পিকাসোকে ছেড়ে গিয়েছিলেন যে প্রেমিকা 

৬ জুন মার্কিন মুলুকে প্রয়াত হয়েছেন চিত্রশিল্পী ফ্রাঁসোয়া জিলো। বিশ্ববরেণ্য চিত্রকর পাবলো পিকাসোর প্রেমিকা ছিলেন তিনি। ছিলেন তাঁর দুই সন্তানের মা। পরে এই নারী ছেড়েও গিয়েছিলেন পিকাসোকে। ফ্রাঁসোয়া আর পিকাসোর প্রেম ও দ্বন্দ্বের ঘটনা সারা বিশ্বে এখনো আলোচিত।

সমুদ্রসৈকতে ফ্রাঁসোয়া জিলোর সঙ্গে পাবলো পিকাসোর সেই আইকনিক ছবি, ১৯৪৮। ছবি: রবার্ট কাপা, নিউইয়র্ক টাইমস–এর সৌজন্যে

‘তোমার কি মনে হয় মানুষ তোমাকে মনে রাখবে? তোমার বিষয়ে আগ্রহী হবে? হাসালে। কেউ যদি তোমাকে মনে রাখে তার কারণ একটাই, আমি। তুমি সেই নারী যে হৃদয় দিয়ে খুব অল্প সময়ে আমাকে ছুঁয়ে ফেলেছিলে। হ্যাঁ, আমার প্রেমিকা। পাবলো পিকাসোর একজন প্রেমিকা। আর এটাই তোমার একমাত্র পরিচয়।’

এক দশকের সম্পর্ক ভেঙে ফ্রাঁসোয়া জিলো যখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন তাঁর কানে বাজছিল এই কথাগুলো। আর এটিই ছিল ফ্রাঁসোয়ার প্রতি পিকাসোর শেষ শব্দমালা। অবশ্য পিকাসোর কথাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত করে ফ্রাঁসোয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন চিত্রশিল্পী, লেখক আর শিক্ষক হিসেবে। ১০১ বছর বয়সে সেই ফ্রাঁসোয়া জিলো মারা গেলেন ৬ জুন। 

বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর সব প্রেমিকার মধ্যে ফ্রাঁসোয়া জিলোই একমাত্র, যিনি তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। ফ্রাঁসোয়া এ জন্যই অন্যদের চেয়ে আলাদা, এ জন্যই এই লেখার ‘নায়ক’ও ফ্রাঁসোয়া জিলো।

যেভাবে বেড়ে ওঠা

পুরো নাম মেরি ফ্রাঁসোয়া জিলো। জন্মেছিলেন এক ধনী অসুখী পরিবারে। বাবা এমিলি জিলোর ছিল কেমিক্যালের ব্যবসা। আর মা ম্যাডেলিনের ছিল বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউস। তৎকালীন হাই প্রোফাইল ধনাঢ্য নারীরা সেখান থেকে পোশাক কিনতেন। ফ্রাঁসোয়া ছিলেন এই দম্পতির একমাত্র সন্তান। 

স্বেচ্ছাচারী, পুরুষতান্ত্রিক এমিলির সঙ্গে স্বাধীনচেতা ও সংবেদনশীল ম্যাডেলিনের মতের মিল হয়েছিল সামান্যই। এমিলি নিজের সব চাওয়া জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মেয়ের ওপর। ডান হাতে লিখতে বাধ্য করেছিলেন, যদিও ফ্রাঁসোয়া ছিল লেফট-হ্যান্ডেড বা বাঁহাতি। 

মেয়েকে প্রথমে আইনের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন এমিলি। ১৯৩৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করেন ফ্রাঁসোয়া। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যের ওপরও ডিগ্রি নেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর মন মজে ছিল শিল্পকলায়। সেই যে পাঁচ বছর বয়সে মা তাঁকে আঁকাআঁকির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, জীবনভর ওই শিল্পকলাই ছিল ফ্রাঁসোয়ার সত্যিকারের ভালোবাসা। একজীবনে তিনি যা কিছু করেছেন, সবই শিল্পী হওয়ার জন্য, শিল্পকলাকে ভালোবেসে।

 আইন পড়া ছেড়ে ১৯৪১ সালে তিনি ভর্তি হন আর্ট স্কুলে। বাবা-মায়ের সংঘাতের ভেতরে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে থাকতে শুরু করেন দাদির সঙ্গে। এটিই ছিল ফ্রাঁসোয়ার জীবনের প্রথম সাহসী সিদ্ধান্ত। এরপর অসংখ্যবারই মনের ডাকে স্রোতের বিপরীতে পথ চলেছেন এই নারী। এভাবে স্রোতের বিপরীতে হেঁটেই তো একদিন তিনি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন পাবলো পিকাসোর।

পিকাসোর সঙ্গে দেখা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালো ছায়া ছেয়ে ফেলেছে পৃথিবীকে। তরুণ ফ্রাঁসোয়া জিলোরা ভেতরে–ভেতরে নাৎসিবিরোধী নানান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এর মধ্যে একদিন লা কাতালা নামের ছোটখাটো এক রেস্তোরাঁয় গেলেন সান্ধ্য আড্ডায়। সেখানে তখন আলোকচিত্রী প্রেমিকা ডোরা মারকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন পাবলো পিকাসো। পিকাসোই আগ্রহী হয়ে পরিচিত হলেন ফ্রাঁসোয়ার সঙ্গে। এতে আনন্দে আত্মহারা তিনি, যাঁর আঁকা ছবি ছাড়া ফ্রান্সে আর কিছুই নেই, সেই পিকাসো কথা বলছেন তাঁর সঙ্গে! কথায় কথায় পিকাসোকে সেদিন ফ্রাঁসোয়া জানিয়েছিলেন, শিল্পকলাচর্চা নিয়ে তাঁর পারিবারিক সংকটের কথা। আইন পড়া ছেড়ে ছবি আঁকা শুরু করায় বাবা তাঁর গায়ে হাত তুলেছিলেন। 

সব শুনে ফ্রাঁসোয়াকে পিকাসো বললেন, ‘তোমাকে দেখে মনে হয় না তুমি আঁকো। শিল্পীদের চেহারা এ রকম হয় না।’

শিল্পীদের চেহারা কেমন হয়, তা জানানোর জন্য নিজের স্টুডিওতে ফ্রাঁসোয়াকে আমন্ত্রণ জানালেন পিকাসো। 

বেশ কয়েকবার বিশ্বখ্যাত এই চিত্রকরের স্টুডিওতে ঢুঁ মারলেন ফ্রাঁসোয়া। এরপরের গল্প হলো, পিকাসো–ফ্রাঁসোয়ার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল। পরে এল ১৯৪৪ সালের সেই দিন—২২ বছরের ফ্রাঁসোয়া ৬২ বছর বয়সী পিকাসোর প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণের কথা জানালেন। 

সেই সময়ের অনুভূতির কথা অনেক পরে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছিলেন ফ্রাঁসোয়া, ‘আমি যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, তাঁর মতো ভদ্রলোক, গুণী শিল্পী আর হয় না। তবে কেবল দ্বিতীয়টাই সত্য।’

ফ্রাঁসোয়া জিলোকে দেখে ১৯৪৬ সালে পিকাসো এঁকেছিলেন ‘উইমেন উইথ আ ইয়েলো নেকলেস’ চিত্রকর্মটি

উঠলেন পিকাসোর ঘরে

অগণিত নারীর সঙ্গে পিকাসোর সম্পর্ক থাকলেও তিনি বিয়ে করেছিলেন মাত্র দুজনকে। প্রথমবার বিয়ে করেন জনপ্রিয় ফরাসি ব্যালে ড্যান্সার ওলগা খোকলোভাকে, ১৯১৮ সালে। ওলগা মারা যান ১৯৫৫–তে। তবে তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ না হলেও দুজন আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন বহু আগে। মূলত ওলগাই নিজের নামের সঙ্গে ‘ডিভোর্সড’ তকমা লাগাতে চাননি। 

দ্বিতীয়বার পিকাসো বিয়ে করেন ১৯৬১ সালে, জ্যাকলিন রোক নামের আরেক চিত্রশিল্পীকে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৮০, আর জ্যাকলিনের ৩৫! তবে এই দুই স্ত্রী ও অন্য সব প্রেয়সীদের ছাপিয়ে পিকাসোর সঙ্গীদের ভেতর ফ্রাঁসোয়াই বারবার এসেছেন আলোচনায়।

পিকাসোর কাছে ফ্রাঁসোয়ার সঙ্গ ক্রমশ নেশার মতো হয়ে উঠেছিল। ১৯৪৬ সালের মে মাসে নিজের বাক্স–পেটারা নিয়ে পিকাসোর ডেরায় চলে এলেন ফ্রাঁসোয়া জিলো। এটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্তগুলোর একটি। কেননা এর আগে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাতে তাঁর মা ম্যাডেলিনের সায় ছিল। তবে এবার ফ্রাঁসোয়ার সিদ্ধান্তে মা-বাবা দুজনেই ক্ষুব্ধ হলেন। 

১৯৪৭ সালের মে মাসে জন্ম নিল ফ্রাঁসোয়া ও পিকাসোর প্রথম সন্তান ক্লদ। আর ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে জন্ম হলো তাঁদের মেয়ে পালোমা পিকাসোর। দুই সন্তানের জননী ফ্রাঁসোয়া সে সময় ঝুঁকলেন বিমূর্ত চিত্রকলার দিকে। ১৯৫২ সালের এপ্রিলে প্যারিসে তাঁর ওই সময়ের চিত্রকর্মের একটা প্রদর্শনী হলো। দারুণভাবে সমাদৃত হলো প্রদর্শনীটি। কিন্তু সমালোচকেরা বললেন, ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, ফ্রাঁসোয়া যতটা না নিজের ভেতরে তাকিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন পিকাসো থেকে। 

এ সমালোচনাকে আমলে নিয়েছিলেন ফ্রাঁসোয়া। পরবর্তী জীবনের আঁকা ছবিগুলোয় নিজস্ব স্বাক্ষর রাখতে পেরেছিলেন তিনি।

পিকাসোকে ছেড়ে যাওয়া যায়

১৯৫৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। এদিনই ফ্রাঁসোয়াকে পিকাসো বলেছিলেন সেই কথা, ‘তোমার কি মনে হয় মানুষ তোমাকে মনে রাখবে?’ হ্যাঁ, যে কথাগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে এ লেখা, সে কথাগুলো ওই দিনের। এদিন সকালে ক্লান্ত, অসুস্থ, অসুখী ফ্রাঁসোয়া শান্তভাবে পিকাসোকে জানালেন, আজ তিনি ছেড়ে যাবেন তাঁকে। শুনেই মাথা খারাপ হয়ে গেল পিকাসোর। কারণ, এর আগে এই চিত্রশিল্পীকে কোনো নারীই ছেড়ে যাননি, তিনিই ছেড়েছেন সবাইকে। 

এক নারীতে বেশি দিন বুঁদ হয়ে থাকতে পারতেন না পিকাসো। বিশ্লেষকেরা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, পিকাসো নিজের বৈচিত্র্যময় স্বভাবের কারণে আবেদনময়ী নারীদের মধ্যে যেমন শিল্পের অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতেন, তেমনি কোনো নারীর মন জয় করার পরপরই তাঁর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। তখন ঝুঁকতেন অন্য নারীতে। ফ্রাঁসোয়া জিলোর বেলায়ও এমনটা হয়েছিল। 

তবে ফ্রাঁসোয়া ছিলেন ব্যতিক্রমী। তাঁর প্রতি পিকাসোর ক্রমাগত অবহেলা আর পর্বতসম অহংকারের দম্ভকে নীরবে মাড়িয়ে যখন তিনি জানালেন, ‘আর থাকছেন না তাঁর সঙ্গে।’ কথাটি শুনেই একটা বাঁকা হাসি দিলেন পিকাসো। তারপর বললেন, ‘তাই নাকি! পিকাসোকে কেউ ছেড়ে যায় না, পিকাসোকে ছেড়ে যাওয়া যায় না।’ 

কিন্তু দুই শব্দের ছোট্ট উত্তর ‘দেখা যাবে’ বলে বেরিয়ে পড়লেন ফ্রাঁসোয়া। সিদ্ধান্তটা তিনি আরও আগেই নিয়েছিলেন। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন, পিকাসোকে ছেড়ে যাওয়া যায়।

নিজেকে খোঁজার যাত্রা

শুরু হলো ফ্রাঁসোয়া জিলোর নিজেকে খোঁজার যাত্রা। পিকাসোর সঙ্গে প্রেম নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার প্রেমটা ছিল মূলত শৈল্পিক কথোপকথনের। তিনি আর আমি দুজনেই মনে করতাম, শিল্প ছাড়া জীবনের মানে নেই৷ এই এক বাক্যের দর্শনই আমাদের এক দশকজুড়ে একসঙ্গে রেখেছিল।’

এরপর কিছুদিন ফ্রাঁসোয়া প্রেম করলেন দার্শনিক কোস্তাঁ এক্সেলের সঙ্গে। ১৯৫৫ সালে ছোটবেলার বন্ধু, আরেক ফরাসি চিত্রশিল্পী লুক সাইমনকে বিয়ে করলেন তিনি। এই ঘরে জন্ম নিল তাঁর তৃতীয় সন্তান ও দ্বিতীয় কন্যা অরেলিয়া। এই অরেলিয়াই গত মঙ্গলবার বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন ফ্রাঁসোয়ার মৃত্যুর খবর। 

১৯৬২ সালে লুক আর ফ্রাঁসোয়ার বিচ্ছেদ ঘটে।

পিকাসো আর ফ্রাঁসোয়ার লড়াই 

২০১৮ সালে, ফ্রাঁসোয়ার বয়স যখন ৯৬ বছর

১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হলো মার্কিন সমালোচক কার্লটন লেকের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা ফ্রাঁসোয়া জিলোর বই লাইফ উইথ পিকাসো। বইটি যাতে ফ্রান্সে প্রকাশিত না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন পিকাসো। তিন দফা মামলা করেছিলেন। পরে অবশ্য তৃতীয়বার হেরে গিয়ে টেলিফোন করে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন ফ্রাঁসোয়াকে। 

তবে এর আগেই ঘটে গেছে বিস্তর ঘটনা। ফ্রাঁসোয়াকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য পিকাসো বলেছিলেন, বইটি যদি কোনোভাবে প্রকাশ পায়, তাহলে বাকি জীবনে কোনো দিন তিনি তাঁর দুই সন্তান ক্লদ ও পালোমার মুখ দেখবেন না। এ খবরও তখন ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। 

আসলে পিকাসো ও ফ্রাঁসোয়ার প্রেম নাকি যুদ্ধ—কোনটা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, তা নিয়েই তর্ক হতেই পারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই লাইফ উইথ পিকাসো ঠাঁই করে নিল আন্তর্জাতিক বেস্টসেলারের তালিকায়। এই বই বেরোনোর পর বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী চলেছে এই দুই শিল্পীর প্রেম আর দ্বন্দ্বের আলাপ।

 পিকাসোর মতো বড় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছিলেন ফ্রাঁসোয়া জিলো। লাইফ উইথ পিকাসো থেকে পাওয়া সব অর্থ তিনি পিকাসোর সঙ্গে তাঁর দুই সন্তানের অভিভাবকত্বের আইনি লড়াইয়ে খরচ করেন। চমকপ্রদ তথ্য হলো, আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর মৃত্যুর আগপর্যন্ত পিকাসো আসলেই তাঁর দুই সন্তানের মুখ দেখেননি, ফ্রাঁসোয়াই তাঁদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৭০ সালে, ৪৯ বছর বয়সে ফ্রাঁসোয়া জিলো মার্কিন অণুজীববিজ্ঞানী ও সফল পোলিও টিকার আবিষ্কর্তা জোনাস সাল্ককে বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে জোনাসের মৃত্যুর পর ফ্রাঁসোয়া বিশাল এক খোলামেলা বাড়ির এক পাশে স্টুডিও বানিয়ে নিরীক্ষামূলক কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট, প্যারিসের পম্পিদ্যু সেন্টারসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় চিত্রশালায় তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়েছে।

জোনাসের মৃত্যুর পর অনেকটা নিভৃতেই শিল্পীজীবন কাটিয়েছেন ফ্রাঁসোয়া। লাখ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল তাঁর চিত্রকর্ম। 

ফ্রাঁসোয়া জিলো চিত্রশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তিনি ভেঙেছেন, উঠে দাঁড়িয়েছেন, এগিয়েছেন। তবে কোনো দিন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আপস করেননি। বারবার পথ চলেছেন স্রোতের বিপরীতেই। জয়ীও হয়েছেন। এ কারণেই কি পাবলো পিকাসোর একসময়ের এই প্রেমিকা বলতে পেরেছিলেন, ‘পিকাসো যদি খুব বড় হন, আমিও খুব ছোট নই।’

তথ্যে তথ্যে ফ্রাঁসোয়া জিলো

১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় ফ্রাঁসোয়া জিলোর লেখা লাইফ উইথ পিকাসো। এটি বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া স্মৃতিকথাগুলোর একটি।

ইন্টারফেস: দ্য পেইন্টার অ্যান্ড দ্য মাস্ক—ফ্রাঁসোয়ার লেখা আরেকটি স্মৃতিকথা। এতে নিজের শিল্পীমনের নানা কথা মেলে ধরেছেন তিনি।

 ৯৬ বছর বয়সে ফ্রাঁসোয়া তাঁর ভারত, সেনেগাল ও ভেনিস ভ্রমণে আঁকা স্কেচগুলো নিয়ে আরেকটি বই প্রকাশ করেন।

 পিকাসো আর ফ্রাঁসোয়ার সম্পর্ক নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র সারভাইভিং পিকাসো মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। এখানে পিকাসোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অ্যান্থনি হপকিনস আর ফ্রাঁসোয়ারূপে দেখা দিয়েছেন নাতাশা ম্যাকএলহন।

 ফ্রাঁসোয়ার আঁকা তাঁর মেয়ে পালোমা পিকাসোর একটি প্রতিকৃতি ২০২১ সালের একটি অনলাইন নিলামে ১.৩ মিলিয়ন ডলার বা ১৪ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমসদ্য গার্ডিয়ান