একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের বই

দুর্যোগ কি নিয়তি–নির্ধারিত প্রতিবন্ধকতা? উত্তর খোঁজে উত্তরণ। দুর্যোগ ছিল, আছে এবং থাকবে। তার থেকে সহনযোগ্য মুক্তি পেতে করণীয়গুলো নির্ভর করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর।

লক্ষ করা গেছে, দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ‘আপাতত’র সমাধানের মধ্যে বেঁচে থাকার প্রবণতা আমাদের সুখী করে! কিন্তু কোনো কোনো কাজ—বিশেষত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার—উপযুক্ত জ্যামিতিক হিসাবে করলে তার থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব।

প্রকৃতিকে, প্রকৃতির জীবনচর্যা না বুঝে শাসন করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। আর বিশেষ বিশেষ সুবিধার অবস্থানে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ ‘ফাজিল চালাকি’ দিয়ে যেসব দুর্যোগ সৃষ্টি করে, তার প্রতিকার করার জন্য যেসব আইন-কানুন আছে, তার যথাব্যবহার (ওই মানুষদের জন্য) অন্তত আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই হতাশাজনক।  

স্বাধীনতার ৫০ বছর: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অর্জন শিরোনামের বইটির প্রথম ব্লার্বে লিখিত চুম্বক কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোথায় ছিল, এখন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, আর কোন কাজগুলো এখনো বাকি, তার হালনাগাদ বিশ্লেষণ আছে এই বইয়ে।

সাধারণ বিবেচনায় আমরা কমবেশি জানি, ‘প্রাকৃতিক’ ও ‘মানবসৃষ্ট’ দুর্যোগের স্বরূপ কী। আলোচ্য বইটি কর্মনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করলে (আশা করি, দুর্যোগের চারিত্র্য ও ব্যবস্থপনা নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা পড়বেন) দুর্যোগকে বিশেষ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কতটুকু অর্জন হয়েছে ও হয়নি এবং কী কী করলে এই দেশের প্রকৃতি (নদী, খালবিল, বনভূমি), মানুষের জীবনযাপন ও পশুপাখিকে দুর্যোগসৃষ্ট ক্ষত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে, সেসব প্রশ্নের জবাব
পাওয়া যাবে।

বইয়ের ভূমিকার শিরোনাম: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পঞ্চাশ বছর। সূচিপত্রে আছে ২৩টি বিষয়—দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ঘূর্ণিঝড়-সহনীয় বসতি দিতে পারে সঠিক সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, নগরদুর্যোগ, নগরদুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুধু কাগজে-কলেমেই, ভূমিকম্পের আশঙ্কা, অগ্নিদুর্ঘটনা, শিল্পদুর্ঘটনা: স্পেকট্রাম থেকে টাম্পাকো, বায়ুদূষণ, গতি আসছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়, আমাদের সুন্দরবন, হারিয়ে যাচ্ছে নদী, সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দুর্ঘটনা, রেল দুর্ঘটনা, নতুন দুর্যোগ—‘বজ্রপাত’, হুমকির মুখে জনগণের স্বাস্থ্য, বন্যা পরিস্থিতি, পানিতে ডুবে মৃত্যু, নগরজীবনে খাদ্যে ভেজাল ও জাঙ্ক ফুড, শৈত্যপ্রবাহ, মঙ্গা: পরিবর্তিত দৃশ্যপট, বীজ সংরক্ষণ, নতুন প্রযুক্তি ও কীটনাশকবিহীন খাদ্য। আর পরিশিষ্টে রাখা হয়েছে, ‘দুই দশকে প্রণীত আইন ও নীতি’।

মূল শিরোনামের অধীনে আছে একাধিক উপশিরোনাম, যা শিরোনামের বিষয়কে প্রয়োজনীয় কাঠামোর ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত এবং করণীয় প্রস্তাবসহ সহায়তা করেছে। অর্থাৎ একটা নির্দেশনামূলক, ব্যাখ্যাজাত, কর্তব্যনিষ্ঠ, বাস্তবমুখী ভিত্তি কেমন হওয়া উচিত, তার রূপকল্প এই বই।

এই বইয়ে কিছু শব্দ আছে। যেমন: ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, বিপদাপন্নতা, উদাসীনতা, দীর্ঘসূত্রতা, অবহেলা (দ্র. নৌ দুর্ঘটনা ও মামলার হিসাব), অকার্যকারিতা, সমন্বয়হীনতা (দ্র. খাদ্যনিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তাদের সমন্বয়হীনতা), অপরিকল্পিত (দ্র. জলাবদ্ধতা), বাস্তবায়ন, অপহরণ (দ্র. হারিয়ে যাচ্ছে নদী), অসর্তকতা, অর্জন, অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক (দ্র. রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য হুমকি), দখলবাজ আর দূষণকারী (দ্র. দখলে-দূষণে বিপন্ন বাংলাদেশের নদ-নদী), হুমকি (দ্র. হুমকির মুখে জনগণের স্বাস্থ্য)—এসব শব্দ পড়ামাত্রই পাঠক বুঝে যাবেন অর্জন ও বিয়োজনের পলিস্তর কোথায়।

গ্রন্থভুক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতগুলো সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ—যারা দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে—গ্রাহ্যে নিলে অর্জনের মাত্রা বাড়বে।

বইটির সংকলক ও সম্পাদক গওহার নঈম ওয়ারা। আর তাঁকে সহযোগিতা করেছেন ড. রেজা মাহমুদ আল হুদা, উদিসা ইসলাম, মেহেরুন নেসা, আফরিন জাহান নওশীন ও রাফায়াত ইসলাম সায়েম। তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

স্বাধীনতার ৫০ বছর: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অর্জন

সংকলন ও সম্পাদক: গওহার নঈম ওয়ারা

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা,
প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০২৩, 

প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, ৩৬০ পৃষ্ঠা, 

দাম:  দাম: ৮০০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে

prothoma.com এবং মানসম্মত 

বইয়ের দোকানে।