দৃষ্টিনন্দন চিত্রপট

শিল্পী: ফরিদা জামান
শিল্পী: ফরিদা জামান

সমকালীন শিল্পচর্চায় দর্শকের কাছে কৈফিয়তের মনোবৃত্তিতে শিল্পী কী আঁকছেন, কেন আঁকছেন—এই ব্যাখ্যা নির্ধারণ অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরিদা জামান সে রকম বুদ্ধি ও যুক্তিপ্রধান কাজ করেন না। রসবোধ তাঁর ছবির প্রাণ। বাল্যকালে গ্রামজীবনে দেখে আসা রূপময় বাংলার নস্টালজিক আনন্দের স্মৃতি রোমন্থন করে তা রং, রেখা, ফর্ম এবং কম্পোজিশনে ব্যক্ত করেন তিনি। তাই তাঁর চিত্রভাষায় পাওয়া যায় শিল্পীর নিজস্ব নির্মল আনন্দ, যা দৃষ্টিনন্দনও বটে। সম্প্রতি জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ‘ফর দ্য লাভ অব কান্ট্রি’ নামে হয়ে গেল এ শিল্পীর একটি চিত্র প্রদর্শনী। এ লেখায় কিছু বলার পাঁয়তারা করছি সেই সূত্রেই।

 ‘বিড়াল’ ফরিদা জামানের কাজের অতিপরিচিত মুখ। বিড়ালের অভিব্যক্তি, অতিলম্বিত গলা, শারীরিক ছন্দময় ভঙ্গি ও আলোছায়ার ধাঁধা উঁকি দেয় তাঁর ছবিতে। একইভাবে বাংলার গ্রাম ও নগরের পথশিশুদের প্রতিনিধিত্ব করে অতিদরিদ্র পুষ্টিহীনতায় ভোগা কিশোরী সুফিয়ার দেহাবয়ব। তাদের জীবনের হাসি, উচ্ছলতা ও আনন্দ উপভোগের খণ্ডচিত্রের মধ্য দিয়ে শিল্পী বাংলাদেশের সমাজচিত্রকেও তো আঁকেন। আবার হরেক রকমের পশুপাখি হাজির হয় তাঁর চিত্রপটে; সেসব পশুপাখির দেহভঙ্গিমায় রয়েছে লোকজ ফর্মের আদল।

শিল্পীর সঙ্গে আলাপসূত্রে জানা গেল, অস্ট্রেলিয়ান ‘অ্যাবরজিনাল আর্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চিত্রজমিনে বিন্দু দিয়ে আলোছায়া ও পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি। চিত্রজমিনে শূন্যস্থান রাখা এবং জলরঙের ওয়াশের খেলা তাঁর ছবির আরেক বৈশিষ্ট্য। ফরিদা জামানের অধিকাংশ কাজে জলাশয়, মাছ ধরার জাল, পলো, মাছ ও ঘাসে ভরা মাঠ ও দিগন্ত লক্ষণীয়। তাত্ত্বিকভাবে এসব চিত্রকলার যে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, মূলত তা আসে শিল্পী সৃষ্টি আত্মতৃপ্তি থেকে।

শিল্পীজীবনের প্রথম সোপানে যাঁরা বিষয়ভাবনা, প্রতীক, রং ও ফর্মে নিজস্ব শৈলী তৈরি করেছেন, ফরিদা জামান তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিষয়ভাবনা ও অঙ্কনশৈলীতে এ শিল্পীর পরিবর্তন খুবই ধীরগতির—এটা তাঁর প্রদর্শনী দেখেও বোঝা গেল। ৬ ডিসেম্বর শুরু হয়ে প্রদর্শনীটি শেষ হয়েছে ১১ ডিসেম্বর।