পাখির মতো উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে দুনিয়া দেখার বাসনা চিরকালই মানুষের আকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু খণ্ড খণ্ড রাষ্ট্রব্যবস্থার জাতীয়তাবাদ মানুষের ভ্রমণ স্বাধিকারকে হরণ করেছে। পৃথিবীর উদার প্রকৃতির মনোরম দৃশ্যাবলির পাশাপাশি শিল্পী সৈয়দ গোলাম দস্তগীর স্বাধীনচেতা মানুষের সীমানা নির্ধারণী পরাধীনতার এই রূঢ় সত্যকে তুলে ধরেছেন তাঁর ছবিতে।
‘পরিযায়ী পাখির মহাকাব্যিক ভ্রমণ’ শিরোনামে সৈয়দ গোলাম দস্তগীরের দ্বিতীয় একক চিত্রপ্রদর্শনীর প্রতিটি ছবিতেই আছে ভ্রমণের বয়ান। ৩৯টি চিত্রকর্মের একটাই শিরোনাম। এখানে ভ্রমণপিয়াসী মানুষও যেন পাখির চোখে ওপর থেকে দেখছে পাহাড়, বন, মাটি, শস্যভরা জমিন, গ্রাম-নগর-বন্দর, আঁকাবাঁকা পথ আর নদীর তটরেখা। প্রতিটি কাজের পাশেই বিদ্যমান শিল্পবয়ান, যা পড়ে শিল্পীর অনুভূতির সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে নিতে পারেন দর্শক।
শিল্পীর অনুভবে পাখি শুধু প্রাণী নয়, তারা এমন জীবনের প্রতীক, যা দেয়াল, সীমান্ত বা বিভাজনে আবদ্ধ নয়। শিল্পী বলছেন, ‘এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমি আমার স্বাধীনতার স্বপ্ন, একটি মুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেছি। অভিবাসী পাখি হয়ে উঠেছে আমার প্রেরণা।’
দস্তগীর তাঁর কাজের মধ্যে স্পর্শ করার মতো উপাদান যুক্ত করেছেন, যা দৃষ্টিহীনদের জন্য স্পর্শ ও অনুভবের অভিজ্ঞতা এনে দেয়। প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্পসমালোচক জাভেদ জলিলের ভাষ্য, দস্তগীর এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটি পাখির উড়াল এবং তার চাক্ষুষ উপলব্ধির মধ্যে সম্পর্ক অন্বেষণ করেছেন। পাখিদের জীবনছন্দকে জীবন উদ্যাপনের চাহিদায় পাখির স্থানান্তর এবং এর অবাধ যাত্রাপথকে সবিস্ময় অনুসন্ধান করেছেন। আর এসব ধারণা খোঁজার জন্য ভূপৃষ্ঠের মানচিত্র, উপগ্রহচিত্র ও অন্যান্য মাধ্যমের প্রয়োগসহ নানান প্রযুক্তিগত পদ্ধতি তিনি এসব ছবিতে আরোপ করেছেন। প্রদর্শনীটি দর্শকের ভাবনার খোরাক জোগাবে।
ঢাকার লালমাটিয়ায় শিল্পাঙ্গন ও ভূমি গ্যালারির যৌথ এ আয়োজন চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভূমি গ্যালারিতে।
জাহিদ মুস্তাফা