমিই নজরুল
শ্রমসুন্দর।
আকালের দেশে
এত অসাম্য ফলে
এত বুজরকি-মোল্লাকি চলে,
সুরহারা এই সময়ের বৃক্ষে
কী করে গানের কুসুম ধরে
প্রাণ ছাড়া কী করে কলমে
কবিতার পদ ঝলমল করে
রক্তের দোদুল ছাড়া
কী করে জন্মায়
নাচের হিন্দোল?
এই আমি নজরুল
জ্যৈষ্ঠের ঝড়
ভাদ্রে অবসিত,
বলছি তোমাদের
বিদ্রোহের কালধর্ম নেই কোনো
ওই যে দিগন্ত
সে-ও তো নক্ষত্রের
নিঃশব্দ দামামামণ্ডিত।
আজ থেকে সুতরাং
নক্ষত্রের কসমে যদি
বিদ্রোহের লোডশেডিং থামাই
তবে তুমি আমি
পৌষে বসেও আমরাই
হয়ে উঠব জ্যৈষ্ঠ-জাতক ;
নজরুল নামক
নক্ষত্রটি সংক্রামক।