বেদনার পানে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা

খুক খুক করে দুবার কেশে নিলেন সুপ্রীতিদি। ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘কোনো শব্দ কোরো না, প্লিজ! চুপচাপ বসে থাকো তোমরা কিছুক্ষণ।’ ঘরের এদিক-ওদিক তাকালেন তিনি। সতর্ক ও গোপন কথার মতো ফিসফিস করে বললেন, ‘রূপংকরের লাশটা উঠে বসবে একটু পর।’

এভাবে শুরু হয় সুমন্ত আসলামের কিশোর থ্রিলার রূপংকর ভয়ংকর

লাশ উঠে বসার খবর পেয়ে কৌতূহলী পাঠক আটকে যায় প্রথম পাতাতেই।

রূপংকর ভয়ংকর

সুমন্ত আসলাম

প্রকাশক: প্র প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৩, প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, ১১০ পৃষ্ঠা, 

দাম: ২৮০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে

prothoma.com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে।

থ্রিলার পাঠকেরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই পড়তে বসবেন—ভয়, উত্তেজনা, বিভ্রম, রহস্য সামলানোর প্রস্তুতি নিন। তবু আপনাদের বুক দ্রিম দ্রিম করে উঠবে, যখন সুপ্রীতিদি আবার বলে ওঠেন, ‘আমিও বিশ্বাস করিনি।  ...ওই যে ঘরের কোনায়, মেঝেতে, অন্ধকারে, মা আর বাবা বসে আছেন—তাঁরা দুজনেই দেখেছেন ব্যাপারটা।’

লাশ কেন উঠে বসবে! এর জবাব হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকবেন রহস্যমগ্ন পাঠক। অবশেষে কিছুটা আঁচ করা হয়তোবা সম্ভব হয় উপন্যাসের শেষের দিকে, যেখানে লেখক তৈরি করেছেন এক জাদুবাস্তবতার ধূম্রজাল।

এ কী, চিতার আগুন ঠেলে উঠে বসে রূপংকর! এসে দাঁড়ায় ফাহিমের পাশে। বলে, ‘কেন মারা গিয়েছি, এটা তো তুই জানিস, ফাহিম...’ ‘হ্যাঁ, দুঃখে আর লজ্জায়।’ রূপংকর কেমন উদাস চোখে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকায়।

কিসের দুঃখ আর লজ্জা কিশোর রূপংকরের? এখানে এসে ভিন্ন রকমভাবে চমকে যাবেন পাঠক। রোমাঞ্চকর গল্প বলতে বলতে সুমন্ত আসলাম এমন এক মানবিক গল্প তুলে এনেছেন, এতক্ষণের বুকের কম্পন থেমে গিয়ে জেগে উঠবে হাহাকার—এ রকম হতে পারে একটা কিশোর উপন্যাস, এমন টান টান, এমন শ্বাসরুদ্ধকর-আবেগজাগানিয়া!

পড়া শেষে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে পাঠককে—চুপচাপ, গল্পটা মাথা থেকে তাড়ানো যাবে না কিছুতেই।

পড়াটা হচ্ছে ভ্রমণের মতো। বাঁকে বাঁকে নতুন দৃশ্য—বর্ণিল। সুমন্ত আসলামের রূপংকর ভয়ংকর পাঠ যেন আক্ষরিক অর্থেই ভ্রমণ। গভীর রাতে রূপংকরের লাশ দাহ করার জন্য রওনা হয় সাদ, রাহিদ, নাবিল আর ফাহিমরা। গা-ছমছমে, ঘটনাবহুল এ যাত্রায় থাকেন আরও একজন—মোসতাকিম ভাই। তিনিই যেন ‘একবার নক্ষত্রের পানে, একবার বেদনার পানে’ নিয়ে যান পাঠককে সুমন্ত আসলামের হয়ে।