‘ছবি আঁকা কিছুটা শিখেছি’

৩০ নভেম্বর বরেণ্য চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুদিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন

কাইয়ুম চৌধুরী (৯ মার্চ ১৯৩২—৩০ নভেম্বর ২০১৪)ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম
অপ্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারটি কাইয়ুম চৌধুরী দিয়েছিলেন ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল, গাজী ভবনস্থ তাঁর স্টুডিওতে বসে। এখানে নিজের বর্ণিল জীবনের বিভিন্ন পর্বের খেরোখাতা মেলে ধরেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মতিন রায়হান
প্রশ্ন:

মতিন রায়হান: শুরুতেই জানতে চাই, আপনার জন্ম ও জন্মস্থান কোথায়?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমার জন্ম ১৯৩৪ সালে, ফেনীতে। ক্ষয়িষ্ণু এক জমিদার পরিবারে। তবে আমার জন্মের সময় পরিবারের বিত্তবেসাত খুব একটা ছিল না। তবে শর্ষদির এই পরিবারে শিক্ষা ছিল, আর লোকজনের ছিল উদার মনমানসিকতা। আমাদের পরিবারের এক সদস্য আমীনুল ইসলাম চৌধুরী—তিনি লিখেছিলেন ‘নোয়াখালীর ইতিহাস’ গ্রন্থ। আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য ছিলেন শিক্ষিত পেশাজীবী। আমার বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর। পরে তিনি কো-অপারেটিভ ব্যাংকের অফিসার হয়েছিলেন। তবে তিনি ছিলেন শিল্প-সাহিত্যে অন্তঃপ্রাণ মানুষ। মা শরফুন্নিসা চৌধুরানী গৃহিণী। আমাদের ৩ ভাই ও ৬ বোনের সংসার। বড় ভাই ছিলেন ফিশারির ডিরেক্টর। ছোট ভাই আবুল কাশেম চৌধুরী ডাক্তার।

প্রশ্ন:

আপনার বেড়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: বাবার বদলির চাকরির সুবাদে আমার ছেলেবেলা কেটেছে নানা জায়গায়। কুমিল্লা, নড়াইল, চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে। শৈশবের কিছুকাল কুমিল্লায় কাটিয়ে যাই চিত্রাপাড়ের নড়াইলে। সেখানে কাটে তিন-তিনটি বছর। আমাদের বাড়িতে ছিল বইপত্রের বিশাল ভান্ডার। ডাকযোগে নিয়মিত আসত ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘মানসী ও মর্ম্মবাণী’, ‘বঙ্গশ্রী’র মতো সাহিত্যপত্রিকা। আমাদের পারিবারিক সংগ্রহে ছিল বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’-এর অনেক পুরোনো সংখ্যা। কলের গান আর গ্রামোফোন রেকর্ডের সংগ্রহ তো ছিলই। বাবার সামাজিক যোগাযোগ ছিল বেশ বিস্তৃত। নোয়াখালীতে গোপাল হালদারের সঙ্গে ছিল বাবার বেশ সখ্য। কুমিল্লায় ক্ল্যাসিক গানের ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু ও শচীন দেববর্মনের সঙ্গেও ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। আর চট্টগ্রামের আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে ছিল পারিবারিক যোগাযোগ। এ রকম পরিবেশেই আমি বেড়ে উঠেছি।

প্রশ্ন:

পড়ালেখার হাতেখড়ি কীভাবে হলো?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি মক্তবে। তারপর আমাকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রামের নর্মাল স্কুলে। এটাই আমার প্রথম স্কুল। কিছুকাল কাটে কুমিল্লা ও নড়াইলে। নড়াইল থেকে আসার পর সন্দ্বীপ হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে কারগিল হাইস্কুলে। তত দিনে স্কুলের কিছুটা উঁচু ক্লাসে উঠে গেছি। সন্দ্বীপ হাইস্কুলের মৌলভি স্যারকে গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। বাবার উদ্দেশ্য—ছেলেকে আরবি ভাষায় সবক ও নামাজ শিক্ষাদান। মৌলভি স্যারকে নিয়ে একটি স্মৃতি আজও মনে পড়ে। স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মৌলভি স্যার হারমোনিয়াম বাজিয়ে গেয়েছিলেন অতুলপ্রসাদের গান, ‘সবারে বাসরে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে না রে’। স্যারের কী উদার মানসিকতা ছিল!

সন্দ্বীপের পর আমাদের কিছুকাল কাটে নোয়াখালী সদরে। তারপর ফেনী শহরে। তখন আমাকে ভর্তি করা হয় ফেনী হাইস্কুলে। তারপর বাবার বদলিসূত্রে ফরিদপুরে যাই। ফরিদপুর থেকে ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহে ভর্তি হই সিটি কলেজিয়েট স্কুলে। এখান থেকেই দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করি ১৯৪৯ সালে।

প্রশ্ন:

আর্টস ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেন কখন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ১৯৪৯ সালেই। তখনো আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়নি।

প্রশ্ন:

সাধারণ লেখাপড়া ছেড়ে চিত্রকলা পড়তে আগ্রহী হলেন কেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: এবার একটু পেছনে যেতে হবে। আগেই বলেছি, আমাদের বাড়ির পরিবেশ ছিল শিল্প-সাহিত্যের অনুকূল। বাড়িতে যেসব সাহিত্যপত্রিকা আসত, তাতে থাকত অবন ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিনোদবিহারীর আঁকা ছবি। এসব রঙিন ছবি দেখে ছবির প্রতি আমার ভালোবাসা জাগে। মনে শিল্পী হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছেও ছিল। প্রচণ্ড অঙ্কভীতি ছিল বলেই জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করার কোনো ইচ্ছে ছিল না। স্কুলজীবনে দেয়ালপত্রিকা ও ম্যাগাজিন সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এসব নানা কারণেই চারুকলায় ভর্তি হলাম। তবে আরও কিছু কথা বলা দরকার। আমাদের সময় আঁকাআঁকি শিখতে হলে যেতে হতো কলকাতায়। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করা আমার পরিবারের সাধ্যের বাইরে ছিল। মজার ব্যাপার কি, আমি যে বছর ম্যাট্রিক পাস করি, তার আগের বছরই ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আর্টস ইনস্টিটিউট। আর এই আর্টস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ফলে আমার ইচ্ছের পালে যেন অনুকূল হাওয়া লাগে। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন ময়মনসিংহের শিল্পী জয়নুল আবেদিন। স্কুলজীবনে আমার আঁকাআঁকির ঝোঁক সম্পর্কে বাবা অবগত ছিলেন। তখন তো আমরা ময়মনসিংহেই থাকি। ছুটি কাটাতে শিল্পী জয়নুল আবেদিন তখন ময়মনসিংহে এসেছেন। আকুয়ার পুকুরঘাটে তাঁকে প্রথম দেখি। তিনি স্নান করছিলেন। বাবাকে সে-কথা জানাই। আমার আগ্রহে বাবা জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং আর্টস ইনস্টিটিউটে ভর্তির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করলেন। তারপর জয়নুল আবেদিন বাবাকে বললেন আমাকে ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করাতে। ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে ১৯৪৯ সালের শেষ দিকে আমাকে আর্টস ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলো।

প্রশ্ন:

আপনি তো আর্টস ইনস্টটিউিটে ভর্তি হয়ে গেলেন। সে সময়ে চারুকলা শিক্ষার পরিবেশ কেমন ছিল?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমার ভর্তি হওয়ার আগের বছর ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জংশন রোডে ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের ছোট দুটি কক্ষে চারুকলা ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল ‘গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট’। আমরা ছিলাম ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচ। ১৯৬৩ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে এনে ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট’ নামকরণ করা হয়।

ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর ঢাকায় বোনের বাসা থেকে ক্লাস করতে শুরু করি। বাবা মাসোহারা দেন চার টাকা। সহপাঠী হিসেবে পেলাম রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, আবদুর রাজ্জাক, আলী হুমায়ুনকে। সবাই সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। দেশভাগের পর জেলা শহর ঢাকা কেবল প্রাদেশিক রাজধানী হয়েছে। দ্রুত শহরের পরিধি বাড়ছে। তবে শহরের মানুষের সঙ্গে গ্রামের মানুষের ছিল নিবিড় যোগাযোগ।

১৯৫২ সালের শেষ দিকে সেগুনবাগিচায় একটি সুন্দর দোতলা বাড়িতে ইনস্টিটিউট স্থানান্তরিত হয়। বাড়িটিতে ছিল সুদৃশ্য ফুলের বাগান। আর বাড়ির সামনে দারুণ একটি মাঠ। এরপর শুরু হয় ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ। মেধাবী তরুণ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ভবনের নকশা তৈরি করলেন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো চারুকলা ইনস্টিটিউট। ঢাকার বুকে এটিই তখন আধুনিক স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। শিল্পী-শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে নতুন উদ্যমে শুরু হলো চারুকলা শিক্ষার আয়োজন। জয়নুল স্যার সহযোগী হিসেবে পেলেন শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক স্যারদের মতো প্রতিভাবান শিক্ষককে। সে সময় চারুকলা প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে ঢাকার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মানুষের মিলনকেন্দ্র। জয়নুল স্যার ছিলেন দূরদর্শী মানুষ। তিনি আর্টস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কবি জসীমউদ্দীন, শামসুদ্দিন আবুল কালাম, আব্বাসউদ্দীন, কানাইলাল শীল, মমতাজ আলী খানের মতো খ্যাতিমান মানুষের। ঢাকা আর্ট গ্রুপ গঠন করে এর সঙ্গে যুক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্টজনদের। ছাত্রদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ফজলে লোহানী, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিসুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মতো মেধাবী তরুণদের।

জয়নুল স্যারের শিক্ষাপদ্ধতি আমরা খুব এনজয় করতাম। কলেজে তখন কম্পোজিশনের কাজ করছি। গোয়ালঘরে বাছুরসহ গরু দাঁড়িয়ে আছে। দরজার সামনে ইজেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ড্রয়িং করে রং চাপিয়েছি মাত্র। এমন সময় জয়নুল স্যার আমার হাত থেকে তুলি নিয়ে বললেন, গরুটা তুমি এঁকেছ? আমি বললাম, জি। তারপর তিনি বাছুরের ছবি আঁকলেন। বাছুরটা যেন লাফাচ্ছে। হরিণের মতো পা। এই হলেন জয়নুল স্যার
প্রশ্ন:

চারুকলায় ছাত্র থাকাকালে সে সময়ের স্মরণীয় কোনো স্মৃতির কথা আমাদের বলবেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ১৯৫১ সালে ঢাকা আর্ট গ্রুপের প্রথম চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল দর্শনীর বিনিময়ে। মূলত এটি ছিল আর্টস ইনস্টিটিউটের বার্ষিক প্রদর্শনী। প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছিল কার্জন হলের পেছন দিককার লিটন হলে। শিক্ষক ও ছাত্রদের আঁকা ছবি নিয়ে এই প্রদর্শনী। ঢাকায় টিকিট কেটে ছবি দেখার ঘটনা এই প্রথম। বেশ দর্শক সমাগমও হয়েছিল।

প্রশ্ন:

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমি তখন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনে আমাদের ইনস্টিটিউটের ছাত্ররাও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। আমরা প্রতিবাদী সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে ইমদাদ হোসেন, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, দেবদাস চক্রবর্তীর কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। ওরা ছিল আন্দোলনের পুরোভাগে। ১৯৫২ সালের একটি ঘটনার কথা না বললেই নয়। ঢাকা আর্ট গ্রুপের দ্বিতীয় বার্ষিক প্রদর্শনী উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হলো ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। বুঝতেই পারছ, দিনটি ২১ ফেব্রুয়ারির পরের দিন। প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন গভর্নরপত্নী ভিকারুননিসা নূন। প্রদর্শনস্থল নিমতলীর ঢাকা জাদুঘর। পাঞ্জাবি ইতিহাসবিদ আহমদ হাসান দানী তখন ঢাকা জাদুঘরের পরিচালক। তাঁর সঙ্গে জয়নুল স্যারের খুব চমত্কার সম্পর্ক। জাদুঘরের নিজস্ব প্রদর্শন কক্ষ খালি করে আমাদের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনী আয়োজন সম্ভব হয়নি। কারণ, ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের প্রতিবাদী মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে প্রদর্শনী পরিত্যক্ত হয়।

প্রশ্ন:

এবার আপনার চারুকলার সহপাঠী বন্ধুদের সম্পর্কে জানতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: আমার সহপাঠী বন্ধু রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, আবদুর রাজ্জাক, আলী হুমায়ুন প্রমুখ। সবচেয়ে কাছের বন্ধু মুর্তজা বশীর। তাঁর বাবা বিখ্যাত ভাষাবিদ পণ্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। ওর সঙ্গে সবকিছু বিনিময় করতে পারতাম। একসঙ্গে ছবি আঁকতাম, সিনেমা দেখতাম। ওর ছিল খুব সাহিত্যপ্রীতি। একবার রং কিনতে গেলাম আরমানিটোলার ওয়ারসি বুক কর্নারে। সঙ্গে আছে মুর্তজা বশীর। এই দোকানে কলকাতা থেকে আসত বিখ্যাত সব বই। ছবি আঁকার রং আসত ইংল্যান্ড থেকে। বইয়ের সঙ্গে এখানে মিলত ছবি আঁকার সব সরঞ্জামও। সেদিন বই ও রং কিনতে গেলে বশীর বলল, এসব আমার কাছে আছে, আমার কাছ থেকে নিয়ো। তখন বুঝতাম, বন্ধুর প্রতি ওর ভালোবাসা কতটা গভীর।

চারুকলার সহপাঠীদের সঙ্গে তখন সদ্ভাব-সম্প্রীতি তো ছিলই, এমনকি ঢাকার তরুণ কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের সঙ্গেও ছিল দারুণ সখ্য। জয়নুল স্যারের বদান্যতায় এমন চমত্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আমার আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দ শামসুল হক। ওর সঙ্গে রাতও কাটিয়েছি। এ ছাড়া বন্ধুতালিকায় আছেন শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সমর দাস, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। এদের সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি, কত কাজ করেছি একসঙ্গে।

প্রশ্ন:

ঢাকায় চারুকলা শিক্ষার প্রথম যুগে স্যারদের শিক্ষাপদ্ধতি কেমন ছিল?

কাইয়ুম চৌধুরী: জয়নুল স্যারের শিক্ষাপদ্ধতি আমরা খুব এনজয় করতাম। কলেজে তখন কম্পোজিশনের কাজ করছি। গোয়ালঘরে বাছুরসহ গরু দাঁড়িয়ে আছে। দরজার সামনে ইজেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ড্রয়িং করে রং চাপিয়েছি মাত্র। এমন সময় জয়নুল স্যার আমার হাত থেকে তুলি নিয়ে বললেন, গরুটা তুমি এঁকেছ? আমি বললাম, জি। তারপর তিনি বাছুরের ছবি আঁকলেন। বাছুরটা যেন লাফাচ্ছে। হরিণের মতো পা। এই হলেন জয়নুল স্যার। জয়নুল স্যার আমাদের শিল্পদৃষ্টি খুলে দিয়েছিলেন। সফিউদ্দিন স্যার ছিলেন শিল্পের শুদ্ধাচারী মানুষ। উড এনগ্রেভিং, এচিং এবং ড্রাই পয়েন্টে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ছাপচিত্রে তাঁর দক্ষতা ছিল অতুলনীয়। কামরুল হাসানের ছিল লোকায়ত দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যান্য শিক্ষকও ছিলেন নিবেদিত ও ছাত্র-অন্তঃপ্রাণ। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ছিল এ রকমই শ্রদ্ধা ও স্নেহের।

প্রশ্ন:

কখন শেষ হলো আপনার চারুকলার পড়াশোনা? তারপরই কি কর্মজীবন শুরু হলো?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমি আর্টস ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৪৯ সালে। পড়াশোনা শেষ হলো ১৯৫৪ সালে। পাঁচ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স। দুই বছর প্রিলিমিনারি। ড্রয়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্টে। দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ২২। পাস করার পর তক্ষুনি কোনো চাকরিতে জয়েন করিনি। নানা রকম কাজ করতে শুরু করি। পাঠ্যবইয়ের কভার ও ইলাস্ট্রেশনের কাজ করছি। কভারের জন্য পেতাম ২৫ টাকা আর ইলাস্ট্রেশনের জন্য ৫ টাকা। বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজও করছি। সত্যজিৎ রায় তখন সিগনেটের প্রকাশনার শিল্পনির্দেশনার কাজ করছেন। ঢাকায় তখন সিগনেটের বই পাওয়া যেত। এসব বইয়ের প্রচ্ছদ, লিপিবিন্যাস, নামপত্র, পৃষ্ঠাসজ্জা ও বাঁধাই আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে। প্রচ্ছদ অঙ্কন ও বইয়ের অঙ্গসজ্জায় আমি তখন নতুন নতুন চিন্তার প্রয়োগ ঘটাই। সিনেমার পাবলিসিটির কাজও তখন করছি। কিছুকাল যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছি চলচ্চিত্র সাময়িকী ‘ছায়াছবি’। তখনই পরিচয় ঘটে সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে। কাজ করেছি বন্ধু গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদের ‘সচিত্র সন্ধানী’পত্রিকায়ও।

প্রশ্ন:

আপনার প্রথম চাকরি কোথায়?

কাইয়ুম চৌধুরী: স্টার অ্যাডভারটাইজিংয়ে আমার প্রথম চাকরি। মাসিক বেতন ১৫০ টাকা। স্টার ফিল্ম করপোরেশন তাদেরই। তারা ইন্ডিয়া থেকে ছবি আমদানি করত। জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবির পাবলিসিটি ওয়ার্ক আমারই করা। এ ছাড়া ‘মুখ ও মুখোশ’, ‘শীত বিকেল’ ইত্যাদি সিনেমার পোস্টার, বিজ্ঞাপনের ডিজাইনও আমি করেছি।

প্রশ্ন:

আর্টস ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন কখন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ১৯৫৭ সালে। শিক্ষকতার পাশাপাশি সমানতালে বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণের কাজও করছি। সেই বছরের একটি স্মরণীয় স্মৃতি আছে। কলকাতা সফর। সতীর্থ আমিনুল ইসলাম ও সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে কলকাতা সফরে গিয়েছিলাম। এ সফরে সাক্ষাৎ হয়েছিল সত্যজিৎ রায় ও খালেদ চৌধুরীর সঙ্গে। কোন সূত্রে এই সফরে গিয়েছিলাম, সেটা বলা দরকার। ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলের তরুণ কর্মকর্তা জিওফ্রে হেডলি। ওর সঙ্গে আমাদের বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। হেডলি কলকাতা বদলি হয়ে গেলে সেখানে যেতে আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। ওর আমন্ত্রণেই আমরা তিন সতীর্থ কলকাতা ঘুরে আসি। বলতে পারি, এই সফর থেকে আমরা শিল্পের রসদ নিয়ে ফিরেছিলাম।

প্রশ্ন:

আর্টস ইনস্টিটিউটে কখন থেকে নারী–পুরুষ এক সঙ্গে পড়তে শুরু করল?

কাইয়ুম চৌধুরী: ১৯৫৪ সালে প্রথম ৪ জন ছাত্রী আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। বলা যায়, তখন থেকেই কো-এডুকেশন শুরু হলো। এই চারজনের একজন তাহেরা খানম। ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই।

প্রশ্ন:

আপনি তো একসময় আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা ছেড়ে শিল্পী কামরুল হাসানের সঙ্গে ডিজাইন সেন্টারে যোগ দিয়েছিলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। এটা আমার বিয়ের বছরের ঘটনা। জয়নুল স্যারের ইচ্ছে ছিল, ডিজাইন সেন্টারটি আর্ট কলেজের সঙ্গে যুক্ত থাকুক। কিন্তু কামরুল স্যার সেটা চাননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। অবশ্য আমি এই বিরোধের বাইরে ছিলাম। দুজনের সঙ্গেই ছিল আমার শ্রদ্ধার সম্পর্ক। কামরুল স্যার ছিলেন ডিজাইন সেন্টারের পরিচালক। স্যারের আগ্রহেই আমি নকশাবিদ হিসেবে ডিজাইন সেন্টারে যোগ দিয়েছিলাম। পরে স্যারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টারের চাকরিতে ইস্তফা দেই। এখানে মাত্র এক বছর কাজ করেছি।

প্রশ্ন:

চাকরি ছেড়ে তারপর কী করলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমি তখন বেকার। এখানে-সেখানে আড্ডা মারি। তখন বন্ধু সৈয়দ শামসুল হক সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’তে কাজ করেন। ‘চিত্রালী’তে আড্ডা দিই।‘ চিত্রালী’ ও ‘পূর্বদেশ’ অবজারভার গ্রুপের পত্রিকা। তিনটি পত্রিকাই অবজারভার হাউস থেকে প্রকাশিত হয়। তখন এই গ্রুপের পত্রিকায় কাজ করেন একদল মেধাবী তরুণ লেখক ও সাংবাদিক। অবজারভার গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের ম্যানেজিং এডিটর কবি আবদুল গনি হাজারী। একদিন তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি এখানে কী করো? ’আমি বললাম, ‘আড্ডা দেই।’ তিনি বললেন, ‘তুমি আমাদের এখানে জয়েন করো।’ তারপর আমি সে বছরই অবজারভার হাউসে চিফ আর্টিস্ট হিসেবে জয়েন করলাম। মাঝেমধ্যে বিশেষ করে রোববারে জয়নুল স্যারের বাসায় আড্ডা দিই। রোববার আমার ডে-অফ। সেখানে আড্ডা দিতেন কবি জসীমউদ্দীন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, কবি-সাংবাদিক সাইয়িদ আতীকুল্লাহ। অবজারভারের রবিবারের সাময়িকীতে ডিজাইন ও ইলাস্ট্রেশন নিয়ে নানা নিরীক্ষা করি। এসব জয়নুল স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একবার এক বিশেষ সংখ্যায় নৌকার গলুই, ছই, নৌকার আকার ইত্যাদি ডিজাইনে ছেঁকে তুলেছিলাম। জয়নুল স্যার তা দেখে খুবই প্রশংসা করলেন। বললেন, এসব ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলো। স্যারের এই উত্সাহ আমার কাজে দারুণ প্রেরণা জোগাত। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত অবজারভার হাউসে কাজ করি।

প্রশ্ন:

তারপর তো আবার ফিরে গেলেন আর্ট কলেজে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

কাইয়ুম চৌধুরী: হ্যাঁ, সেটা ১৯৬৫ সালের কথা। আমি আবারও আর্ট কলেজে যোগ দিলাম। এটা সম্ভব হয়েছে জয়নুল স্যারের কারণেই। স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। এটা তাঁর কারণেই সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন:

এবার আপনার ছবির গল্প শুনতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: ছবির গল্প শুনবে? বলছি, শোনো। ১৯৬২ সালে ‘বটম’ ছবির জন্য পেইন্টিংয়ে আমি পাকিস্তানের জাতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার পাই। ১৯৬১ সালের শেষ দিকে বিভিন্ন শিল্পীর ১৮৩টি শিল্পকর্ম নিয়ে লাহোরে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীর টাইটেল ছিল ‘ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিংস, স্কাল্পচার অ্যান্ড গ্রাফিক আর্টস’। আর নভেরা আহমেদের ‘দ্য চাইল্ডস হেড’ জিতেছিল ভাস্কর্য বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। পেইন্টিংয়ে দ্বিতীয় পুরস্কার পান পশ্চিম পাকিস্তানের এস. সফদর আলী।

আমার এই পুরস্কার পাওয়াকে কেন্দ্র করে এক মজার ঘটনা ঘটেছিল। তখন আমি জয়নুল আবেদিন স্যারের প্রতিবেশী। নয়াপল্টনে থাকি। দিনটি ছিল রোববার। সেদিন রাত বারোটায় আজিমপুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে সস্ত্রীক বাসায় ফিরেছি কেবল। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলেই দেখি, বন্ধু জুনাবুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে। জুনাবুল জয়নুল স্যারের ছোট ভাই। বললেন, ‘মিয়া ভাই আপনারে ডাকে।’ সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম স্যারের বাসায়। গিয়ে দেখি স্যার খালি গায়ে বসে আছেন। পরনে লুঙ্গি, গেঞ্জিটা কাঁধের ওপর রাখা। আমাকে কাছে ডাকলেন। কাছে যেতেই আচমকা একটা চড় মারলেন আমার গালে। আমি তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। চড়টা মেরেই সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একেবারে বুকের কাছে টেনে নিলেন। বললেন, ‘সন্ধেবেলা আমার কাছে লাহোর থেকে একটা টেলিগ্রাম এসেছে। তুমি ন্যাশনাল এক্সিবিশনে পেইন্টিংয়ে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছ। ’প্রিয় শিক্ষকের কাছ থেকে এমন একটা আনন্দ সংবাদ শুনে আমি তো রীতিমতো বিহ্বল! জীবনের প্রথম এবং এত বড় স্বীকৃতি! চোখে জল এসে গেল।

১৯৬৬ সালে পঞ্চম তেহরান বিয়েনালে আমি ও আমিনুল ইসলাম ইরানের সর্বোচ্চ ‘রাজকীয় দরবার পুরস্কার’ লাভ করি। পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইরানের শিল্পীদের চিত্রকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল তেহরানের নৃতত্ত্ব জাদুঘরে। প্রদর্শনীর যৌথ আয়োজক ছিল ইরানের শিল্প-সংস্কৃতি দপ্তর ও আরসিডি। জুরিবোর্ডে অংশগ্রহণকারী দেশ ছাড়াও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইতালির বিচারকেরা ছিলেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ১০ হাজার দিনার।

প্রশ্ন:

আপনি কি শুধু চিত্রশিল্পীই হতে চেয়েছিলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ছবি আঁকতে চেয়েছিলাম। চিত্রশিল্পী তো অনেক বড় ব্যাপার। তবে বলতে পারি, ছবি আঁকা কিছুটা শিখেছি।

প্রশ্ন:

চিত্রকলার কোন মাধ্যমটি আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দ?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমার প্রিয় মাধ্যম তৈলচিত্র। তারপর জলরং। ড্রয়িং করতে খুব ভালো লাগে। চারুকলার বর্ণমালা ড্রয়িং।

প্রশ্ন:

এ পর্যন্ত কত ছবি এঁকেছেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: হাজার তিনেক তো হবেই।

প্রশ্ন:

আপনার আঁকা সেরা কিছু চিত্রকর্মের কথা আমাদের বলবেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: এটা বলা খুব কঠিন। কারণ মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। চিত্রকর্মের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে কিছু কিছু চিত্রকর্মের ক্ষেত্রে পক্ষপাত তো আছেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আঁকা ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘দগ্ধ গ্রাম’, ‘বাংলাদেশ ’৭১’, ‘স্বাধীনতা’, ‘মৃত জেলেরা’, ‘প্রতিবাদ’, ‘জ্বলন্ত গ্রাম’, ‘জ্বলন্ত ঘাট’, ‘গণহত্যা’, ‘শহীদ ’৭১’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘জয় বাংলা’ ইত্যাদি। এ ছাড়া আরও কিছু পছন্দের চিত্রকর্মের কথা বলতে পারি। যেমন‘শৈশব স্মৃতি’, ‘জলমগ্ন গ্রাম’, ‘চন্দ্রালোকে নৌকা’, ‘পালতোলা নৌকা’, ‘গ্রাম্য বালিকা’, ‘নদীর ধারে’, ‘সেতু ও গরু’, ‘আমার গ্রাম’, ‘দুপুরের নদী’, ‘জোয়ার’, ‘জলকে চল’, ‘কাঁথা সেলাই’, ‘সবুজ মাঠ’, ‘ঘুড়ি ওড়ানো’, ‘কাক, মহিলা ও বিড়াল’, ‘রমণী’, ‘বসন্ত’, ‘নৌকাযাত্রা’, ‘শাপলা তোলা’, ‘আমার বোন’, ‘মহাজন’, ‘নিশ্চল নৌকা’, ‘গ্রীষ্মের দুপুর’, ‘জলের ধারে’, ‘আঙিনা’, ‘বেদে’, ‘প্রিয়া’, ‘নিদাঘ’, ‘ঘরে ফেরা’ ইত্যাদি।

মানুষের সৌজন্যবোধ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটা খুব পীড়াদায়ক। আমরা আমাদের সিনিয়রদের যেভাবে দেখতাম, এখনকার তরুণেরা সেভাবে দেখে না। প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতাও এর পেছনের অন্যতম কারণ হতে পারে। এখনকার তরুণেরা অনেক স্মার্ট, কিন্তু বিনয় একটু কম। মূল্যবোধ শিক্ষার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে।
প্রশ্ন:

আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ঢাকাতেই ছিলাম। তখন অবরুদ্ধ জীবন। আজিমপুরে থাকতাম। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে অসহযোগ আন্দোলনের সময় চারু ও কারুশিল্পীদের যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, এর আহ্বায়ক ছিলাম আমি ও মুর্তজা বশীর।

প্রশ্ন:

আপনি তো মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক ছবি এঁকেছেন। সেসব ছবি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

কাইয়ুম চৌধুরী: মুক্তিযুদ্ধ আমাকে ভীষণ রকম প্রভাবিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদারদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি নানা বিষয় আমার ছবিতে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আঁকা আমার চিত্রকর্মগুলোই এর প্রমাণ। বলতে দ্বিধা নেই, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ লাভ করেছি। পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে নতুন প্রাণ দিয়েছে।

কাইয়ুম চৌধুরী
প্রশ্ন:

বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কনে আমাদের দেশে আপনি একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করেছেন। এবার আপনার প্রচ্ছদ আঁকার গল্প শুনতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: প্রচ্ছদ অঙ্কনে স্বতন্ত্র ধারা তৈরি হয়েছে কি না জানি না। তবে বহু প্রচ্ছদ এঁকেছি; কখনো অর্থের প্রয়োজনে, কখনোবা মনের আনন্দে। ধারণা করি, সাত-আট হাজার বইয়ের প্রচ্ছদ তো এঁকেছি। তবে শুরুর দিকে আঁকা স্মরণীয় প্রচ্ছদের মধ্যে রয়েছে শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। এটি ১৯৫৯ সালে বার্ডস অ্যান্ড বুকস প্রকাশ করেছিল। এ ছাড়া সন্ধানী প্রকাশনীর জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, মাওলা ব্রাদার্সের আবদুশ শাকুরের ‘ক্ষীয়মাণ’ ও সৈয়দ শামসুল হকের ‘একদা এক রাজ্যে’ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ আমার আঁকা।

প্রশ্ন:

বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে আপনি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন। এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: একসময় পূর্ববঙ্গে রেলওয়ে দপ্তর ছিল বড় সরকারি সংস্থা। ষাণ্মাসিক রেলের টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ নকশা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হতো। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল বেশ সম্মানজনক। ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে রেলওয়ে টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে আমি প্রথম পুরস্কার পাই। ১৯৬৪ সালে কবি জসীমউদ্দীনের ‘জীবনকথা’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকে পাই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার। এই পুরস্কার যেন আমি ধারাবাহিকভাবে পেতে থাকি। শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদের জন্য দশ-এগারোবার আমি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পুরস্কার পাই। ১৯৭৫ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্বর্ণপদকপ্রাপ্তি উপলক্ষে তাদের উদ্যোগেই শুধু বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে একটি একক প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন:

আপনি তো একসময় চলচ্চিত্র পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। কীভাবে এখানে এলেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: আগেই বলেছি, আমি একসময় সিনেমার পাবলিসিটির কাজ করতাম। জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ ছবির পাবলিসিটি ওয়ার্ক আমারই করা। চলচ্চিত্রের পোস্টার, বিজ্ঞাপনের ডিজাইন করতাম। ১৯৬৫ সালে বন্ধু সৈয়দ শামসুল হক উর্দুতে সিনেমা বানালেন। ছবির নাম ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’। আমাকে করা হলো ছবির সহকারী পরিচালক। প্রশ্ন উঠতে পারে, সিনেমাটি উর্দুতে কেন? সমগ্র পাকিস্তানের বাজারের কথা ভেবেই উর্দু ভাষায় ছবি তৈরি করা হলো।

প্রশ্ন:

আমরা জানি, আপনি ছবি আঁকার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন। এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমি মূলত ছড়া লিখি। ষাটের দশকে আমার ছড়াগ্রন্থ ‘তাই তাই তাই’ প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রকাশক ছিল সন্ধানী প্রকাশনী। বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ আমিই করেছিলাম। সম্ভবত ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছিল আমার ছড়ার বই ‘দাপু সোনার জন্যে’। আরও দুটি ছড়ার পাণ্ডুলিপি তৈরি আছে। একটি ‘রং ঝিলমিল’ ও অন্যটি ‘ফুসমন্তর’। এ ছাড়া আমার গ্রাফিক ডিজাইনের ভালো কাজগুলো নিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি।

প্রশ্ন:

আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে আছে?

কাইয়ুম চৌধুরী: ইচ্ছে আছে। টুকটাক লিখে রাখছি, যখন যা মনে আসে।

প্রশ্ন:

আপনি তো জীবনে নানা রকম কাজ করেছেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজ, সিনেমার পোস্টার তৈরি, সিনেমা পরিচালনা, বিজ্ঞাপনের ডিজাইন, বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কন, পত্রপত্রিকায় ডিজাইনের কাজ ইত্যাদি। এত সব নানামুখী কাজ কি আপনার শিল্পসাধনায় ব্যাঘাত ঘটায়নি?

কাইয়ুম চৌধুরী: কিছুটা ব্যাঘাত তো নিশ্চয়ই ঘটিয়েছে। এসব নানা রকম কাজ করতে হয়েছে প্রধানত জীবিকার প্রয়োজনেই। অর্থনৈতিক প্রয়োজনও ছিল। অনেক ভাইবোন আমাদের। বাবার কথা ভেবেই এসব করতাম। তবে আনন্দ যে একেবারেই ছিল না, সেটাও ঠিক নয়। তবে এসব নানা রকম কাজ করে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, জীবনে কখনো কখনো সে অভিজ্ঞতা কাজেও লেগেছে।

প্রশ্ন:

ছবি আঁকা ছাড়া বিশেষ কোনো বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে?

কাইয়ুম চৌধুরী: আমি নানা রকম গান শুনতে শুনতে শৈশবে বেড়ে উঠেছি। বাড়িতে ছিল গ্রামোফোন রেকর্ডের বড় সংগ্রহ। গান শোনা ও বই পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ শৈশব থেকেই। বলতে পারি, নেশার মতোই ছিল। গান শুনতে আমি খুব ভালোবাসি। ভারতীয় ক্ল্যাসিক গানের কালেকশন আছে আমার।

প্রশ্ন:

আপনার প্রিয় চিত্রশিল্পী কারা?

কাইয়ুম চৌধুরী: জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, মনিরুল ইসলাম। ছাত্রজীবনে মুগ্ধ ছিলাম ভ্যান গঘ, পিকাসোতে। অস্ট্রিয়ান পেইন্টার ইগন শিলের কাজ ভালো লাগে। ফিগারেটিভ ছবি আঁকেন। তাঁর ড্রয়িংয়ের কোয়ালিটি অসাধারণ।

প্রশ্ন:

এ পর্যন্ত আপনার কয়টি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এসব প্রদর্শনী সম্পর্কে জানতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: এ পর্যন্ত আমার পাঁচটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। এর আয়োজক ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। প্রদর্শনীটি বেশ বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়। ১১১টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল এ প্রদর্শনীতে। এর মধ্যে ৪৫টি চিত্রকর্ম মুক্তিযুদ্ধের আগে আঁকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৬টি তৈলচিত্রও এ প্রদর্শনীতে স্থান পায়। চিত্রকর্মগুলো ছিল ‘বাংলাদেশ ’৭১’, ‘শহীদ ’৭১’, ‘গণহত্যা’, ‘দগ্ধ গ্রাম’, ‘মৃত জেলেরা’ও ‘জ্বলন্ত ঘাট’। এ ছাড়া সাম্প্রতিক কালের আঁকা ‘শৈশব স্মৃতি’ পর্যায়ের ১০টি তৈলচিত্রও প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছিলেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ড. এ বি এম হাবিবুল্লাহ। প্রদর্শনীতে শিল্পপ্রেমী মানুষের বেশ ভিড় হয়েছিল এবং পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে নিউজ ও চিত্রসমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল।

আমার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সে বছরই ইংল্যান্ড ও আমেরিকা সফরে যাই। আমেরিকা সফরকালে ছোট আকারের একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। এটি আমার দ্বিতীয় চিত্র প্রদর্শনী। ১৯৯৯ সালে শিল্পাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমার তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘সমকালীন চিত্রকর্ম’। এতে তখনকার আঁকা ১২৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল। অধিকাংশ তেলরঙের কাজ হলেও জলরং, অ্যাক্রিলিক, প্যাস্টেল, গুয়াশ কাজও প্রদর্শনীতে স্থান পায়। প্রায় অধিকাংশ ছবির উপজীব্য ছিল গ্রাম ও গ্রামজীবন। এ ছাড়া ২০০৪ ও ২০০৭ সালে আমার আরও দুটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুটি প্রদর্শনীর আয়োজক বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বহু গ্রুপ এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছিল।

প্রশ্ন:

ছবি নিয়ে আগামী দিনে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?

কাইয়ুম চৌধুরী: হ্যাঁ, একটি প্রদর্শনীর জন্য ছবি আঁকছি। আমার দেখা নকশিকাঁথার মোটিফ আঁকছি। প্রদর্শনীর নাম রাখা হয়েছে ‘যুগলবন্দি’। আমার স্ত্রী শিল্পী তাহেরা খানমের সঙ্গে এটি যৌথ প্রদর্শনী। আগামী জুলাইয়ে প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হবে। এর আয়োজক বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস।

প্রশ্ন:

ছবি আঁকার জন্য কী কী জাতীয় পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ১৯৭৭ সালে পেয়েছি শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার। একুশে পদক পেয়েছি ১৯৮৪ সালে। (অবশ্য ২০১৪ সালে মৃত্যুর আগে পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার।) এ ছাড়া আরও বহু বেসরকারি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছি।

মতিন রায়হান: শিল্পচর্চার সূত্রে কোন কোন দেশ ভ্রমণ করেছেন?

কাইয়ুম চৌধুরী: ইংল্যান্ড, আমেরিকা, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মালয়েশিয়া, ভারত।

প্রশ্ন:

এবার আপনার সংসারজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

কাইয়ুম চৌধুরী: আগেই বলেছি, আমার স্ত্রী শিল্পী তাহেরা খানম। আমাদের এক ছেলে। মইনুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক। ওর স্ত্রী মৃত্তিকা সহিতা। মৃত্তিকাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ও ইতিহাস পড়ায়। মৃত্তিকা আবুল মোমেনের মেয়ে। আবুল ফজলের নাতনি। স্কলারশিপ নিয়ে দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছে। মইনুল আছে ওহাইওতে। মৃত্তিকা নিউইয়র্কে।

প্রশ্ন:

আপনার প্রতিদিন কীভাবে কাটে?

কাইয়ুম চৌধুরী: সকাল সাড়ে ৬টা-৭টায় ঘুম থেকে উঠি। তারপর রমনা পার্কে হাঁটতে যাই। ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটি। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করি। কিছু সময় পত্রপত্রিকা পড়ি। তারপর গোসল সেরে নিই। আমার স্টুডিও গাজী ভবনে। তারপর গাজী ভবনে যাই। ছবি আঁকি। প্রথম আলোতে কাজ করি। ঘরে বসেই। মাঝেমধ্যে ‘প্রথম আলো’ অফিসে যাই।

প্রশ্ন:

বর্তমানে প্রজন্ম-ব্যবধানটা কেমন? বিশেষ করে মূল্যবোধের ক্ষেত্রে?

কাইয়ুম চৌধুরী: মানুষের সৌজন্যবোধ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটা খুব পীড়াদায়ক। আমরা আমাদের সিনিয়রদের যেভাবে দেখতাম, এখনকার তরুণেরা সেভাবে দেখে না। প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতাও এর পেছনের অন্যতম কারণ হতে পারে। এখনকার তরুণেরা অনেক স্মার্ট, কিন্তু বিনয় একটু কম। মূল্যবোধ শিক্ষার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে।

প্রশ্ন:

শিল্পসাধনায় একটি দীর্ঘ জীবন কাটালেন। কোনো অতৃপ্তি কি আছে?

কাইয়ুম চৌধুরী: বলতে পারো সেটা। অনেক দিন তো কেটে গেল! অতৃপ্তি একটু আছে। স্মৃতিকথা লিখতে পারিনি। এটা লেখার খুব ইচ্ছে। কবিতার বইও প্রকাশ করব ভাবছি।