শূন্যম্পর্ক

উবে যাওয়া দিগন্তের সাথে ঝাপসা আঁধার এগিয়ে আসছিল জিপসিদের কাফেলায়। হ্যাজাক বাতি আর মশাল জ্বালিয়ে মেয়েগুলো মাথায় স্কার্ফ পেচিয়ে পরস্পরের কোমরে হাত রেখে নেচে উঠল। আমি হাঁটুতে থুঁতনি গুঁজে দেখছিলাম লালচে হলুদ দৃশ্য কীভাবে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। দেখছিলাম, কীভাবে পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে দৃশ্যের দল। কীভাবে এসে ভিড় করে ফেলে আসা শৈশব, লাল ইটের রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে থাকা কালো শিশু।
এভাবে দৃশ্য জমতে থাকে দৃশ্যলোকের আলাপে।

***
ভীষণ বৃষ্টি আর তুষারঝড়ে শহরটা উনিশ শতকের সাদাকালো ছবি হয়ে গেছে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি, একদিন শহরের সব পথঘাট সাদা বরফে ছেয়ে যাবে, আর তাতে চাঁদ চমকাবে। আমি সেই অভূতপূর্ব সাদা আলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকব।
বাজারে ফলের ঝুড়ি নিয়ে যে বৃদ্ধ বসে রোজ আপেলের নাম ধরে ডাকেন, তিনি আমায় দেখে ফোকলা দাঁতে হেসে বললেন, 'মা-জি, আপনি ফিরে এসেছেন আপন শহরে!' এই শহর কি সত্যি আপন? আমি স্মিত হেসে তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া আপেলে কামড় দিলাম।

***
হেঁটে আসা ভেজা আঙুল আর নখের আবদারে ভেসে গেল সন্তুরের সুর। ভান নেই, ভঙ্গিমা নেই—এমন করজোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল তার পাঁজরের হাড়। হাড়ের ভেতরে কোনো রাত্রে ফেলে আসা মোচড়, ব্যথাময় যূথ মূর্তি। মানুষ তাঁর নিজের ভেতর আরও আরও একা হয়ে পড়ার মুহূর্তে টের পেয়ে যায়, বেঁচে থাকার ভুল তালিকা থেকে বাদ গেছে নিঃসঙ্গতা।

নুহের প্লাবনের মতো একটা প্লাবন যদি এগিয়ে আসে আমাদের মাঝে, আমাকে কোথায় ফেলে যাবে?