রাজধানীর ভূমি গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পী সহিদ কাজীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী ‘ইমপাস্তো’। ইমপাস্তো হলো রংকে কিছুটা ভাস্কর্যের মতো দাঁড় করিয়ে তোলা চিত্রের স্পর্শযোগ্য গভীরতা তৈরির এক বৈশিষ্ট্যময় শিল্পকৌশল। যেখানে রংকে ক্যানভাসে খুব ঘন, মোটা ও উঁচু-নিচু করে প্রয়োগ করা হয়। তাঁর ক্যানভাসে তেলরং শুধু রং নয়, এ যেন স্পর্শযোগ্য এক রূপক, যেখানে দাগ, খোঁচা, স্তর, উঁচু-নিচু সব মিলিয়ে ক্যানভাসের গায়ে তৈরি হয়েছে জীবন্ত এক ত্বক। ইমপাস্তো টেকনিকের সাহসী ব্যবহার তাঁর কাজগুলোকে দিয়েছে ভরাট দৃষ্টিগ্রাহ্যতা—যেখানে আলো পড়ে গড়ে ওঠে ক্ষুদ্র ছায়া, আর সেই ছায়াই চিত্রগুলোকে করে তোলে ত্রিমাত্রিক।
সহিদ কাজীর চিত্রভাষা আসলে অনুভূতির স্তরবিন্যাস—উচ্ছ্বাস, স্থিরতা, স্মৃতি কিংবা কোনো অতীত দৃশ্যের ক্ষণিক ঝলক—এসবই তাঁর তেলরঙের স্তরে স্তরে জমে উঠেছে। রঙের খোলা স্ট্রোক, ছুরির ধারালো স্লাইড, কখনো স্ফীত, কখনো দগদগে স্তর—এসব বুননে শিল্পী নিজের আবেগকে প্রায় মূর্ত রূপ দিয়েছেন। ফলে দর্শক শুধু দেখেন না, একই সঙ্গে স্পর্শের অনুভূতিও উপলব্ধি করেন।
প্রদর্শনীর কাজগুলো ইমপ্রেশনিজম ধারার সঙ্গে এক স্বাভাবিক তুলনা সৃষ্টি করেছে। ইমপ্রেশনিজম যেখানে আলোর তারল্য ও ঝিলিককে গুরুত্ব দিয়েছে, সহিদ কাজীর ইমপাস্তো সেখানে রঙের ওজন, তাপ ও গঠনকে দৃশ্যমান করেছে। ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পী মনেট রংকে খুব পাতলা স্তরে, দ্রুত ব্রাশস্ট্রোকে ব্যবহার করে দৃশ্য বা মুহূর্তের সংবেদনকে নরম ও হালকা টোনে উপস্থাপন করেছেন। পক্ষান্তরে সহিদ কাজী রংকে ঘনভাবে, স্তরিত ও টেক্সচারের সঙ্গে ক্যানভাসে চাপিয়ে ঘনত্ব, স্তর ও চাপের মাধ্যমে শক্তিশালী, স্পর্শযোগ্য আবেগ সৃষ্টি করেছেন।
কিছু ক্যানভাসে রঙের উজ্জ্বলতা প্রকৃতির শক্তিকে মনে করিয়ে দেয়, আবার কিছু কাজে ভারী ডার্ক টোন মানবমনের জটিলতা ও নিস্তব্ধতার কথা বলে। দৃশ্যমান অবয়বের পাশাপাশি তাঁর বিমূর্ত কম্পোজিশনগুলোতে ইমপাস্তো এক সাংকেতিক ভাষা, যেখানে রঙের উচ্চতা ও ঘনত্ব বিভিন্ন অনুভূতিকে ভিজ্যুয়াল মেটাফরে রূপান্তর করে।
এ প্রদর্শনী তাই শুধু ছবি দেখার অভিজ্ঞতা নয়—বরং রঙের ভর, গতি, তাপ ও স্পর্শের একটি সংবেদনশীল ভ্রমণ। সহিদ কাজীর প্রথম এই প্রদর্শনী তাঁর নান্দনিক পরিশ্রম, কারিগরি দক্ষতা এবং আবেগনির্ভর চিত্রবিশ্বের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতারই প্রমাণ। প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ৫ ডিসেম্বর, চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।






