আজব তো!

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

লুসি পড়ছে, ‘সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে...।’ হঠাৎ তার মনে হলো, ‘আমার মামা মানে তো মামণির ভাই। কিন্তু মামণিও কেন আমার সূয্যিমামাকে মামা ডাকে? আমার মামা আবার মামণিরও মামা!’
লুসি বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। সে বড়দের জিজ্ঞেস করে, ‘এটা কী করে হয়?’ বড়রা হেসেই উড়িয়ে দেয়। ছোট বলে ওকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। ও মনে মনে বলে, ‘দাঁড়াও, একবার বড় হই, তখন দেখো কেমন মজা, কত দুধে কত ছানা!’
এটা বছর সাতেক আগের ঘটনা। লুসি তখন ক্লাস টুতে পড়ত। এখন ও অনেকটাই বড় হয়েছে। হাইস্কুলে পড়ে। ক্লাস নাইনে। কিন্তু ওই প্রশ্নের উত্তর সে আজও পায়নি। তবে বড়রা এখন ওকে বেশ গুরুত্ব দেয়।
তাই বলে লুসি কিন্তু পাল্টে যায়নি! তার মনে এখনো অনেক রঙের প্রশ্ন পাখা মেলে ওড়াউড়ি করে। কোনোটার উত্তরের খোঁজ পায়, কোনোটার পায় না। কিন্তু প্রশ্নগুলো হারিয়ে যায় না। খোঁজ চালানোর প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
এই তো বছর তিনেক আগের কথা। লুসি তখন হাইস্কুলে পা দিয়েছে মাত্র। সিক্সে ভর্তি হয়েছে। একদিন শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্লাসে রুমি ম্যাম বললেন, ‘মা-বাবা আর টিচাররাও তোমাদের বন্ধু।’ ম্যামের কথা শুনে তো লুসির পিলে চমকে ওঠে। এত দিন পর হাইস্কুলে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে বাবা, মা, টিচার সব্বাই ওর বন্ধু হয়ে গেল! যাহ! তাহলে ওর সমবয়সী বন্ধুদের কী হবে! তারা কি ওর বন্ধুই থাকবে? নাকি ওরাও অন্য কিছু হয়ে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরও দূরে গিয়ে মরেছে। কোনো খোঁজ নেই।
সে যাকগে, আমাদের লুসি কিন্তু বরাবরই পড়ালেখায় বেশ ভালো। তবে পড়তে তার একটুও ভাল্লাগে না। ‘পড়, পড়’ বলে বাবা-মা তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। সে মাঝে মাঝে ভাবে, বিছানা থেকে লাফিয়ে ফ্লোরে পড়বে! ‘পড়া’র মতো মারাত্মক, গুরুতর, বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ একটা বিষয় কী করে এত্ত ‘এসেনশিয়াল’ হয়!
পড়ার ফলে কত্তজন আহত-নিহত হচ্ছে, সে খেয়াল কি কারোর নেই! (এই ‘পড়া’ কিন্তু পড়ে যাওয়া!) সে হোক গে, এই ‘পড়া’ আর সেই ‘পড়া’র অর্থ আলাদা। উচ্চারণ-বানান অভিন্ন।
লুসির পড়া সম্পর্কে মামণির বক্তব্য, ‘লুসি অনেক পড়ে—খাট থেকে পাটিতে, পাটি থেকে মাটিতে।’
লুসির বহুবার আছাড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও পাটিতে, মাটিতে পড়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে না। কিন্তু সে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। কারণ ছোটবেলার হিস্ট্রি তার অজানা। হয়তো তখন...।
তবুও তার একটা অভিযোগ আছে। মামণি কি ‘টেন্স’ পড়েনি? কেন ‘প্রেজেন্ট টেন্স’ ব্যবহার করে?
গত সোমবার ফিজিকস ক্লাসে জামিল স্যার মৌবনিকে বলেন, ‘অপদার্থ।’ কারণ মৌবনি পদার্থ কাকে বলে বলতে পারেনি।
লুসির চোখ কপালে উঠে যায়। কেননা স্যার নিজেই শিখিয়েছেন পদার্থ কী। মৌবনির তো ওজন, আয়তন সবই আছে। তা সত্ত্বেও ফিজিকসের স্যার এটা কীভাবে বললেন!
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। গতকাল রাতে লুসি শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল। বাবা তখন বললেন, ‘এখন সবে আটটা বাজে। লুসি, তুমি শুয়ে পড়তে পারো না।’
শুয়ে পড়া মানে ঘুমাতে যাওয়া। যদিও সে বই পড়ছিল, শুয়ে পড়া আর ‘শুয়ে পড়া’র বানান-উচ্চারণ একই। অগত্যা সে টেবিল-চেয়ারে পড়তে যাওয়ার জন্য উঠল। কিন্তু তখনই বাবা বললেন, ‘তুমি টেবিলে বসে পড়ো।’
লুসি তো হাঁ হয়ে গেল। সে কেন টেবিলে বসবে?
চেয়ার তো আছেই! বাবা এ কী বলছে?
আজব তো!

নবম শ্রেণি, বালিয়াকান্দি পাইলট গালর্স হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী