‘শান্তির ধ্যান’: বিষাদ মোচনের কল্পচিত্র

শান্তির ধ্যানের মধ্যে রয়েছে একটি শান্ত ও আরামদায়ক স্থানের অনুসন্ধান, শরীর–মনকে শিথিল ও নমনীয় করার জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখা। আস্তে আস্তে মনোযোগ ভেতরের দিকে টেনে নেওয়া, ভ্রান্ত ধারণা ও সন্দেহকে পরিহার করা এবং সুন্দরের স্বপ্নে মগ্ন হওয়া। এ রকম অনুভূতিকে চিত্রায়িত করা অত্যন্ত জটিল এক সাধনার বিষয়।

১ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কেবল ছবি আঁকা জানলেই হবে না, আত্মজিজ্ঞাসা ও দেহাত্মবাদী সাধনার ধারণাও থাকতে হয়। এই উভয় গুণই আয়ত্ত করা শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পীর একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘মেডিটেশন অন পিস’ তথা ‘শান্তির ধ্যান’ দেখতে দেখতে এ ধারণাই স্পষ্ট হলো।

২ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

অসংখ্য যৌথ প্রদর্শনীতে বাপ্পীর চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে। একক প্রদর্শনী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে—স্থান পেয়েছে প্রধানত করোনাকালে আঁকা চিত্রকর্ম, সঙ্গে আছে সাম্প্রতিক কিছু কাজও। একই ধরনের জ্যামিতিক অবয়বের মধ্যে শিল্পী তৈরি করেছেন অনুশীলনলব্ধ ঘোর। সেই ঘোরের মধ্যে আবিষ্ট হতে হয়।

৩ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

প্রদর্শনীর ৪৬টি চিত্র একই ভাবের ও ধারণার। একই নকশায় ৪৬টি ভিন্ন ফ্রেম যথেষ্ট শক্তিমত্তার পরিচয়। বাহন সেই তুলি আর আঙ্গিক সেই বিন্দু, রেখা, বৃত্ত আর ক্ষেত্র। ঘুরেফিরে এই অবয়ব মোটাদাগে, কিন্তু চক্ষুস্থির করে থাকলে চিত্রের ভেতর থেকে অজস্র চিত্রের হাতছানি টের পাওয়া যায়।

৪ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কখনো মনে হয়, আরে এ তো সেই দাদিমার সুচে লহরি তোলা নকশিকাঁথা! পরক্ষণেই মোহভঙ্গ হয় নতুন কোনো ইঙ্গিতের মোহে—লোকজ থিম ধরে বাপ্পী এগিয়ে যান আধুনিক শিল্পের দিকেই। দর্শকের চিন্তাও নেয় নতুন মোড়।

৫ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

ফারহানা আফরোজ বাপ্পীর (জন্ম ১৯৭১) চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও মৃৎশিল্পের কাজে তাঁর দক্ষতা রয়েছে। তবে তাঁর কাছে মানবিক ইমোশন, কিংবা মানসিক বিন্যাস প্রস্ফুটিত হয় রং ও রেখায়। বাপ্পীর চিত্রকর্ম দেশের বিভিন্ন গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। দেশের বাইরে মুম্বাইয়ের নেহরু সেন্টার, কলকাতার শিল্পকলা একাডেমি, নেপালের পার্ক গ্যালারি প্রভৃতি স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর কাজ। নিজস্ব স্টুডিও ৬/৬ রয়েছে মোহাম্মদপুর। নিয়মিত কাজ করেন তিনি। একেবারেই শিল্পের টানে শিল্প রচনা করে চলেছেন।

৬ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে যেমন তিনি কাজে লাগিয়েছেন, আবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে যুক্ত করে সৃষ্টি করে চলেছেন নতুন নতুন বিষয় ও আঙ্গিক। চলমান প্রদর্শনীতে উচ্চকিত রঙের কাজ নেই। প্রতিটি বিন্দুর পেছনে লুকানো রয়েছে স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা, বেদনা ও বিষাদের মায়া। তাকালে মনটা বিষাদে ভরে ওঠে। আরও বেশি করে তাকালে বিষাদ ঝরে যায় ক্রমে, অপূর্ব আনন্দে ভরে ওঠে মন। এই যে সময়টুকু, তাকে মনে হয়ে ধ্যান। সেই ধ্যান থেকে পাওয়া প্রশান্তিই আমাদের জীবনের পরম প্রার্থনা।

৭ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কাগজে কিংবা ক্যানভাসে, অ্যাক্রেলিকে বাপ্পী দক্ষ শিল্পী। প্রদর্শনীর প্রথম চিত্রকর্মটি ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক। ২০২৪ সালে আঁকা এই চিত্রে গোলাপি ও হালকা ম্যাজেন্টা রঙের ফাঁকা সাদা রং ফুটিয়ে তোলেন অন্তরের দাহ।

৮ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

অনেক ওপর থেকে তোলা ল্যান্ডস্কেপের মতো যেন দেহের ভেতরের ব্যবচ্ছেদ। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা আমাদের চিন্তাগুচ্ছকে তুলিতে ধরে রেখেছেন। ২০২৫ সালে আঁকা ২ নম্বর চিত্রটি লাল বাদে সব রঙের মিশ্রণে এক গ্রাফিকস।

৯ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সবুজ আর হলুদের তীব্রতায় প্রশান্তির প্রলেপ বুলিয়ে দেয়। ৩ নম্বর চিত্রে রেখাগুলো আঁকা হয়েছে হলুদ রঙে। হলুদকে পাতাঝরার বিষণ্নতার রং বলা হলেও এই চিত্রে হলুদ যেন বিষণ্নতার ভেতর থেকে পরম এক স্বস্তির দিকে নিয়ে যায়। ৪ নম্বর চিত্র তো হৃৎপিণ্ডের রংকেই বিছিয়ে দিয়েছে কাগজে।

১০ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

জ্যামিতিক ফর্মে রেখাচিত্রের ভেতর থেকে কখনো কখনো উঁকি দেয় প্রাণীর অবয়ব। ৫ নম্বর চিত্রটিতে কাগজে নীল-সবুজের ছোঁয়া। ৬ নম্বর চিত্রে রয়েছে কলিজার রং। যেন বা প্রজাপতির বাহারি পাখা। একবার দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে আর দীর্ঘক্ষণ দেখলে মন।

১১ / ১১
শান্তির ধ্যান, শিল্পী ফারহানা আফরোজ বাপ্পী
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

গত ৩ অক্টোবর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী আগামী ১২ তারিখ পর্যন্ত চলবে লালমাটিয়ার [বাড়ি ১/১, ব্লক-ডি] দ্বীপ গ্যালারিতে। শিল্পী শেহেজাদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ।