গুলজারের লকডাউনের কবিতা

মহামারি লেগেছিল
ছুটে ঘরের দিকে পালাচ্ছিল সব মজদুর, কারিগর
মেশিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল শহরের
এই মেশিনেই তো চলত হাত–পা
নইলে জীবন তো বুনে এসেছিলাম গ্রামেই 

সেই এক–দুই একর জমি, পাঁচ একরের
ফসল তোলা আর বোনা সব তো ওখানেই
জোয়ার, ধান, মকাই, বাজরা—সব 

সেই বাঁটোয়ারা, চাচাত-মামাত ভাইয়ের সঙ্গে
সেঁচের নালা নিয়ে ঝগড়া–মারামারি,
লাঠিয়াল কখনো নিজের, কখনো ওদের 

সেই নানি, দাদি আর দাদার মামলা
বাগদান, বিয়ে, ফসলের গোলা
অনাবৃষ্টি, বন্যা, প্রতিবার আকাশ বৃষ্টি দেয় কি না–দেয়! 

মরলে সেখানে গিয়েই মরি, যেখানে জীবন,
এখানে তো শরীর টেনে এনে প্লাগ লাগিয়ে বাঁচি! 

সবাই এবার প্লাগ খুলে নিয়ে
রওনা হলো, ‘চলো, এবার বাড়ি চলো’
মরলে সেখানে গিয়েই মরি, যেখানে জীবন! 

দেশভাগ
এমনি যাত্রীদল দেখেছিলাম সাতচল্লিশ সালেও
এরা নিজ দেশগ্রামে ছুটে যাচ্ছে,
আমরা দেশে যাব বলে নিজ গ্রাম থেকে পালিয়েছিলাম 

শরণার্থী বলে দেশ আমাদের রেখেছিল
দিয়েছে আশ্রয়,
এদের থামিয়ে দেয় রাজ্যের সীমানা
বিপজ্জনক আশ্রয় দেওয়া 

আমাদের সামনে–পেছনে তখনো ছিল মৃত্যু
সে মৃত্যু ধর্ম জানতে চাইত 

আমাদের সামনে-পেছনে মৃত্যু আজও—
ধর্ম, নাম, জাত জানতে চায় না কিছুই,
হত্যা করে 

খোদাই জানে, এই ভাগ বড়
নাকি বড় ছিল ওই ভাগ।

কবিতা নিয়ে
করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের খ্যাতিমান উর্দু কবি ও গীতিকার গুলজার ‘লকডাউনের কবিতা’ নামে একটি সিরিজ লিখছেন। এ পর্যন্ত সিরিজের দুটি কবিতা লেখা হয়েছে, যেখানে বর্তমান করোনা-বাস্তবতা, মহামারির খণ্ড খণ্ড ছবি ও মৃত্যুচিন্তা একাকার হয়ে আছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে মিলে গেছে দেশভাগের বেদনাও।

প্রথম কবিতাটিতে রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হিসেবে কর্মরত শ্রমিকদের বয়ান, করোনাকালে কর্মহীন হয়ে যাঁরা হাঁটা শুরু করেছেন নিজের গ্রামের দিকে। কবির ভাষায়, এখানে—গ্রামে মৃত্যুর চেহারা শহরের চেয়ে খানিকটা সদয়।

প্রথম কবিতাটি লেখা হয়েছে ১৭ মে ২০২০। আর দ্বিতীয়টি কবি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ২৮ মে ২০২০ সকালবেলা। এ কবিতায় করোনাকাল ও দেশভাগের বেদনা হাতে হাত ধরে আছে।