ছড়া-তালুকের তালুকদার

মাহাবুব তালুকদারের ছড়াসমগ্রর অনেকগুলো ছড়া উৎকর্ষের চূড়া ছুঁয়েছে। বাংলা ছড়ার ঐতিহ্য খুবই ঋদ্ধ; লোকছড়া থেকে আধুনিক ছড়া; রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, সুকুমার-সত্যজিৎ থেকে শুরু করে শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ—আমাদের কালে সুকুমার বড়ুয়া কিংবা লুৎফর রহমান রিটনের হাতে ছড়া অবিস্মরণীয়তার স্তরে পৌঁছে গেছে। সেখানে মাহবুব তালুকদার যখন লেখেন:

পায়ের ওপরে পড়েছিল আজ ইস্তিরি/ তাড়াতাড়ি ডেকে আনা হলো রাজমিস্তিরি/ বলল সে, ‘পায়ে সবগুলো হাড় ভাঙা/ কোথায় কীভাবে বাধালেন মারদাঙ্গা/ তাই তো পায়েতে করলাম এই প্লাস্টার/ এখন মারুন শত বোমা—সেই ক্লাস্টার/ কিছুই হবে না, দেব গ্যারান্টি তার যে/ বছরে দুবার মেরামত বিনা চার্জে!’ তখন তা পড়ে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না! লক্ষ করার মতো, রাজমিস্তিরির সঙ্গে মিল দিয়েছেন আজ ইস্তিরির। চার দফা মিল।

ছড়াসমগ্র

মাহবুব তালুকদার

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: মার্চ ২০২২, প্রচ্ছদ: রফিকুন নবী, ২৩২ পৃষ্ঠা, দাম: ৪২০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাবে

prothoma.com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে।

৯৪ পৃষ্ঠায় আছে ‘মজার কবিতা’ নামের একটা ছড়া। প্রখ্যাত ছড়াকার আমীরুল ইসলাম বইটির পরিচিতিতে লিখেছেন:

তাঁর লেখা একটা ছড়ার কথা খুব মনে পড়ে। ছড়াটা ওপর থেকে পড়লে একটা ভালো ছেলের গল্প, আর নিচের দিক থেকে পড়লে জানা যাবে একটা মন্দ ছেলের গল্প। খুবই অভিনব ছড়া।

এই ছড়াটা এখানে উদ্ধৃত করে দিতে পারি। বাবলু আর লাভলুর গল্প। কিন্তু তা দেব না। আপনারা প্রথমা প্রকাশিত মাহবুব তালুকদারের ছড়াসমগ্র সংগ্রহ করে নিয়ে এ ছড়াটা পড়ুন। দেখুন, একই ছড়া ওপর থেকে পড়লে এক রকম, নিচ থেকে পড়লে আরেক রকম। অন্তর মন্তর, সে এক সোনার ছেলে, ছড়া পড়া, ছড়ার তালুক, ছড়ানো ছড়া—এই পাঁচটি বই নিয়ে এই ছড়াসমগ্র। বইটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে শিল্পী রফিকুন নবী ও হাশেম খানের চমৎকার অলংকরণের কারণে।

আমীরুল ইসলামের সঙ্গে আমরা একমত যে মাহবুব তালুকদারের রাজনৈতিক ছড়াগুলোও দুর্দান্ত। ১৯৭১-এর সংগ্রামের সময় মাহবুব তালুকদার লিখেছেন:

পাকিস্তানের জিন্না

রাষ্ট্রভাষা বাংলাটারে

কইরাছিলেন ঘিন্না

তেনার পরে লাট-বেলাটে

দেশটা নিলেন কিন্যা।

পঁচিশ বছর পাকের প্যাকে

মানুষ গেছে চিন্যা,

অহন ঘুমের দিন না

স্বাধীনতার বাদ্য বাজাও

নাচো তা ধিন ধিন না।

মাহবুব তালুকদারের নামের দ্বিতীয় অংশ ব্যবহার করে তিনি একটা ছড়ার বইয়ের নাম রেখেছেন, ছড়ার তালুক। তা তিনি করতেই পারেন। ছড়ার তালুকে তিনিই তালুকদার। অভিনন্দন, এই তালুকদার সাহেবকে।