চৌধুরী ফাহাদ-এর কবিতা

সন্ধ্যাক্রান্তরাগ-১৩
ওম নিয়ে সারারাস্তার মিছিল আগন্তুক চোখে ঢুকে পড়ে রাতের সিন্ধুকে! তোষকের আড়কোণ জুড়ে সন্ধ্যামালতীর সুচাগ্র কাম, সাম্পান ফেলে আয়েশি বিভ্রমে মিশে যায় নামহীন হাওয়াবনে।

সেই কবে কোন ইতিহাসে এই পথ ধরে নেমেছিল ভিনদেশী উড়ান, এখনো জল-এখনো আঁচল ধরে আছে তার গান! সেই সব স্মৃতিকথায়, সেই দোচালা জলসায় নাম খোঁজে নশ্বর অধিরাজ। কবি লেখে নাই কিছু, কবি লেখে না কিছুই—ধোঁয়া ধূসর চোখে ইতিবৃত্তের নবায়ন বারতা। চৌকোনা কামরার রঙিন মলাটের পাতায় দেবে যায় জীবন! হাওরের জল রাখে নাই সে পাড় আদরের ঢল, সন্ধ্যার চোখে পুড়ে ব্যাধিহীন জ্বরে পুড়ে ভাসিয়ে দিয়েছে সুরমার বুক...

সুরমার তীরে বসে হাসন, হলুদ খামে নামে লিখে দিয়ে গেছে 'মা'-'মা' গন্ধে পাপ-পুণ্য গাহন!

কোরাস
আহত রোদের গভীরে পুরোনো আলোর মুখ শ্বাসদাহ্য হাওয়ায় ঘাম পোড়ানোর অধিক বিপন্নতার দরজা খুলে রাখে। পেছনে আভ্রষ্ট কীর্তন, পেছনে দলিত ঋণ, বিভক্ত বেহাগের আদরে ওখানে 'ঘোরগ্রস্থ বিলাপ'!
'সময়ের কুয়াশা বিদীর্ণ অপেরা'র সারগামে পুড়ে মহাকাল-মধ্যবর্তী দূরত্বে এক শাদা ঘোড়া দাঁড়িয়ে দেখছে পৃথিবীপিষ্ট মানুষের অদৃশ্য লেজে খণ্ডিত বিষাদের রংও কালো।
'বিষণ্ণ-কল্যাণ মন্ত্রাণালয়'-এর আবদ্ধ কামরায় এক আত্মবিদগ্ধ কবি ভাবছে, 'এই শহরের মানুষ হাঁটে না, রাস্তা হাঁটে'৷ অথচ রাস্তার ওপাশে কিশোরীর ক্রেতামুগ্ধ হাসিকে অতিক্রম করে প্রেমসমূহ জায়গা করে নেয় সদ্য স্থানান্তরিত হওয়া খোঁপার ঘ্রাণে। ফুলের নিজস্ব কোনো জীবন নেই জেনেও জীবনের জন্য যে পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুটপাত, সে বিষাদের রং আঁকতে গেলেই, কবির নামের পাশে বেজে উঠছে চরিত্রহীনতার হুইসেল। ঘর পালিয়ে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় উড়ু জীবন নিয়ে সাঁটলিপিকায় তবুও আঁকছে 'কবি তার কবিতার সংশয়'।
সমুদ্র মোহনায় ভাসিয়ে দেওয়া প্রেমরজ্জুর সমূহ বিষাদ নিয়ে কেউ কেউ এখনো ক্লান্তিহীন। তিলোত্তমার পথে পথে কৃষ্ণচূড়ার গানে হেঁটে যাওয়া হাতের মুঠোয় জমে উঠলেও নতুন ঘাম, সেই পুরোনো 'অবাধ্য শূন্যস্থান' বুকের ভেতর চরকা কেটে চলছে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে...
যদিও পাখিদের কোনো কাঁটাতার নেই, কাঁটাতারে বিদ্ধ কবি ভ্রাতৃসম্পর্ক ভুলে কোনো এক সীমান্তবর্তী রমণীর কাছে পার্শেল করে দেয় সংরক্ষিত সমূহ আবহ সংগীত। বাঁশি ফেটে গেলে কবি আবার ফিরে আসে ঝিমানো পাতার ছায়াতলে। যেখানে তিন শটি লাশ স্যুপ হয়ে অপেক্ষা করছে কবির পানপাত্রে। শোনেন, বন্ধুগণ—বলে উঠতেই কবির দৃশ্যপট জুড়ে নেচে ওঠে সুখন্তিলা। ঠিক তার পাশেই আর একজন ডাকহরকরা হয়ে গেয়ে চলে অমিয় বিষাদ.. 'ওহ সুসানা নাও ডোন্ট ইউ ক্রাই ফর মি, ফর আই কাম ফ্রম অ্যালাবামো উইথ ব্যাঞ্জো অন মাই নি'...

স্বদেশ
কোথাও বসে কাঁদছে একা একা
এক ফুল
জিজ্ঞেস করেনি কেউ
জল তার সরল দুঃখ
নাকি ভুল!
সাত সতেরো শূন্য
রুক্ষ-সতেজ প্রাণ
কোটি কোটি পাপড়ির দোল
এক আজব বাগান
পদতলে তার ঘুমন্ত অহংকার
পদতলে চলমান আঁধার
কোটি কোটি পাপড়ির রং
এত এত উচাটন হয়নি ব্যাকুল
কেউ জিজ্ঞেস করেনি আপন
কী তার দুঃখ
কী তার ভুল
কোথাও বসে একা একা কাঁদছে
এক মাটি ফুল...