অসুস্থ সময়ের চিহ্ন

‘আত্মসমর্পণ’, শিল্পী: জয়ন্ত মণ্ডল
‘আত্মসমর্পণ’, শিল্পী: জয়ন্ত মণ্ডল

গ্যালারির দেয়ালে ঝোলানো ক্যানভাসে নির্যাতিতা নুসরাতের মুখ ও দেহাবয়ব ঘিরে রয়েছে নিপীড়ক আর ধর্ষকের মুখ ও মুখোশ। এর সঙ্গে শিল্পীকল্পিত বীভৎস জন্তু আর কিছু প্রতীক বা চিহ্ন। দুকদম এগোতেই গ্যালারির মেঝে, শাপলা ভরা জলাধারের তলানিতে টলমলে পানির মধ্যে দেখা গেল নুসরাতের প্রতিকৃতি। একি তাহলে নুসরাতের স্বপ্ন–আকাঙ্ক্ষার বিসর্জন। বুঝতে বাকি রইল না, এ শুধু নুসরাত নয়। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এমন পাশবিক ঘটনা তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের প্রতিনিধিত্ব করছে জয়ন্ত মণ্ডলের একটি চিত্র প্রদর্শনী। নাম ‘রোটেশন অব টাইম’ বা ‘সময়ের আবর্তন’।

 জয়ন্তর চিত্রকলার দৃশ্যচিত্র এসেছে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি সত্য ঘটনা থেকে, দর্শক যা সহজেই মিলিয়ে নিতে পারবেন। শিল্পীর ভাবনা থেকে বাদ পড়েনি গ্রিক পুরাণের অর্ধদেবতা ও অর্ধমানব হিসেবে হারকিউলিসের উপস্থাপনায় বিশেষ এক উদ্ধারকারী যোদ্ধার বিচারকাহিনিও। কিন্তু চিত্রে গ্রিক পুরাণ আসলেও প্রতিটি ঘটনাই তিনি নিয়েছেন বাংলাদেশে সমসাময়িক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে। এমনকি সমাজ ও রাজনীতিসচেতন শিল্পীর চোখে বাদ যায়নি ভারত–বাংলাদেশের আন্তসম্পর্কের টানাপোড়েন ও মানবিক অসংগতি। ‘দ্য স্টোরি অব বর্ডার লাইন’ বা ‘সীমান্তের উপাখ্যান’ শিরোনামের সিরিজ ছবিতে এসব বিষয় যেন দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করে দেখিয়েছেন জয়ন্ত। তবে শুধু নৃশংসতা নয়, অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে সত্যের প্রতিষ্ঠা দেখিয়েছেন এ শিল্পী ‘মিস্ট্রিয়াস মাইগ্রেশন অব হারকিউলিস’ বা হারকিউলিসের রহস্যজনক অভিপ্রয়াণ চিত্রে।

আবার ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ বা আত্মঘাতী দল শীর্ষক স্থাপনা শিল্পে আত্মঘাতী হামলাকারীর চারপাশের ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল আধুনিক অস্ত্র। কালো কাপড় ঘেরা এই স্থাপনাশিল্পটি দেখতে হয়েছে ‘বার্ডস আই ভিউ’ থেকে। অন্ধবিশ্বাসী মানুষ কীভাবে যুদ্ধের পথ বেছে নিয়ে শান্তিকে ধ্বংস করছে, তারই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল এতে।

ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক ও তেলরং মাধ্যমে জয়ন্ত কাজ করেছেন বাস্তবানুগ ধারায়​। এমনকি স্থাপনাশিল্পের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন নিজের আঁকা ক্যানভাস। ফিগারের ভঙ্গির সঙ্গে প্রতীকের গাণিতিক বিন্যাসের এমন সুকৌশল ব্যবহার প্রশংসার যোগ্য বটে। ‘সময়ের দুর্গতিনাশিনী’ সিরিজ চিত্রে তিনি বিষয় ভাবনায় যে বাস্তবানুগ ও অনুভবাচ্ছন্নতার সমন্বয় করেছেন, তা মুগ্ধ করার মতো। ২০১৯ সালে মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতের শ্লীলতাহানি, পরে আগুনে দগ্ধ হওয়া, বিচার চাওয়া—এসব ক্ষেত্রে তাঁর যে যন্ত্রণা, নিজের ছবির মধ্য দিয়ে জয়ন্ত যেগুলো ফুটিয়ে তুলে মূলত সমাজের সুস্থ মানসিকতার সংকটের কথা বলতে চেয়েছেন। উদীয়মান শিল্পীর কাজে সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর কাজের নির্মাণকৌশলে সাধনা, দক্ষতা ও চিন্তার সমন্বয় চোখে পড়ার মতো।

জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১ মার্চ।

>

কোথায় কোন প্রদর্শনী

● নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘জয় বঙ্গবন্ধু’

লা গ্যালারি (আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, ধানমন্ড, ঢাকা)

৬ থেকে ১৪ মার্চ।

● ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টুডিওর চিত্র প্রদর্শনী ‘গুরু-শিষ্য: শিষ্য-গুরু (দ্বিতীয় পর্ব)’

জয়নুল গ্যালারি-১ (চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা)

২ থেকে ৮ মার্চ।

● তারুণ্য কথা আয়োজিত যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘জাগো বহ্নিশিখা’

লবি গ্যালারি, (বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা)

৮ থেকে ১১ মার্চ।

● শেখ আফজালের একক রেখাচিত্র প্রদর্শনী ‘স্বজনঘাতী রেখা’

কলাকেন্দ্র, (১/১১ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা)

২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ।

● রুহুল আমিন তারেকের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘টাইম অ্যান্ড রিয়েলিটি’

গ্যালারি কায়া, (বাড়ি ২০, রাস্তা ১৬, সেক্টর ৪, উত্তরা, ঢাকা)

৬ থেকে ১৭ মার্চ।