জড়জীবনের আদ্যোপান্ত
গ্যালারি কায়ায় শুরু হয়েছে নতুন প্রদর্শনী ‘অ্যারেঞ্জড অ্যান্ড ডিরেঞ্জড: স্টিল লাইফ’। এর বাংলা অনুবাদ হতে পারে ‘সজ্জিত ও অবিন্যস্ত জড়জীবন’। স্টিল লাইফ শব্দবন্ধটি একাডেমিক পরিসরে বহুল ব্যবহৃত, যা এমন এক চিত্ররীতি নির্দেশ করে, যেখানে জীবন্ত জগতের সরাসরি প্রতিফলন থাকে না।
প্রদর্শনীতে ১৪ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন—কেউ নবীন, কেউ প্রবীণ। তবে কারও কাজ দেখে মনে হয়েছে তাঁরা বিষয়টিকে ফরমায়েশি হিসেবে নিয়েছেন, আবার কারও ক্ষেত্রে প্রদর্শনীর শিরোনামের সঙ্গে কাজের সামঞ্জস্য নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আমাদের দেশে এ ধরনের থিমভিত্তিক প্রদর্শনীর চর্চা খুব একটা দেখা যায় না, যদিও পার্শ্ববর্তী দেশে এটি বেশ প্রচলিত।
বর্তমানে বিশ্বে শিল্পীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় এবং এটিকেই স্বাধীন শিল্পীসত্তার মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। সে বিবেচনায় কাজগুলো দেখলে অনেক প্রশ্ন আসতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আসার আগে আমরা কথা বলব সেই শিল্পীদের নিয়ে, যাঁদের কাজ প্রচলিত জড়জীবন চিত্ররীতির প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁরা হলেন হাশেম খান, জামাল আহমেদ, শেখ আফজাল হোসেন, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আলপতুগীন তুষার, কামালউদ্দিন আজমীর হোসেন, কামরুজ্জামান সাগর, সোহাগ পারভেজ, শাহনূর মামুন ও দিদারুল হোসেন লিমন।
তবে চন্দ্রশেখর দের ছয়টি ছবির একটিকেও স্টিল লাইফ বলা কঠিন, যদিও সেখানে জড়জগতের উপাদান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ‘স্টিল লাইফ ৩’ শিরোনামের ছবিটি দেখা যেতে পারে, যেখানে চাঁদনি রাতে কিছু মানুষ একটি বোতল ও পেয়ালার দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে মূল বিষয়বস্তু ‘মানুষগুলো’, ফলে এটিকে স্টিল লাইফ হিসেবে ব্যাখ্যা করা কঠিন। বাকিগুলোতে এই শ্রেণিবিভাগ করাও আরও কঠিন হবে।
রতন মজুমদারের কাজে নতুনত্ব রয়েছে নিঃসন্দেহে, তবে কোথাও যেন মনে হয় তিনি নিজেকেই নতুনভাবে দেখছেন। রণজিৎ দাস প্রচলিত স্টিল লাইফ ধারণাকে আরও শাণিত করেছেন নতুন ভাবনায়। অনুকূল চন্দ্র মজুমদার নিজ ধারায় কাজ করে নতুন মাত্রায় পৌঁছেছেন। তবে আজমীর হোসেনের কাজে একধরনের ফরমায়েশি গন্ধ পাওয়া যায়, যেন প্রাণহীন এক কম্পোজিশন। তাঁর আগের কাজের বিবেচনায় খাপছাড়া দুর্বল। অন্যদিকে কামরুজ্জামান সাগরের কাজ আমাদের দেখার ও ভাবনার চোখ নতুনভাবে নাড়া দেয়।
একটি প্রদর্শনী কেন এত প্রশ্ন ও চিন্তার খোরাক জোগায়? কারণ, এখানে শুধু শিল্পকর্ম নয়, শিল্পচিন্তার দ্বন্দ্বও উপস্থিত। শিরোনাম ও বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্য, শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা ও ফরমায়েশি কাজের মধ্যে যে ফারাক—এই প্রদর্শনী সেটি নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে। সব মিলিয়ে এটি একটি ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী, যা নতুন ভাবনা, বিতর্ক ও সম্ভাবনার জায়গা তৈরি করেছে।
প্রদর্শনীটি চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সৈয়দ গোলাম দস্তগীর