ভিন্ন স্বাদের প্রদর্শনী

‘ফাঁকা চেয়ার’, শিল্পী: আজিজি ফাওমি খান
‘ফাঁকা চেয়ার’, শিল্পী: আজিজি ফাওমি খান

মাথার ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে আলো ছড়াচ্ছে চাঁদ। ছাদের বাউন্ডারি দেয়ালে ঝুলছে পেইন্টিং। মেঝেতে তরুণ প্রজন্মের শিল্পী, শিল্পরসিক ও দর্শক নানা রকম আড্ডায় মত্ত। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই কানে ভেসে এল ঢাকার শিল্পীদের কণ্ঠে গানের সুর। বলছি ‘প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত এ সময়ের ঢাকা ও ঢাকার শিল্পীদের চিত্রকলা, ভাস্কর্য, সংগীত ও শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথন–সম্বলিত সম্মিলিত আর্ট শো ‘এক কদম’ প্রসঙ্গে। প্রথাগত আর্ট গ্যালারির বাইরে বাণিজ্যিক ভবনের উন্মুক্ত ছাদের ওপর প্রতিবছর এ রকম একটি করে আর্ট শো আয়োজন করে দশ কদম পূর্ণ করার প্রত্যয় তাদের। এই শিল্প-উদ্যোগের বিষয়বস্তু যে ঢাকাকেন্দ্রিক, তা রাকিব আনোয়ারের ‘রহস্য নগরীর চাবি’ শিরোনামের ছবির দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম। বর্ণনাধর্মী অংকন, অর্থপূর্ণ শিল্প-উপকরণের ব্যবহার, বহুকৌণিক পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনা ও সংস্কৃতির দৃশ্য একই ক্যানভাসে হাজির করে তিনি যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, সেটি মূলত স্বাপ্নিক আবেশে ঢাকার চালচিত্র দর্শন।

আজিজি ফাওমি খান তাঁর ‘প্রতীতি’ সিরিজ চিত্রে ইশপের গল্পের রূপায়ণে দেখিয়েছেন ঢাকার সংস্কৃতিতে বহুরূপী মানুষের মুখ, মুখোশ ও রূপ বদল। এতে ব্যবহৃত হয়েছে রিকশাচিত্রের মোটিভ। তিনি ‘ফাঁকা চেয়ার’ সিরিজ চিত্রে মফস্বল থেকে ঢাকায় আগন্তুক মানুষের বিষণ্নতা বুঝিয়েছেন প্রতীকী ইঙ্গিতে।

শহরমুখী মানুষকে স্বপ্নও দেখায় ঢাকা। আনিসুজ্জামান ফারুকীর ‘মহারাজার চেয়ার’ শীর্ষক ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য দর্শককে তেমনই একধরনের স্বপ্নে আন্দোলিত করেছে। এই ভাস্কর্যে আছে উদ্ভিদের লতানো ডগার মতো দোলায়িত রৈখিক চলন। চেয়ারের আদলে ভাস্কর এখানে যুক্ত করেছেন পাতার ফর্ম। আলাদা কয়েকটি ভাস্কর্যের পাতার ফর্মে পাওয়া যায় মানুষের রূপ। ধাতুর কাঠিন্য দিয়ে উদ্ভিদ-অঙ্গের কোমলতার ইল্যুশন তৈরি করে পরাবাস্তব নাটকীয় অনুভূতি দিয়েছেন তিনি।

রাকিব আনোয়ার তাঁর ‘কম্পোজিশন’ সিরিজ চিত্রে কিছুটা জ্যামিতিক ফর্মে মানুষ ও মানুষের হালফ্যাশন এঁকে ঢাকার মানুষ ও মানুষের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা সবাই নতুন। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে মৌলিকত্বের ছাপ পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীর কিউরেটর হাসিব জুবেরী ঢাকা শহরের বাড়ির ছাদে ৩০ হাজার হেক্টর জমির সমপরিমাণ স্পেস ব্যবহারের যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা হয়তো আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ঢাকা তৈরির ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার ধারা বিকাশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এতে করে বিভিন্ন পাড়া ও বাণিজ্যিক এলাকায় অব্যবহৃত স্পেস নান্দনিকও হয়ে উঠবে। ‘এক কদম’ মূলত সেই স্বপ্নের ইতিহাস রচনা করল।

কারওয়ান বাজারের এ জে টাওয়ারের ছাদে ৬ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল প্রদর্শনীটি।