রানা! সাবধান!!

>

‘মাসুদ রানা’কে কেন্দ্র করে কাজী আনোয়ার হোসেন ও শেখ আবদুল হাকিম এখন মুখোমুখি। প্রবল জনপ্রিয় এই সিরিজের আদ্যোপান্ত এবং ‘রানা’ নিয়ে লড়াইয়ে সামনের দিনগুলোতে কোন পথে হাঁটবেন কাজী আনোয়ার হোসেন ও শেখ আবদুল হাকিম, তা-ই থাকছে এবারের প্রচ্ছদে

বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্ধর্ষ গুপ্তচর মাসুদ রানা জীবনে অসংখ্যা বিপদের মধ্যে পড়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সব বিপদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। বহু সময় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। রহস্য-রোমাঞ্চ-অভিযান-কল্পকাহিনির জগতে এমনটিই হয়। তবে বাস্তব জগতে কয়েক বছর ধরে ‘মাসুদ রানা’ যে সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা বোধ হয় কেউই কল্পনা করেননি। সম্প্রতি কপিরাইট অফিসের এক রায়ে মাসুদ রানার স্রষ্টা হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেনকে উল্লেখ করা হলেও বলা হয়েছে যে ‘রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের মূল লেখক শেখ আবদুল হাকিম। সুতরাং এসব বইয়ের স্বত্বাধিকার বা কপিরাইট তাঁর, যদিও সবগুলো বই কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে প্রকাশিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে ১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস-পাহাড়’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে লেখক-প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিক গুপ্তচর চরিত্রকে বাঙালি পাঠকের সামনে নিয়ে আসেন। সেটা ছিল রীতিমতো এক বৈপ্লবিক ঘটনা। সেসময় দৈনিক ‘সংবাদ’ লিখেছিল: ‘উপন্যাসটির গতি আছে-ঘাত-প্রতিঘাত আছে। ভাষা সরল। সকলের পক্ষে সুখপাঠ্য হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।...আমাদের সাহিত্যে রহস্যোপন্যাসের সংখ্যা কম। লেখকের উদ্যম প্রশংসনীয়।’ আর দৈনিক ‘পাকিস্তান’ লিখেছিল: ‘বিদ্যুৎ মিত্র হত্যাকাণ্ড ও অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে এই প্রথম একটি নতুন বিষয় যোগ করলেন-সেক্স।...মাসুদ রানা নিঃসন্দেহে একটি বলিষ্ঠ চরিত্র।...বইটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করবে।’

নিন্দা-প্রশংসার যুগপৎ স্রোতে ভেসে সেই যে ‘মাসুদ রানা’র যাত্রা শুরু, তা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে অব্যাহত আছে। সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘ভারতনাট্যম’ (ভরতনাট্যম নয়) প্রকাশিত হলে বোঝা গেল, এক কিংবদন্তি তৈরি হতে যাচ্ছে। ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা ও রচয়িতা কাজী আনোয়ার হোসেন বা পাঠকের ‘কাজীদা’ অবশ্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই এই সিরিজ রচনা ও প্রকাশের পরিকল্পনা করেন, বিশেষত পাঠকের কাছ থেকে বাজারে যখন চাহিদা তৈরি হলো। ফলে প্রথম দুটি ‘রানা’ পুরোপুরি মৌলিক রচনা হলেও এরপর থেকে বিদেশি কাহিনি বা ছায়া অবলম্বনে লেখা শুরু হলো। যেহেতু পশ্চিমা ধাঁচের আধুনিক গুপ্তচরবৃত্তির কোনো অভিজ্ঞতাই তখন বাংলাদেশে ছিল না, সেহেতু বিদেশি কাহিনির দ্বারস্থ হওয়ারও কোনো বিকল্প ছিল না কাজীদার কাছে। ‘পাঠক বই চাইছে, আমারও ব্যবসা করতে হবে। সুতরাং অ্যাডাপটেশনের পথ বেছে নিলাম আমি।’

কাজী আনোয়ার হোসেন আইনি লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত যাবেন
কাজী আনোয়ার হোসেন আইনি লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত যাবেন

বিষয়টি কম নিন্দাবাদের মুখে পড়েনি। অনেকে এ জন্য কাজীদাকে ‘নকলবাজ’ বলে থাকেন, এমনকি তাঁকে চৌর্যবৃত্তির দায়েও অভিযুক্ত করেন। তবে বিদেশি কাহিনি অবলম্বন করে তার পটভূমি, চরিত্র ও কিছু ঘটনা পাল্টে সর্বোপরি বাংলায় যে ভাষায় ‘রানা’ লেখা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় মৌলিক বা স্বতন্ত্র রচনার রূপ নিয়েছে। ‘শীতের চাবুক হাতে নিয়ে হু হু হাওয়া আসছে ধেয়ে নাঙ্গা পর্বত থেকে’-‘রানা’ সিরিজের পঞ্চম বই ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা’র প্রথম বাক্যটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মানসপটে যে ছবি ভেসে ওঠে, যে একটা শিহরণ তৈরি হয়, তা তো এই মৌলিক রচনাশৈলীর কারণেই, কাজীদার সহজ-পরিপাট্য অথচ স্থান-কাল-পাত্র অনুসারে ছবি আঁকার মতো ভাষার কারণে। মনে করা যাক ‘আই লাভ ইউ ম্যান’-এর সেই বাক্যগুলো: ‘ “মাসুদ”, আমার আরেক পাশের সিট থেকে বলল রডরিক। “বলব বলব করে যে কথাটা কক্ষনো কোনোদিন বলা হয়নি তোমাকে”, দুই ঢোক গ্লাসভর্তি হুইস্কি শেষ করল সে। “সেই কথাটা তোমাকে বলতে যাচ্ছি আমি”, চোখ বেয়ে পানি গড়াচ্ছে তার, ভাবাবেগে কাঁদছে ও। “ইউ আর অ্যা গুড বয়, মাসুদ। আই লাভ ইউ, ম্যান। আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসি আমি তোমাকে। ”’ এই বর্ণনায় পাঠকের চোখও যে অজান্তেই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে!

তবে একপর্যায়ে কাজীদা দেখলেন, তাঁর পক্ষে এককভাবে ‘রানা’ লিখে প্রকাশনার ব্যবসা চালানো খুব কঠিন। তত দিনে সেবা প্রকাশনীর ‘কুয়াশা’সহ একাধিক সিরিজ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আড়াল থেকে ‘রানা’ লেখানোর উদ্যোগ নেন তিনি। মানে ‘রানা’ সিরিজের বইগুলো এই চরিত্রের স্রষ্টা ও মূল লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের নামেই প্রকাশিত হবে। তবে নেপথ্য থেকে পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন বা লিখবেন দ্বিতীয় কেউ। সেবা প্রকাশনীর প্রথম উপন্যাস ‘অপরিণত পাপ’-এর (১৯৬৮) লেখক শেখ আবদুল হাকিম সম্মত হলেন এই কাজে। লেখালেখির কাজকে পেশা হিসেবে নিতে গিয়ে এটা করলেন তিনি। নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বছরের পর বছর হাকিম ‘মাসুদ রানা’র বইগুলো লিখেছেন। পরবর্তীকালে আরও কয়েকজন কয়েকটি ‘রানা’ লিখেছেন নেপথ্য থেকে। তবে হাকিমই ‘রানা’ সিরিজের প্রায় আড়াই শ বই লিখেছেন বা পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন।

সেবা প্রকাশনীতে আড়াল থেকে মাসুদ রানা লেখার পাশাপাশি শেখ হাকিম অনুবাদও করেছেন স্বনামে। কেন ফলেটের ‘আ ম্যান ফ্রম সেন্ট পিটার্সবার্গ’ বইটি অনুবাদ করেছিলেন ‘আততায়ী’ নামে, যা প্রথম ‘রহস্য পত্রিকা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে সাড়া ফেলেছিল। হাকিম সেবা-প্রজাপতির রোমান্টিক সিরিজের বইও লিখেছেন অনেকগুলো। পালন করেছেন ‘রহস্য পত্রিকা’র সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব।

’ ৮০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে জমজমাট একটা সময় গেছে ‘রহস্য পত্রিকা’র। সেগুনবাগিচায় সেবা প্রকাশনীর কার্যালয়ে সন্ধ্যাবেলা শেখ আবদুল হাকিমসহ আরও দুই সহকারী সম্পাদক রকিব হাসান ও নিয়াজ মোরশেদ বসতেন। এই নিবন্ধের লেখক তখন স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করেনি। ‘রহস্য পত্রিকা’ অফিসে গিয়ে হাজির হয়েছিল দুটো ওয়েস্টার্ন গল্প লিখে। গল্প ও উপন্যাস দেখতেন হাকিম। অত ব্যস্ততার মধ্যে তিনি ‘খুদে লেখককে’ খানিকটা সময় দিয়েছিলেন। তখনই বলেছিলেন, ‘তিনি “মাসুদ রানা” লেখেন। কথাটা ছিল এ রকম: “রানা”ই যদি না লিখি তো এত দিন সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে থেকে করলামটা কী!’

মানুষ তো এটা বিশ্বাস করবে না, এমন মন্তব্যে তাঁর জবাব ছিল, ‘বিশ্বাস না করলেই ভালো।’

হাকিমের স্বতন্ত্র লেখক সত্তা নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই, বরং সেবার একজন অত্যন্ত শক্তিমান লেখক হিসেবে অনেক আগেই খ্যাতি ও সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। খোদ কাজীদা তাঁর লেখনীর গুণমুগ্ধ। ‘অপরিণত পাপ’-এর শেষ প্রচ্ছদে তিনি লিখেছিলেন, ‘তরুণ সাহিত্যিক শেখ আবদুল হাকিমের প্রথম উপন্যাস “অপরিণত পাপ”।...পাণ্ডুলিপিটি পড়ে আমি এতই বিস্মিত, মুগ্ধ ও উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম যে সারাটা দুপুর আমাকে বারান্দাময় পায়চারি করে বেড়াতে হয়েছিল।’

তবে আড়াল থেকে লেখার এই বন্দোবস্ত কোনো অস্বাভাবিক ও বেআইনি বিষয় নয়। পশ্চিমা বিশ্বে বিশেষত রহস্য সাহিত্যে একে বলা হয় ‘গোস্টরাইটিং’ আর লেখকদের ‘গোস্টরাইটার্স’ বা ‘ভূতলেখক’।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কাহিনি ‘নিক কার্টার’ সিরিজ কিংবা কিশোর রহস্য সিরিজ ‘ন্যান্সি ড্রু’ ও ‘হার্ডি বয়েজ’-এর অনেক লেখকই গোস্টরাইটার্স। বাংলা সাহিত্যে এমন নিদর্শন খুব কম, তবে বিরল নয়। শশধর দত্তের ‘দস্যু মোহন’ সিরিজের দু-তিনটি বই অন্য কেউ লিখেছিলেন বলে গুজব আছে। আবার ইংরেজি ‘সেইন্ট’ অবলম্বনে ‘মোহন’ সিরিজের অনেকগুলো বই লেখা হওয়ায় সেবা প্রকাশনীর ‘কুয়াশা’ সিরিজ ‘মোহন’-এর নকল বলে গালমন্দ শুনতে হয়েছে। অথচ ‘কুয়াশা’র অনেক বই ‘সেইন্ট’-এর ছায়া নিয়ে লেখা।

এদিকে এ রকম জনশ্রুতিও আছে, বাংলাদেশের তিন-চারজন লেখকের কোনো কোনো বই আড়াল থেকে অন্য কেউ লিখে দিয়েছেন যথাযথ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। বাংলাবাজারভিত্তিক একাধিক প্রকাশক সূত্রেও জানা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে আড়াল থেকে লেখা বা লেখানোর কাজ ঘটে বটে। আর যাঁরা আড়াল থেকে লেখেন, তাঁরা কোনো কপিরাইট পান না, শুধু পারিশ্রামিক পান।

কিন্তু ‘মাসুদ রানা’র কপিরাইট নিয়ে শেখ আবদুল হাকিম কেন সেই’ ৮০-র দশকেই আইনি দাবি তোলেননি?

শেখ আবদুল হাকিমও এর শেষ দেখে ছাড়তে চান
শেখ আবদুল হাকিমও এর শেষ দেখে ছাড়তে চান

জবাবে হাকিম বলেন, ‘কপিরাইট আইন সম্পর্কে তখন আমার কোনো ধারণা ছিল না। কাজী সাহেবের নিজের বানানো কপিরাইট আইনকেই সরকারি আইন বলে ভাবতাম। কাজী সাহেব বলতেন, আমার লেখা পাণ্ডুলিপি তিনি কিনে নিচ্ছেন, আবার আন্তর্জাতিক কপিরাইট মেনে প্রতি তিন মাস অন্তর রয়্যালিটিও দিচ্ছেন। কাজেই আমাদের কোনোভাবে ঠকানো হচ্ছে না।’

এ ক্ষেত্রে কাজী আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য হলো, ‘হাকিম “রানা” লিখে পারিশ্রমিক নেবেন, এমনটাই কথা ছিল। সে অনুসারে তিনি লিখেছেন, আমি টাকা দিয়েছি। প্রতিটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করার বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছেন। এখানে কপিরাইটের কোনো বিষয় ছিল না। ওঁর নামে লিখলে তো আর “রানা” সিরিজের বই চলত না! হাকিমও তা জানতেন। আর তিনি তো টাকার জন্যই এভাবে লিখতে রাজি হয়েছেন। তাঁকে দিয়ে জোর করে কিছু লেখানো হয়নি।’

হাকিমও স্বীকার করছেন, তিনি পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন, কাজীদা তা সম্পাদনা করতেন, তারপরই ‘রানা’র একটা বই প্রকাশ করা হতো। এমন বন্দোবস্তের মাধ্যমে ‘রানা’ সিরিজের বই লিখে তিনি পারিশ্রমিক নিতেন। তাঁর ভাষায়, ‘হ্যাঁ, সেভাবেই আমি “রানা” লিখতাম, কাজী সাহেব প্রয়োজন হলে কখনো সম্পাদনা করতেন, কখনো শুধু প্রুফ দেখে ছেড়ে দিতেন। এককালীন পারিশ্রমিক বলতে যদি বোঝায় যে একবার থোক টাকা নিয়ে লেখা বিক্রি করতাম, তাহলে ব্যাপারটা সে রকম ছিল না; পাণ্ডুলিপি দিয়েই কিছু টাকা নিতাম, কিন্তু আরও অনেক টাকা পাওনা থাকত, সেসব ত্রৈমাসিক রয়্যালিটি হিসেবে আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি বই আট-দশবার করে রিপ্রিন্ট করা হলেও সেই বাবদে আমার প্রাপ্য টাকা আমাকে দেওয়া হয়নি। এটা নিয়েই বিরোধ বাধে।’

সেবা প্রকাশনীর লেখক সম্মানীর নিয়মটা হলো, বই প্রকাশের এক মাস পর যা বিক্রি হবে, তা থেকে নির্ধারিত হারে লেখক তাঁর প্রথম বা মূল রয়্যালিটি পাবেন। এরপর প্রতি তিন মাস অন্তর বিক্রির ভিত্তিতে লেখকের যা প্রাপ্য তা তিনি পান। এভাবে প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় বা পরবর্তী পুনর্মুদ্রণেও নির্ধারিত হারে ত্রৈমাসিক কিস্তি লেখকের হিসাবে যোগ হয়। অধুনালুপ্ত ‘বিচিত্রা’ ও সাপ্তাহিক ‘২০০০ ’-এর সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী মৃত্যুর কিছুদিন আগে কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকালে তাঁর লেখা মাসুদ রানার যে ত্রৈমাসিক কিস্তি জমা ছিল, তা যখন তাঁকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি যারপরনাই বিস্মিত হয়েছিলেন। ঘটনাটি তিনি তাঁর সহকর্মী-বন্ধুজনসহ অনেককেই খুব আনন্দের সঙ্গে বলেছিলেন।

শাহাদত চৌধুরী আড়াল থেকে লিখেছিলেন ‘মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র’, ‘হ্যালো, সোহানা’সহ ‘রানা’ সিরিজের আরও কয়েকটি বই।’ ৭০ ও’ ৮০-র দশকে ‘মাসুদ রানা’র অনেক বইয়ের প্রচ্ছদও করেছিলেন।

আড়াল থেকে মাসুদ রানা লেখার বিষয়টি’ ৯০-এর দশকে ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে যায়। এই নিবন্ধকার কাজীদার একাধিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ‘প্রথম আলো’ ও সাপ্তাহিক ‘২০০০ ’-এ প্রকাশিত সেগুলোর একটিতে তিনি যাঁরা আড়াল থেকে ‘রানা’ লেখেন, তাঁদের নাম উল্লেখ করেছিলেন। কাজীদার বিশ্বাস ছিল, এই ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়টির না হয় একটু খোলাসা হয়ে যাক। কিন্তু সেটা যে এক বিরাট বিরোধ ও আইনি লড়াইয়ে তাঁর বিপক্ষে হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। ফলে শেখ আবদুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের কপিরাইট দাবি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়ে প্রাথমিকভাবে তাঁর পক্ষে রায় পেয়েছেন।

তবে কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যও আইনের পথ খোলা আছে। তিনি প্রথমে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। আপিলের রায় তাঁর পক্ষে না এলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্নও হতে পারবেন। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও স্পষ্ট, ‘আমরা আইনি লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত যাব।’

আবার শেখ আবদুল হাকিমও এর শেষ দেখে ছাড়তে চান বলে জানিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত কী হবে, আমরা জানি না। তবে সেবার পাঠককুল ও রানাভক্তরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। মনে মনে বারবার তাঁরা বলছেন, ‘রানা! সাবধান!!’