ছাপচিত্রের বিশদ ভূগোল

‘দ্য স্ট্রিট সার্কাস’, শিল্পী: শহিদ কবির

গ্যালারিতে ঢোকার মুখেই মুর্তজা বশীরের আত্মপ্রতিকৃতি। তিনি সরাসরি তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে। ড্রাই পয়েন্টে করা কাজটির পাশে মকবুল ফিদা হুসেন আর কে জি সুব্রামানিয়ানের ছাপচিত্র। চন্দ্রশেখর দের ‘নারী’ সিরিজের কাজগুলো দেখতে দেখতেই চোখ পড়ে রফিকুন নবী, আবুল বারক আলভী, শহিদ কবির, শাহাবুদ্দিন আহমেদের ছাপচিত্রগুলোর দিকে। তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছে অন্য আরও তরুণ ছাপচিত্রীদের কাজ। মোটকথা, উত্তরার গ্যালারি কায়ায় ‘এক্সপ্রেশন ইন গ্রাফিকস’ শিরোনামের ছাপচিত্রের প্রদর্শনীটি বাংলাদেশ ও ভারত—এই দুই দেশের ছাপচিত্রীদের রাখিবন্ধন ঘটিয়েছে।

দুই দেশের ২৭ শিল্পীর ৬৩টির বেশি ছাপচিত্র আছে প্রদর্শনীতে। ছাপচিত্রের অতীত–বর্তমান এবং এই মাধ্যমের করণকৌশলের ধারণা পাওয়ার জন্য এই প্রদর্শনী একটি দ্রুত অভিজ্ঞতার সুযোগ। শিল্পকর্মগুলো এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, লিনোকাট, উডকাট প্রিন্ট, অফসেট লিথোগ্রাফ, সেরিগ্রাফ, ড্রাই পয়েন্ট, মেজোটিন্ট ও লিথোগ্রাফ অন পেপার ইত্যাদি পদ্ধতিতে করা। শিল্পকর্মগুলোর বিষয় নগরচিত্র, নিসর্গ ও আত্মপ্রতিকৃতি থেকে শুরু করে করোনাকালের সংকট ও বিমূর্ততা ইত্যাদি।

অফসেট লিথোগ্রাফ পদ্ধতিতে করা ‘১০০% স্বাক্ষরতা (কেরেলা)’ শিরোনামে মকবুল ফিদা হুসেনের নিজের স্বভাবজাত কিউবিজমে করা। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সে চিত্রে পত্রিকা বই পড়ছে।

মুর্তজা বশীরের ১৯৫৪ সালের কাজ ‘শু শাইন বয়’ শিরোনামের লিনোকাট প্রিন্ট; তাতে একটি ছেলে রাস্তায় জুতা পলিশ করার সরঞ্জাম বহন করছে।

রফিকুন নবীর এচিং পদ্ধতিতে করা ২০২৩ সালের নিসর্গচিত্র রয়েছে। এখানে পরিপ্রেক্ষিত ভেঙে শিল্পী নিজের মতো করে গড়েছেন। ত্রিমাত্রিকতার নিয়ম মানলেও চিত্রে দ্বিমাত্রিক এক দ্যোতনা পাওয়া যায়।

শহীদ কবিরের এচিংয়ে আছে ২০১৬ সালের ছাপচিত্র ‘দ্য স্ট্রিট সার্কাস’। এক টিভি ক্যামেরাম্যান সার্কাস শোতে ছাগলের চিত্রায়ণ করছেন।

প্রবীণ শিল্পী আবুল বারক আলভীর বিমূর্ততামাখা এচিং কম্পোজিশনগুলোর পাশাপাশি ঝোটনচন্দ্র রায়ের মতো তরুণ শিল্পীর ‘অরিগ৵ামি’ নামের এচিংও স্থান পেয়েছে।

প্রদর্শনীতে প্রবীণের সঙ্গে তরুণদের মেলবন্ধন ঘটেছে। তাই প্রবীণ ছাপচিত্রীদের বিষয় নির্বাচনের পটভূমিতে তরুণ ছাপচিত্রীদের বাছাই কেমন, তাঁদের কাজে বৈচিত্র্য কতটা—এসব পরখ করারও ভালো একটি সুযোগ করে দিয়েছে প্রদর্শনীটি।

বাংলাদেশ ও ভারতের ছাপচিত্রীরা তাঁদের নিজস্ব শৈলী ও ছাপচিত্র–দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়ে যে শিল্পকর্মগুলো করেছেন, এক ছাদের নিচে সেসব দেখতে পাওয়া কম কথা নয়! প্রদর্শনী চলবে ৮ জুন পর্যন্ত।

 অনিন্দ্য নাহার হাবীব