সৈয়দ গোলাম দস্তগীরের চিত্রকলার রং–রূপ

চিত্রশালা শিল্পাঙ্গনে চলছে শিল্পী সৈয়দ গোলাম দস্তগীরের চিত্রকলার প্রদর্শনী।

চিত্রচর্চায় আধুনিক বোধন সৈয়দ গোলাম দস্তগীরের ছবি অবলম্বনে।

সময়ের শিয়রে কত যে ঘটনার ঘোর! সেসবের কতকে আচ্ছন্ন হয় আমাদের হৃদয়-মন আর আমরা চালিত হই নানাবিধ ভাবনার পরিধিতে। মানুষের জীবনযাপনের নানা অনুষঙ্গ, এসবের যোগ-বিয়োগ সময়ের সচলতার সঙ্গী। চারপাশের নানা ঘটনার এমন সব জের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকাশের আর্তিতে শিল্পের বিষয় হয়ে উঠে এসেছে শিল্পী সৈয়দ গোলাম দস্তগীরের চিত্রকর্মে।

তিনি ছবি আঁকেন, বিজ্ঞাপনের নকশা করেন, বিজ্ঞাপনের কথা লেখেন আর লেখেন চিত্রকলা নিয়ে।

সময়ের কামড়ে আবহাওয়ার যে পরিবর্তন, তাতে বেঁচে থাকার তাগিদে পরিযায়ী পাখিরা হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের খোঁজে শীতকালে চলে আসে আমাদের হাওরে ও ঝিলে। পাখির সেই মহাকাব্যিক ভ্রমণ ওদের চোখ দিয়ে দেখার দৃশ্যকল্প তৈরি করে তিনি ছবি আঁকছেন।

নিজের চিত্রকর্মকে তিনি আট ভাগে ভাগ করেছেন। তবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করেছেন সাতটি ভাগ। মানুষের অবয়ব, তার শরীরী ভাষা–অভিব্যক্তি, সমাজের নানান অসঙ্গতি—এসব তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অঙ্কনপ্রধান চিত্রকর্মে। ‘আধুনিকতা ও বাজার অর্থনীতির ভোগবাদী ক্রেতা-বিক্রেতার অসন্তুষ্ট অবয়ব’, ‘উপনিবেশ উত্তর জটিলতা’, ‘নারীর দৃশ্য-নৃতত্ত্ব’ ও ‘নিত্যকার অবয়ব’ শিরোনামে তাঁর কিছু চিত্রকর্ম কঠিন ও রূঢ় সময়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ঢাকার লালমাটিয়ায় সমকালীন চিত্রশালা শিল্পাঙ্গনে ২২ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনীতে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুই দশকে আঁকা শিল্পীর চিত্রকর্মের সমাহার দেখা যাচ্ছে।

গত শতকের নব্বই দশকে বেশ কতক ছবি এঁকে নবীন প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হিসেবে শিল্পমোদীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

নিজের চিত্রকর্মকে তিনি আট ভাগে ভাগ করেছেন। তবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করেছেন সাতটি ভাগ। মানুষের অবয়ব, তার শরীরী ভাষা-অভিব্যক্তি, সমাজের নানা অসঙ্গতি—এসব তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অঙ্কনপ্রধান চিত্রকর্মে। ‘আধুনিকতা ও বাজার অর্থনীতির ভোগবাদী ক্রেতা-বিক্রেতার অসন্তুষ্ট অবয়ব’, ‘উপনিবেশ উত্তর জটিলতা’, ‘নারীর দৃশ্য-নৃতত্ত্ব’ ও ‘নিত্যকার অবয়ব’ শিরোনামে তাঁর কিছু চিত্রকর্ম কঠিন ও রূঢ় সময়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শিল্পী: সৈয়দ গোলাম দস্তগীর

‘নারীর দৃশ্য-নৃতত্ত্ব’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোয় দস্তগীর নারীদেহের সৌন্দর্যের লালিত্যকে মূলত মুগ্ধ পুরুষের দৃষ্টিতে তুলে ধরেছেন। নারী কখনো কখনো নির্যাতিতার প্রতীকে ভূপাতিত অ্যাঞ্জেলরূপে এসেছে শিল্পীর চিত্রপটে। অবয়বের স্থানে পাখির চঞ্চু, পাখি আর ফড়িঙের ডানা, ঘোটকী ও শৃগালের মুখ—এসেছে এমন নানান কিছু!
আবার আমার মাটি, আমার আকাশে রং ও রেখার বদল নিয়ে তিনি তাঁর চিত্রপটে নানান নিরীক্ষায় একসময় অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। এমন কতগুলো কাজও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে—মাটিতে পোঁতা খুঁটি, কাঁটাতারের বেড়া, আকাশে তরমুজের মতো নানান বর্ণের একাধিক আধখানা চাঁদের আকৃতি। এই শিরোনামের একাধিক কাজে প্রাচীন মাতৃকামূর্তির অবয়ব ও তাকে ভেঙেচুরে অন্য রকম করে প্রকাশ করার প্রয়াস দেখা গেল।

শিল্পী: সৈয়দ গোলাম দস্তগীর

নিজের দুই দশকের চিত্রকর্ম উপস্থাপন করে সৈয়দ গোলাম দস্তগীর দর্শক ও বোদ্ধাদের কাছে এবার নিজের জাত চেনালেন। আমি বলব, বাংলাদেশের সমকালীন দৃশ্যশিল্পে উত্তর আধুনিকতার ক্ষীণকায় ধারার তিনি অন্যতম এক দৃশ্যশিল্পী।
প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ঢাকার লালমাটিয়ায় চিত্রশালা শিল্পাঙ্গনে। ২২ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ৪ নভেম্বর অবধি।