মানুষ ও সময়ের নগ্ন মূর্তি
আধো আলোয় চোখ সয়ে এলে মঞ্চের মাঝখানে বিশাল এক পাটাতনকে সঙ্গী করে বাজতে থাকে ধর্মীয় আয়াত। অতিলৌকিক এক পরিবেশে দৃশ্যকাব্য উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি তৈরি করে আদম সুরত নাটকটি।
বাকার বকুলের রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে এনেছে রেপার্টরি নাট্যদল তাড়ুয়া। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীবের তকমা লাগানো মানুষের স্বরূপ কী? এ প্রশ্নের মুখোমুখি দর্শকদের দাঁড় করিয়ে দেওয়াই এই প্রযোজনার অভীষ্ট।
মুখ্য চরিত্র হিসাবুল নাটকের সূচনায় মাথার তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে জেগে ওঠে কবরে। ভাবে, মৃত্যু–পরবর্তী সওয়াল–জওয়াবের জন্যই প্রাণ ফিরে পেয়েছে নিশ্চয়। তার চোখের সামনে জেগে উঠতে থাকে পুরো জীবন। আর সেসব ঘটনার সাক্ষী হয় দর্শকেরা।
বালুধূম গ্রামে মুক্তচিন্তার এক মানুষ সমাজ ও রাজনীতির আক্রমণের নিঃসঙ্গ শিকার। কুকুর গণনিধনের বিরোধী বৈরাগী মাস্টার হন অপমানিত ও দেশান্তরিত। বাবার সম্পত্তির লোভে ভাই ভাইকে মেরে ফেলে দেয় গাঙে। গর্ভবতী তরুণী পড়ে থাকে মর্গে। বেকার হিসাবুল জীবনসংগ্রামে জড়িয়ে পাড়ি জমায় ভিনদেশে। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় সহযাত্রীদের একে একে হারিয়ে মুমূর্ষু হয়ে ভিনদেশে পৌঁছায়। সেখানে আবার পড়ে আদম ব্যবসায়ীদের খপ্পরে। বালুধূম যেন বাংলাদেশ।
হিসাবুল ছাড়া অন্য চরিত্রগুলো খণ্ডিত থেকে গেছে। চরিত্রগুলো বিকশিত হতে পারেনি। নাটকের দৃশ্যসজ্জা ইশারাধর্মী। সংগীতায়োজন এ নাটকের বড় দুর্বলতা। পুরো নাটক অযথা সংগীতে প্লাবিত। একই সংগীতের বারবার ব্যবহার কখনো কখনো বিরক্তিরও।
আদম সুরত বর্ণনাত্মক রীতিতে নির্মিত। তবে এখানে বের্টল্ট ব্রেখটের ‘বিযুক্তিকরণ তত্ত্ব’–এর ছোঁয়াও পাওয়া যায়। নির্দেশক দর্শককে ঘটনা ও চরিত্রের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার সুযোগ না দিয়ে বরং ঘটনার প্রতিক্রিয়া দর্শকের মনে গেঁথে দিতে আগ্রহী। মানুষের নগ্ন মূর্তি উন্মোচনের পাশাপাশি এ নাটক দেখাতে চায় সময়কেও।