বইয়ের প্রথমাংশজুড়ে রয়েছে তাঁর পরদাদা, দাদা ও বাবার কথা। তখনকার পরিস্থিতিতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন নিজের পরিবারকে উদাহরণ হিসেবে রেখে। ‘উইনিং অ্যান্ড লুজিং ফ্রেন্ড’ অধ্যায়ে নিজের বন্ধুদের হারিয়ে যাওয়ার আক্ষেপ খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখক–বন্ধুদের হারিয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কীভাবে বন্ধু হলাম এবং কেনই–বা তাদের হারালাম?’ বন্ধু হারানোর ব্যথা তিনি এখনো ভুলতে পারেননি।
‘পলিটিকস কিপ নকিং’ অধ্যায়ে তৎকালীন সরকার কোন খবর চাপা দিয়ে রাখত এবং পত্রিকাগুলোকে করে রাখত খোঁড়া, তারই বর্ণনা আছে। সঙ্গে আছে তাঁর স্কুলজীবনের কিছু স্মৃতি। মূলত এই অধ্যায়ে ষাটের দশককে গুরুত্বসহকারে আমাদের সামনে তুলে এনেছেন লেখক। প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ষাটের দশক নিয়ে বলেছেন, ‘ষাটের দশক আমাদের দেশের সোনালি দশক। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এটা ছিল বিদ্যাচর্চার দশক। এই দশক আমাদের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তখন যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তারই প্রতিফলন মুক্তিযুদ্ধ।’
ওই টালমাটাল সময়ে লেখক দেখলেন, তাঁর কিছু বন্ধু মিলে ‘সরকারবিরোধী’ কাজে যোগ দিচ্ছেন। বাংলাকে মুক্ত করাই যাঁদের মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য সভাও হচ্ছে, হচ্ছে পাঠচক্র। লেখক নিজেও তেমনই এক পাঠকচক্রে যোগ দিয়েছিলেন। সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বোদ্ধারা বিভিন্নভাবে স্বাধীনতার কথা বলে যাচ্ছেন। তাঁদের লেখক মনজুরুল হকও খুব আপন ভাবতে শুরু করলেন। তাঁর নিজের লেখা একটি কবিতাও প্রকাশ পেল চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনে। বইটিতে স্মৃতির খেয়ায় চেপে এমন ছোটখাটো ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক।
তখনকার সবকিছুই যেন ধাবিত হচ্ছিল মুক্তিসংগ্রামের পথে। লেখকের পথও তখন সংগ্রামের। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর সব রাজনৈতিক দল যেন আরও তৎপর হলো। এরপর তো শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। লেখক নিজেও সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এভাবেই শেষ হয়েছে বইটি।
যদি প্রশ্ন আসে, আ স্টোরি অব মাই টাইম বইয়ের মূল চরিত্র কে?
উত্তরে বলা যেতে পারে, এটি মনজুরুল হকের আত্মকথা হলেও এই বইয়ের মূল চরিত্র আসলে মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ ধরে ধরে বইটি এগিয়ে গেছে। লেখক শুরু করেছিলেন বিশ শতকের গোড়া থেকে। শেষ করেছেন ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চে। বইটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, লেখক যেন উপন্যাস লিখছেন। অত্যন্ত কাব্যিক ভাষায় এগিয়েছে বইটি। সেই উত্তাল সময় পুরো দেশবাসীর মধ্যে যে প্রভাব রেখেছিল, নিজের স্মৃতিচারণা করতে করতে লেখক বলেছেন সেসব কথাও। এই বইয়ের পাতায় পাতায় রয়েছে যুদ্ধ যুদ্ধ একটা ঘ্রাণ। মুক্তিযুদ্ধের আগমুহূর্তে, আগের সময়গুলোতে এক অজানা উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ কীভাবে দিন যাপন করেছিলেন, এ বইয়ের পাঠক তা ভালো করেই বুঝতে পারবেন। শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামীর অলংকরণে বইটি নান্দনিক হয়ে উঠেছে।
আ স্টোরি অব মাই টাইম
মনজুরুল হক
প্রকাশক: কসমস বুকস ঢাকা, প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০২২, প্রচ্ছদ: বিশ্বজিৎ গোস্বামী, ১৩২ পৃষ্ঠা, দাম: ১২০০ টাকা
বইটি পাওয়া যাচ্ছে
prothoma.com এবং মানসম্মত
বইয়ের দোকানে।