স্বরূপের খোঁজে

শিল্পী: এ এছেন

লালমাটিয়ায় কলাকেন্দ্র ও ধানমন্ডির দ্বীপ গ্যালারিতে ছয় শিল্পীর ‘আন্তঃপ্রসঙ্গত’ শিরোনামের যৌথ প্রদর্শনীর কাজগুলোর বিষয় ও ব্যাপ্তি ভাবনার খোরাক জোগায়।

শর্মিলী রহমানের সযত্ন কিউরেশনে ছয় শিল্পীর কাজ দুটো গ্যালারিতে ভিন্ন নকশায় উপস্থাপিত হয়েছে। শিল্পীদের প্রত্যেকের অনুপ্রেরণার উৎস স্বকীয় হলেও কোথাও না কোথাও ভাবনাগুলো এক মোহনায় এসে মেলে। মিলটি হলো, শিল্পীরা প্রত্যেকেই কাজের মধ্য দিয়ে শেকড়ের কাছে ফিরতে চেয়েছেন। পাশাপাশি নাগরিক সমাজে শিল্পী হিসেবে নিজের অবস্থান কী, তা জানার প্রয়াস রয়েছে সবার কাজে। সব মিলিয়ে এই যৌথ প্রদর্শনীর মূল ভাবার্থ হলো, স্বরূপের খোঁজ।

শিল্পীরা প্রত্যেকেই কাজের মধ্য দিয়ে শেকড়ের কাছে ফিরতে চেয়েছেন। পাশাপাশি নাগরিক সমাজে শিল্পী হিসেবে নিজের অবস্থান কী, তা জানার প্রয়াস রয়েছে সবার কাজে।

কুন্তল বাড়ৈর কাজে আছে শহুরে যাপনের মধ্যেও মাটির কাছে ফিরে যাওয়ার বাসনা। অপু রাজবংশী তাঁর ভাস্কর্যে সমুদ্র ও পানির সঙ্গে প্রেমময় বন্ধনে আশ্রয় নিয়েছেন। পূর্বপুরুষের নদী, মাছ, মাঝির সঙ্গে সম্পর্ক সুমন বর্মনের কাঠখোদাইয়ে মূর্ত। তাঁর শহরবাসের গ্লানি প্রকাশ পায় কাঠখোদাইয়ের হাইব্রিড ফর্মের ভাস্কর্যে। ছকে বাঁধা সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতি এ এছেনের প্রতিবাদ ও সংবেদনশীলতা স্পষ্ট হয়ে আছে তাঁর চিত্রকর্ম ও স্থাপনাশিল্প ‘আ সাইলেন্ট কিড ইজ ওয়াচিং ইউ’-তে।

ফারহানা ফেরদৌসির দীর্ঘ সেলাইয়ের ফোঁড় জানিয়ে দেয় পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান। সাদা কাপড়ে লাল সুতোর বুননে তাঁর ক্ষোভ ভাষা পায়।

খন্দকার নাসির আহম্মদ শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন কাগজ কেটে কেটে পুনরাবৃত্তির ছাঁচে ফেলে। তাতে আমাদের লোক–মোটিফের সঙ্গে মিশেছে নারীর অবয়ব। তাঁর মাটির চাকতির ওপর ড্রইংয়েও সেই নারীরূপের প্রতিফলন।

দ্বীপ গ্যালারিতে ঢুকলে হাতের বাঁদিকেই নাসিরের আত্মপ্রতিকৃতিনির্ভর ড্রইংগুচ্ছের মধ্যিখানে অসংখ্য টুকরো আয়না। তিনি যেন দর্শকের গভীরে তাকাতে চান।

কোনো কোনো কাজ আরও খানিকটা পরিসর দাবি করে। যেমন ফারহানা ফেরদৌসির সেলাইয়ের পাশেই নাসিরের সাদা কাগজের কাজ। দুটো শিল্পকর্মেরই মূল রং সাদা এবং বড় পরিসরের। কাজগুলো উপস্থাপনে পরিসরের ভিন্নতা থাকলে আরও উপভোগ্য হতো।

১৭ মে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ২ জুন পর্যন্ত।

অনিন্দ্য নাহার হাবীব